ASANSOL-BURNPUR

২০২১ কে পাখির চোখ করে বিজেপি মহিলা মোর্চা কে সাজাতে বেশকিছু পরিকল্পনার কথা ফোন সাক্ষাৎকারে জানালেন নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত মহিলা মোর্চার রাজ্য সভানেত্রী অগ্নিমিত্রা পাল

বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, ৯ ই জুন,২০২০, সৌরদীপ্ত সেনগুপ্ত: 
  ২০২১ কে পাখির চোখ করে পশ্চিমবাংলার প্রতি জেলায় আলাদাভাবে  লিগ্যাল সেল গড়ে তুলে মহিলাদের সুরক্ষা সংক্রান্ত ব্যাপারটি সবার প্রথমে গুরুত্বসহকারে দেখতে চান সেটি টেলিফোনের দ্বারা দীর্ঘ সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে বলেন  বঙ্গ বিজেপির সদ্য দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত মহিলা মোর্চার সভানেত্রী অগ্নিমিত্রা পল।

 
বিজেপির সদ্য দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত মহিলা মোর্চার সভানেত্রী হবার পর সাংবাদিকদের তরফে ফোন করা হলে অগ্নিমিত্রা একটি স্পষ্ট রূপরেখা তুলে ধরেন তার আগামীদিনের পরিকল্পনা সম্পর্কে।
তিনি বলেন, বহু জায়গাতেই তাদের দলের মহিলারা লিগ্যাল হেল্প বা আইনি সহায়তা পাচ্ছেননা  অথবা থানায় এফ.আই.আর নিচ্ছেনা সেক্ষেত্রে কিভাবে কি করতে হবে সে সম্পর্কে সম্যক ধারণা ক্ষীণ থাকে যিনি বিপদের পড়েছেন।আর ঠিক এখানেই লিগ্যাল সেল আইনি সহায়তা করবে সেইসব মহিলাদের।  মহিলারাও যাতে আইনি সুবিধা সহজে পান সেই লক্ষ্যে জেলায় জেলায় আইনি সহায়তা কেন্দ্র গড়তে চাইছি। মহিলা আইনজীবীরা থাকবেন, পরামর্শ দেবেন।’
বিজেপি মহিলা মোর্চার রাজ্য সভানেত্রী হিসাবে তার নেতৃত্বে প্রথম কর্মসূচি হবে করোনা পরিস্থিতিতে আগামী 12 তারিখ মহিলাদের দ্বারা নিজে হাতে বানানো মাস্ক বিতরন কর্মসূচির সূচনার মাধ্যমে। প্রতি মহিলা পাঁচটি করে মাস্ক তৈরি করে সেগুলি বিতরণ করবেন প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশকে পাথেও করে স্বনির্ভর ভারত গড়ে তোলার লক্ষ্যে। 
অগ্নিমিত্রা বলেন বর্তমানে তিনি জুম অ্যাপের   মাধ্যমে তার গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক বৈঠকগুলোতে অংশগ্রহণ করছেন কারণ করোনা পরিস্থিতিতে সোশ্যাল ডিস্ট্যান্স মানে সবার সুরক্ষা বজায় রেখে এটিই বৈঠক করার একমাত্র উপায় ।
বিজেপি মহিলা মোর্চার সভানেত্রী হিসাবে 
নিজের পরিকল্পনার কথাও জানালেন অগ্নিমিত্রা। তিনি বলেন, “শুরুতেই দলের প্রত্যেক মহিলা সদস্যের সঙ্গে পরিচিত হতে চাই। সামনেই ২০২১। সেই দিকে লক্ষ্য রেখে আমি চাই বাংলার প্রত্যেক মহিলাকে স্বনির্ভর করে তুলতে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন স্বনির্ভর ভারত গড়ে তুলতে হবে। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী কৌশল যোজনার সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে মহিলাদের আর্থিক নির্ভরতা দেওয়া আমার অন‌তম উদ্দেশ্য। এছাড়াও আর একটা কাজ করতে চাই, গ্রামে গ্রামে ‘ স্বাস্থ্য মহল্লা’ গড়ে তুলতে। যার দায়িত্বে থাকবেন মহিলারাই।’
লকডাউন পর্ব মিটে যাওয়ার পর তার পরিকল্পনা রয়েছে রাজ্যের প্রতিটি জেলায় গিয়ে দলের মহিলা মোর্চার সাংগঠনিক কার্যক্রম খতিয়ে দেখা। এখনই মহিলা মোর্চার কোন সাংগঠনিক রদবদলের কথা তিনি ভাবেন নি।  প্রতিটি জেলার সমস্যা বিভিন্ন ধরনের তাই প্রতিটি জেলায় গিয়ে মহিলাদের সাংগঠনিক কার্যকলাপ পরিদর্শন করে সেই মতো ব্যবস্থা নেবেন। 
তিনি বলেন আত্মনির্ভর ভারত গড়ে তোলার লক্ষ্যে পরবর্তী পর্যায়ে তার ইচ্ছে রয়েছে পশ্চিম বাংলার প্রতিটি জেলায় মহিলাদের দ্বারা পরিচালিত হেল্থ সেন্টার তৈরি করা। সেখানে সাধারণ ব্লাড প্রেসার মাপা থেকে শুরু করে ব্লাড টেস্ট করা বুকে ব্যথা উঠলে তার সেই সময়ে আপৎকালীন চিকিৎসা এবং প্রভৃতি পরিষেবার লাভ নেওয়া যাবে।
