ASANSOL-BURNPUR

পশ্চিম বর্ধমানের আসানসোলে বন্ধ সফল করতে বামেদের বাইক মিছিল ও পদযাত্রা; বন্ধ ব্যর্থ করতে রাস্তায় মেয়র জিতেন্দ্র তেওয়ারি

আসানসোল, ৮ জানুয়ারি,২০২০,সৌরদীপ্ত সেনগুপ্ত :  , এন.আর.সি , সি.এ.এ, এন.পি.আর বিরোধিতা, মূল্যবৃদ্ধি, শ্রম ও পরিবহন আইন সংশোধনসহ একাধিক দাবিতে আজ বুধবার কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংগঠনগুলির ডাকা  সাধারণ ধর্মঘটের দিন সফল করা ও বিরোধীদের দ্বারা বন্ধ রাজনীতি ব্যর্থ করার প্রতিযোগিতায় সকাল থেকেই উত্তপ্ত ছিল পশ্চিম বর্ধমান জেলার সদর আসানসোল শহর। সকাল থেকে যদিও  শহরে ধর্মঘটকে ঘিরে বড় কোন অশান্তি বা গন্ডগোলের ঘটনা ঘটার খবর মেলেনি।  জনজীবন মোটের ওপর স্বাভাবিক ছিল। স্কুলগুলিতে পূর্বনির্ধারিত পরীক্ষার সূচি থাকায় কিছু স্কুলবাস চলাচল করতে দেখা যায়। তবে সেভাবে আসানসোলে বেসরকারি বাস ও মিনিবাস চলাচল করতে দেখা যায়নি। বেলার দিকে কিছু মিনিবাস চলতে দেখা যায়। সরকারি বাস চলেছে নিয়ম মাফিক ভাবেই। অটো এবং টোটো ছিল কাজে বেরিয়ে সাধারণ মানুষদের ভরসা। পাড়ার দোকানপাট খুললেও, জিটি রোড লাগোয়া বড় বাজারের বেশির ভাগ দোকান বন্ধ ছিল। 
পুলিশি নিরাপত্তা ছিল চোখে পড়ার মত। সকাল থেকেই মোড়ে মোড়ে পুলিশের   গাড়ি দেখতে পাওয়া যায়। 
    এদিন সকাল সাড়ে ছটার সময়ই আসানসোলের রাস্তায় নেমে পড়েন সিপিএমের কর্মী ও সমর্থকরা। তারা বিএনআর সহ বিভিন্ন জায়গায় মিছিল করেন। সকাল নটার পরে ধর্মঘট সমর্থনে সিপিএম তথা বাম কর্মী ও সমর্থকেরা মোটরবাইক নিয়ে আসানসোলের জিটি রোডের বাজার এলাকায় ঘুরে বেড়াতে শুরু করে। সঙ্গে চলে শ্লোগান। বিএনআর মোড় থেকে আসা  বাইক মিছিল হটন রোড ও জিটি রোডের সংযোগস্থলে এসে পৌঁছালে জনা কয়েক পুলিশ ব্যারিকেড করে আটকানোর চেষ্টা করেন।    কিন্তু সেই বাধা উপেক্ষা করে সেই মিছিল আসানসোল পুরনিগমের দিকে এগিয়ে যায়।  তারা পুলিশের সামনেই  জিটি রোড থেকে বাজারের  দোকানদারদের উদ্দেশ্য করে  দোকান বন্ধ করার জন্য হুমকি দেয়। এক ঘন্টারও বেশি সময় ধরে পুরনো রামকৃষ্ণ মিশন মোড় পর্যন্ত গোটা বাজার এলাকায় ঘোরার পরে, সেই বাইক বাহিনী স্টেশন রোড হয়ে ঘুরে চলে যায়। 

      তার ঠিক পরই সকাল সাড়ে দশটার সময় এর পাল্টা হিসাবে ধর্মঘটের মোকাবিলা ও ব্যর্থ করতে  দলের কর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে রাস্তায় নেমে  পড়েন আসানসোল পুরনিগমের মেয়র তথা পশ্চিম বর্ধমান জেলা তৃনমুল কংগ্রেসের সভাপতি জিতেন্দ্র তেওয়ারি। সঙ্গে ছিলেন তৃণমূল দলের নেতা এবং  পুরনিগমের প্রাক্তন মেয়র পারিষদ রবিউল ইসলাম। মেয়র পুরনিগমের সামনে থেকে মিছিল করে প্রথমে জিটি রোড দিয়ে ট্রাফিক কলোনি মোড় পর্যন্ত আসেন।  যেসব দোকান খোলার পরেও সিপিএমের হুমকিতে বন্ধ হয়ে গেছিলো,  সেগুলিকে আবার খোলার জন্য মালিকদের বোঝান এবং আশ্বাস দেন।

