পশ্চিম বর্ধমান জেলা / ছাড়া হলো পুরুলিয়ার বান্দোয়ানের জঙ্গলে / প্রায় ১৫ ঘন্টার চেষ্টায় ঘুমপাড়ানি গুলি করে দাঁতালকে কাবু করলো বন দপ্তরের কর্মীরা / আসানসোল ও বার্ণপুরে ২ জনের মৃত্যু
.বেঙ্গল মিরর, . রাজা বন্দোপাধ্যায়, আসানসোল, ২৯ জানুয়ারিঃ প্রায় ১৫ ঘন্টার চেষ্টার পরে মঙ্গলবার রাত সাড়ে নটা নাগাদ পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোলের মহিশীলা কলোনির সানভিউ পার্কে ঘুম পাড়ানি গুলি করে দাঁতালকে কাবু করলো বন দপ্তরের কর্মীরা। যদিও তার আগে ঐ দাঁতাল মঙ্গলবার সকালে হিরাপুর থানার বার্ণপুরের কালাঝড়িয়াতে অলোকা বাউরি ও সন্ধ্যায় ইসমাইলের গুরুনানক পল্লীতে রামবাবু যাদব নামে দুজনকে শুঁড়ে আছড়ে ও পায়ের তলায় পিষে মারে।
বলতে গেলে এই দাঁতালের তান্ডবে গোটা আসানসোল ও বার্ণপুরে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দামোদর নদী পেরিয়ে বাঁকুড়া থেকে আসা এই দাঁতালকে ধরতে বা বাগে আনতে জেলা বন দপ্তরের কর্মীদের রীতিমতো নাকাল হতে হয়। শেষ পর্যন্ত মহিশীলা কলোনির সানভিউ পার্কে ঘুমপাড়ানি গুলিতে ঐ দাঁতাল অচৈতন্য হলে বন দপ্তরের কর্মী ও সাধারণ মানুষ হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন। রাত একটা নাগাদ ক্রেনের সাহায্যে লিফটিং করে বা তুলে বন দপ্তরের কর্মীরা দাঁতালকে নিয়ে আসানসোলের মহিশীলা কলোনি থেকে বেরোয়। কিন্তু রাস্তায় এসবি গরাই রোডে আসানসোল জেলা হাসপাতালের কাছে কিছুটা হুঁশ ফিরে আসে। দাঁতালটি গাড়ি থেকে নামার চেষ্টা করে। সেখানে আবার ঘুমপাড়ানি গুলি করে তাকে বেঁহুশ করা হয়। শেষ পর্যন্ত বুধবার সকালে বন দপ্তরের কর্মীরা দাঁতালকে পুরুলিয়ার বান্দোয়ানের জঙ্গলে ছেড়ে আসে।
রাস্তায় আর বন দপ্তরের কর্মীদের কোন সমস্যায় পড়তে হয়নি। বন দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গাড়ি থেকে দাঁতাল নিজেই নেমে জঙ্গলে ঢুকে যায়। দাঁতালটির শারীরিক কোন সমস্যা নেই। কোনভাবে দলছুট হয়ে যাওয়া ও জনবসতি এলাকায় চলে এসে অনেক লোকেদের দেখে সে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার সকালে দামোদর থেকে শৌচকর্ম করে বাড়ির দিকে আসছিলেন কালাঝড়িয়ার বাসিন্দা বৃদ্ধা অলোকা বাউরি। আচমকাই সে রাস্তায় দাঁতালের সামনে পড়ে। সে নিজের প্রাণ বাঁচাতে পালাতে পারেনি। দাঁতাল তাকে শুঁড় দিয়ে ধরে বেশ কয়েকবার আছাড় মারে। পরে পায়ের তলায় পিষে মারে। খবর পেয়ে হিরাপুর থানার পুলিশ ও জেলা বন দপ্তরের আধিকারিক ও কর্মীরা খবর পেয়ে সেখানে যান। ততক্ষণে খুনী দাঁতাল কালাঝরিয়া থেকে বেরোতে শুরু করে। বন দপ্তরের কর্মীরা তার পিছু ধাওয়া করেন। বন দপ্তরের কর্মীদের সাহায্য করার জন্য বাঁকুড়া থেকে হুল্লাপার্টিদের আনা হয়। সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ তাড়া খেয়ে ঐ দাঁতাল তালকুড়ি গ্রাম হয়ে আসানসোল শহরের ইসমাইলের গুরুনানক পল্লীতে ঢুকে পড়ে। বন দপ্তরের কর্মীরা সেই সময় ঘুমপাড়ানি গুলি করে তাকে কাবু করার পরিকল্পনা নেয়। কিন্তু এলাকার বাসিন্দারা বন দপ্তরের কথা উপেক্ষা করে নিজেদের মতো করে দাঁতালকে ভাগানোর চেষ্টা করে। তার মধ্যেই ঐ দাঁতাল গুরুনানক পল্লীর ৪ নং গলির কাছে রামবাবু যাদব নামে এক বৃদ্ধকে শুঁড়ে নিয়ে আছড়ে মেরে ফেলে। সেখান থেকে ঐ দাঁতাল মহিশীলা কলোনির সানভিউ পার্কের কাছে চলে আসে। খবর আসানসোল দক্ষিণ থানার পুলিশ বাহিনী সেখানে আসে। চলে আসেন জেলার বন আধিকারিক বা ডিএফও মিলন মন্ডল। গোটা এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। রাত সাড়ে নটা নাগাদ এলাকায় জল কাদায় ভর্তি একটা ডোবায় সেই দাঁতাল আটকে যেতেই বন দপ্তরের তাকে লক্ষ্য করে পরপর তিনটি ঘুমপাড়ানি গুলি চালায়। একটা গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হলেও, দুটি শরীরে লাগে। তাতেই দাঁতাল বেহুশ হয়ে যায়। এরপর ডেকে আনা হয় ক্রেন ও বড় গাড়ি। ঘন্টা তিনেকের চেষ্টায় বন দপ্তরের কর্মীরা ক্রেন দিয়ে লিফটিং করে দাঁতালকে গাড়িতে তোলেন।
ডিএফও মিলন মন্ডল বলেন, এদিন সকালে ঐ দাঁতাল দামোদর নদী পেরিয়ে বাঁকুড়া থেকে কালাঝড়িয়া গ্রামে ঢুকে পড়ে। তার আক্রমনে দুজন মারা গেছেন। আমরা বহু চেষ্টার পরে মহিশীলায় ঘুমপাড়ানি গুলি করে তাকে কাবু করেছি। পরে তাকে পুরুলিয়ার বান্দোয়ানের জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
Mr. Chandan | Senior News Editor Profile
Mr. Chandan is a highly respected and seasoned Senior News Editor who brings over two decades (20+ years) of distinguished experience in the print media industry to the Bengal Mirror team. His extensive expertise is instrumental in upholding our commitment to quality, accuracy, and the #ThinkPositive journalistic standard.