তিনি বলেন , দ্বিতীয় দফায় মোদি সরকারের বর্ষপূর্তির পাশাপাশি রাজ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের ৯ বছর পূর্তি হলো। এই ৯ বছরে বাংলা ক্রমশ পিছিয়ে পড়েছে। পশ্চিমবঙ্গকে বৃদ্ধাশ্রম বানিয়েছেন দিদি।  ‘ গত ৯ বছরে রাজ্যে একটাও শিল্প আসেনি। রাজ্য পেয়েছে শুধু দুর্নীতির ত্রিফলা বাতি, নীল সাদা রং, সিন্ডিকেট রাজ, পিছনের দরজা দিয়ে শিক্ষাক্ষেত্রে নিয়োগ। আর তার ফলেই কাজের খোঁজে বাংলা ছেড়েছেন মানুষ, উচ্চ শিক্ষার জন্য মেধাবী ছাত্রীরা রাজ্য ছেড়েছেন। একলা রয়ে গিয়েছেন বৃদ্ধ বাবা, মায়েরা। সুতরাং রাজ্য বৃদ্ধাশ্রম ছাড়া আর কিছুই নয়।
তিনি বলেন,’করোনা পরিষ্কার করে দিয়েছে আমাদের রাজ্যের শ্রম ও জীবিকার ছবিটা। বাংলার এতো পরিযায়ী শ্রমিক যে বাইরে রয়েছেন তা হয়ত কোনোদিন জানাই যেতো না। অথচ মাননীয়া এই দুঃসময়ে এই পরিযায়ী শ্রমিকদের সঙ্গে কি অমানবিক ব্যবহার করলেন। ” পরিযায়ী ” শব্দটাতে আমার অবশ্য আপত্তি রয়েছে। শ্রমিক কেন পরিযায়ী হবেন!’ মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ করে তিনি আরও বলেন, ‘বাংলার মানুষ অনেক আশা করে মাননীয়াকে ক্ষমতায় এনেছিলেন। কিন্তু হাওয়াই চটি পরেও দিদি জনগণের নেত্রী হতে পারলেন না। তৃণমূল নেত্রী রয়ে গেলেন। উনি ভুলে গেলেন, উনি তৃণমূলের নন, সারা বাংলার মানুষের মুখ‌মন্ত্রী। শ্লোগান হিসাবে ‘ মা, মাটি, মানুষ’ শুনতে ভালো। কিন্তু উনি বাংলার মানুষের ‘ মা’ হতে পারলেন না। রাজ্যটাকেও মাটি করলেন।’
  আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত ফ্যাশন ডিজাইনার অগ্নিমিত্রা পাল আদতে আসানসোলের মেয়ে। বর্তমানে কলকাতায় থাকলেও তার প্রাথমিক স্কুল এবং কলেজ জীবনের কিছুটা আসানসোলে কেটেছে। আর করোনা পরিস্থিতিতে লক ডাউন ঘোষণার পর থেকেই আসানসোলের সাংসদ ও কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়র আসানসোলে দেখা না মেলায় তার সম্পর্কে আসানসোলের মেয়র, রাজ্যের মন্ত্রী তথা আসানসোল উত্তরের বিধায়ক থেকে সমস্ত নেতানেত্রী অভিযোগ করে আসছেন।একটি সাংবাদিক বৈঠকে মেয়র বলেন আসানসোলের সাংসদ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় হেয়ার স্টাইলের ছবি দিলেও নিজের এলাকা আসানসোলের তার দেখা মেলেনি ।কিছুদিন আগে আমফান ঘূর্ণিঝড় বিপর্যস্ত এলাকা পরিদর্শন করতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কলকাতায় আসেন। সেই সময় বাবুল সুপ্রিয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সঙ্গে থাকলেও কলকাতা থেকে 200 কিলোমিটার দূরে আসানসোলে আসবার আগ্রহ দেখাননি।
আর  এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে অগ্নিমিত্রা জবাব দেন যে জ্যাক অফ অল ট্রেডস মাস্টার অফ স্নান এই কথাটি এখন অপ্রাসঙ্গিক। এখন জ্যাক অফ অল ট্রেডস হবারই যুগ তাই কেউ নিজের চুল কাটার ছবি দিয়ে সেই ব্যাপারটি তুলে ধরতেই পারেন। অগ্নিমিত্রা বলেন যে বাবুল সুপ্রিয় একজন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী। তিনি সবার মন্ত্রী।লকডাউন ঘোষণা হওয়ার সময় তিনি দিল্লিতে ছিলেন। আমফান পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী কলকাতায় আসার দিন তার সাথে দেখা করে মন্ত্রী আবার দিল্লি ফেরত চলে যান। তৃণমূল নেতাদের এটুকু বোঝা উচিত কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে সারা দেশের ওপর নজর দিতে হয়।  যদি লকডাউন এর সময় আসানসোলে আসতেন তাহলে স্বাভাবিকভাবেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সাথে বিভিন্ন দরকারে বহু মানুষ দেখা করতে আসতেন। ফলে লকডাউন সঠিকভাবে মানা সম্ভব হতো না । কিন্তু তিনি দিল্লিতে থেকেই আসানসোলের ওপর সবসময় নজর রেখেছিলেন এবং প্রয়োজনীয় যে সমস্ত ব্যবস্থা নেওয়ার দরকার ছিল তা তিনি টেলিফোনে, ভিডিও কল বা জুম অ্যাপের মাধ্যমে  কর্মীদের এবং স্থানীয় নেতাদের সেই সমস্ত কাজ করতে নির্দেশ দিয়েছেন।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মহিলা হলেও এরাজ্যে মহিলাদের উপর নির্যাতনের রেখাচিত্র ঊর্ধ্বমুখী। কামদুনি, পার্ক স্ট্রিট কাণ্ড খুব পুরনো নয়। পার্ক স্ট্রিটের নির্যাতিতা মৃত্যুর আগে বিচার পাননি। উল্টে দময়ন্তী সেনকে সঠিক তদন্তের অগ্রগতির জন্যে কম গুরুত্বপূর্ণ পদে বদলি হতে হয়েছিল। 
  