এরপর তিনি সেখান থেকে সোজা মিছিল করে হটন রোড মোড় পর্যন্ত আসেন। এরমাঝে  তিনি বাজারে ঢুকে দোকানদারদের দোকান খুলতে অনুরোধ করেন। অনেকেই তার এই আশ্বাসের পরে দোকানও খোলেন যদিও সাধারণ দিনের তুলনায় অনেক কম দোকান খোলা  ছিল। 

পরে মেয়র সাংবাদিকদের বলেন, “যে দাবিতে বা ইস্যুতে এই সাধারণ ধর্মঘট ডাকা হয়েছে, তা আমরাও তো সমর্থন করি। কিন্তু আমরা বাংলায় আর কর্মনাশা বনধ্ বা ধর্মঘট চাইনা। প্রতিটা ইস্যুতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃনমুল কংগ্রেসের নেত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় সরব হয়েছেন ও রাস্তায় আন্দোলন করতে নেমেছেন। তাহলে এই ধর্মঘটের কি মানে আছে? যারা এদিনের ধর্মঘট ডেকেছে , তাদের উচিত মমতা বন্দোপাধ্যায়ের পাশে দাঁড়িয়ে তার আন্দোলনকে সমর্থন করা। তা না করে, এরা ধর্মঘটের নামে সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করছে। মানুষকে হুমকি দিচ্ছে। আমরা এদিন প্রথম রাস্তায় কিন্তু নামিনি। যখন শুনলাম সিপিএমের বাইক বাহিনী এইসব করছে , তখন আমি রাস্তায় নামলাম। আমি দোকানদারদের বলেছি, দোকান খুলুন। আমরা আছি। পুলিশ প্রশাসন আছে। তিনি আরো বলেন আসানসোল ও দূর্গাপুরে তো বিজেপির সাংসদ রয়েছেন। তাহলে ঐ দলের কর্মী ও সমর্থকরা কোথায়? শুনলাম তো বিজেপি তো এই ধর্মঘটকে সফল করতে রাস্তায় নামেনি। মানুষ সব দেখছে ও এর জবাব দেবেন”।

     তবে শিল্পাঞ্চলের অন্য সব এলাকার বার্ণপুর, বারাবনি, কুলটি, বরাকর, রুপনারায়নপুর, চিত্তরঞ্জন, সালানপুর ও জামুড়িয়ায় এদিন তেমনভাবে সাধারণ ধর্মঘটের খুব একটা প্রভাব পড়েনি। এইসব এলাকায় জনজীবন ছিলো একবারেই ও মতো স্বাভাবিক। আসানসোল শহরের মতো এইসব এলাকায় মিনিবাস চলেনি। দোকান ও বাজার সবকিছুই ছিলো খোলা।

  বিভিন্ন কারখানা বন্ধ রাখলেও ইস্কো,রেল,চিত্তরঞ্জন লোকোমেটিভে উপস্থিতির হার ঠিক ছিল বলে জানা যায়। 
   বস্তুত উল্লেখযোগ্য তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী এবং তৃণমূল ছাত্রপরিষদের কর্মীরা  বস্তিন বাজার এলাকায় দোকান খোলার জন্য বলেন কিন্তু দোকানদাররা এনআরসি এবং সিএএ আইনের প্রতিবাদে বন্ধ সমর্থন করছে বলাতে তাদের সাথে বচসা লাগলে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

 বন্ধের সমর্থনে বাম সংঘটন রবিন্দ্র ভবন থেকে মিছিল বার করে,বহুজন ক্রান্তি মোর্চাও বন্ধের সমর্থনে বিশাল মিছিল বার করে। রাণীগঞ্জ এলাকার পাঞ্জাবি মোড়, বাজার এলাকায় রাস্তা অবরোধের চেষ্টা করা হলে কয়েকজন বাম সমর্থককে গ্রেপ্তার করা হয়। দূর্গাপুরে ডিএসপির শ্রমিক কাজে যোগ দেবার সময় বন্ধ সমর্থকদের প্রতিরোধের মুখে পড়তে হয়।        

   যদিও আজ বুধবার বিকাল পর্যন্ত বন্ধ সফল বলে জানিয়েছে বামশ্রমিক সংঘটন। 
মোটের ওপর আসানসোলে দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে বন্ধের মিশ্র ছবি দেখতে পাওয়া যায়।

News Editor

Mr. Chandan | Senior News Editor Profile Mr. Chandan is a highly respected and seasoned Senior News Editor who brings over two decades (20+ years) of distinguished experience in the print media industry to the Bengal Mirror team. His extensive expertise is instrumental in upholding our commitment to quality, accuracy, and the #ThinkPositive journalistic standard.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *