আসানসোল বাজারের নতুন ধর্মশালা বিক্রি হতে দেওয়া হবেনা : বললেন মন্ত্রী মলয় ঘটক ; মন্ত্রী এলাকার আন্দোলনস্থল ছেড়ে চলে যাবার পর স্থানীয় বিজেপি নেতাদের বিরোধ ও স্লোগান :
আসানসোল, বেঙ্গল মিরর ,৭ ই জুন,২০২০, সৌরদীপ্ত সেনগুপ্ত :
বহু বছর ধরে পশ্চিম বর্ধমানের আসানসোলে বড় বাজারের কাছে এন এস রোডে জানকী দাবি ধর্মশালাতে (যা নতুন ধর্মশালা নামে পরিচিত) নিত্য নৈমিত্তিক ধার্মিক অনুষ্ঠান, ভগবত গীতা পাঠ, ভজন মন্ডলী, মাতা কি জাগরণ, শ্যাম মহোৎসব, রানী সতী দাদী জী- র উৎসব, বিয়ের অনুষ্ঠান, সামাজিক উৎসব, ব্লাড ডোনেশন ক্যাম্প প্রভৃতি হয়ে আসছে। এর সাথেই প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী প্রশাসনিক অধিকারীদের থাকার ব্যবস্থা এখানে করা হয়ে থাকে।
কিছুদিন ধরেই সবার কাছেই কানাঘুষো খবর ছিল এই বহু পুরনো ধর্মশালা ( নতুন ধর্মশালা) বিক্রি এবং হস্তান্তর করবার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। এই ধর্মশালা আসানসোল বাজার এলাকার সবচেয়ে বড় ধর্মীয় বিশ্বাসের স্থান। আর এই ধর্মশালা ব্যবসায়িক মুনাফার কারণে বিক্রি এবং হস্তান্তর করার যৌক্তিকতা এবং প্রাসঙ্গিকতা কতটা তাই নিয়ে বিস্তর প্রশ্ন রয়েছে।
এই কারণে ধর্মশালা বাঁচাও আন্দোলনে উপস্থিতি হয়েছিলেন পশ্চিমপঙ্গের শ্রম ও আইন মন্ত্রী মলয় ঘটক। মন্ত্রী মলয় ঘটক স্থানীয় মানুষের ধার্মিক ভাবনা সম্পর্কে অবগত হয়ে বলেন, “ধর্মশালার সম্পত্তি ক্রয় – বিক্রয়ের জন্যে নয়। বিগত বেশ কয়েক দশক ধরে এই ধর্মশালা বিবাহ, ধার্মিক অনুষ্ঠান, সামাজিক অনুষ্ঠিত। জন্য ব্যবহৃত হয় এবং আগীমিদিনেও সেরকম ভাবেই ব্যবহৃত হবে। ওয়েস্ট বেঙ্গল এসচিটস এন্ড ফরফিচারস আক্ট ২০১২ অনুযায়ী কোনো ট্রাস্টের যদি পারিবারিক সম্পর্কের কোনো লিগ্যাল হেয়ার না থাকে তাহলে তা সরকার অধিগ্রহণ করার নিয়ম রয়েছে। যদি এই ধর্মশালার ট্রাস্টি এটিকে বিক্রি এবং হস্তান্তর করবার চেষ্টা করেন তাহলে এটিকে প্রতিহত করব চেষ্টা করা হবে এবং প্রশাসনিক স্তর থেকেও এই অনৈতিক কাজ বন্ধ করতে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এই আন্দোলন ৪৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শ্রীমতি উমা শ্রফ এর নেতৃত্বে সংগঠিত করা হয় যেখানে ওই নতুন ধর্মশালা অবস্থিত। কাউন্সিলর উমা শ্রফ বলেন, “
আমাদের দাবি হলো এই ধর্মশালাকে ধর্মশালার কাজেই যাতে ব্যবহার করা হয়। এই ধর্মশালার রক্ষণাবেক্ষণ এবং ব্যবস্থাপনার জন্য যদি কোনো সাহায্যের প্রয়োজন হয় তাহলে স্থানীয় মানুষজনের সহায়তার জন্য ভীষণভাবে চেষ্টা করা হবে।
এই ধর্মশালাকে যাতে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান হিসেবে যাতে হস্তান্তর না হয় তার অনুরোধ করেন তিনি। এর সাথে তিনি বলেন,যদি এই প্রতিষ্ঠানকে কে যদি ব্যবসায়িক স্বার্থে হস্তান্তরকরণের চেষ্টা বন্ধ না হয় , তবে আগামীদিনে তীব্র এবং বৃহত্তর আন্দোলন হবে। আমরা আমাদের আন্দোলন করোনা পরিস্থিতিতে মাস্ক পরেই করেছি। “
এই আন্দোলনকে বৃহত্তর রূপ দেবার জন্যে বাজার এবং আশেপাশের অনেক ধার্মিক সংগঠন, সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা বহু সংখ্যায় উপস্থিত হন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রায় হাজারখানেক মানুষের সমাগম হয়।
এদিকে মন্ত্রী চলে যাবার পরই ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন আসানসোল এলাকার বিজেপির নেতৃত্বে এবং এই ধর্মশালা বিক্রির চক্রান্ত করার জন্য বিরোধ প্রদর্শন করেন। উপস্থিত বিজেপি নেতা সুদীপ চৌধুরী বলেন, “এটি সমগ্র আসানসোলের ঐতিহ্য। বহু বছর থেকে এই প্রতিষ্ঠান ধার্মিক কাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এটিকে বিক্রির চক্রান্তের তীব্র বিরোধিতা করছি।” এরই সঙ্গে প্রাক্তন কাউন্সিলর শিব প্রসাদ বর্মন বলেন, “এই ধর্মশালার সঙ্গে এই বাজার এলাকার হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষের বিশ্বাস এবং আস্থা জড়িত আছে। আর তাই এই ধার্মিক আস্থার সঙ্গে কোনো মানুষ খেলা করেন তা তিনি হিন্দু, মুসলিম, শিখ , ক্রিশ্চান যেই হোন না কেন তার বিরুদ্ধে তীব্র বিরোধ প্রদর্শন করা হবে।” সেখানে বিজেপি নেত্রী এবং পার্শ্ববর্তী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আশা শর্মা কেও দেখতে পাওয়া যায়।
বিজেপির উপস্থিতি সম্পর্কে ৪৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর উমা শ্রফ কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, “বিরোধী পার্টি কিভাবে এখানে উপস্থিত হলেন জানা নেই। এটি পার্টির কোনো অনুষ্ঠান নয়। এটা এলাকাবাসীর বৃহত্তর সমস্যা। বিরোধী দল বিজেপির নেতৃত্বে কিভাবে এটিকে দেখছেন এটা তাদের ব্যাপার। আমরা আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাবো এই অনৈতিক কাজের বিরুদ্ধে।”