তিনি বলেন, ‘ আমার দুই পূর্বসূরীরা মহিলা  নেত্রী লকেট চাটার্জী এবং রূপা গাঙ্গুলি মহিলা  মোর্চার ভিত শক্ত করে গিয়েছেন। আমি এই ভীতকে  আরো শক্ত এবং শক্তিশালী করব ।
 বর্তমান তরুণ প্রজন্মের রাজনীতি সম্পর্কে অনীহা দেখা যাচ্ছে এবং এই বিষয়ে তার ভবিষ্যতে কোনো সদর্থক পদক্ষেপ নেওয়ার ইচ্ছে রয়েছে কিনা এই বলে সাংবাদিকের তরফে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন “আমি ভীষণভাবে চেষ্টা করব শিক্ষিত, মেধাবী তরুণ প্রজন্মকে রাজনীতিতে নিয়ে আসার জন্যে”। 
রাজ্য বিজেপি মহিলা মোর্চার সভানেত্রী বলেন বহু কারণে রাজ্যের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে তাঁদের অভিভাবকদের দ্বারা চর্চিত রাজনীতি সম্পর্কে একটা বিতৃষ্ণা তৈরি হয়েছে। তিনি মনে করেন প্রধানমন্ত্রী মোদিজির প্রতিটি কাজ সঠিকভাবে যদি এই প্রজন্মের সামনে তুলে ধরা যায় তাহলে তাঁরা নিশ্চয়ই রাজনীতির সম্পর্কে আগ্রহ দেখিয়ে এগিয়ে আসবেন। তিনি চান ২০২১ এর যুদ্ধক্ষেত্রে বাংলার রাজনৈতিক ও সামাজিক পট পরিবর্তনে তরুণ শক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিক ।
  এভাবেই খুব সাবলীলভাবে রাজ্য বিজেপির মহিলা সভানেত্রী তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা সাংবাদিকের কাছে তুলে ধরেন। এখন ২০২১ পর্যন্ত এই পরিকল্পনা কিভাবে ও কতখানি বাস্তবায়িত করা হয় সেদিকেই লক্ষ্য থাকবে সংবাদ মাধ্যমের।

News Editor

Mr. Chandan | Senior News Editor Profile Mr. Chandan is a highly respected and seasoned Senior News Editor who brings over two decades (20+ years) of distinguished experience in the print media industry to the Bengal Mirror team. His extensive expertise is instrumental in upholding our commitment to quality, accuracy, and the #ThinkPositive journalistic standard.

One thought on “২০২১ কে পাখির চোখ করে বিজেপি মহিলা মোর্চা কে সাজাতে বেশকিছু পরিকল্পনার কথা ফোন সাক্ষাৎকারে জানালেন নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত মহিলা মোর্চার রাজ্য সভানেত্রী অগ্নিমিত্রা পাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *