ASANSOLCOVID 19

আইসোলেশান ওয়ার্ডে রোগী মৃত্যুর পরে নার্সকে মারধর করার অভিযোগ মায়ের বিরুদ্ধে / নিরাপত্তার দাবিতে বিক্ষোভ / পুলিশে অভিযোগ দায়ের

বেঙ্গল মিরর, রাজা বন্দোপাধ্যায়, আসানসোল, ২৭ জুলাইঃ আসানসোল জেলা হাসপাতালের আইসোলেশান ওয়ার্ডে করোনা সন্দেহে ভর্তি হওয়া এক রোগীর মৃত্যুর পরে, ওয়ার্ডে কর্তব্যরত এক নার্সের উপর হামলা চালানোর অভিযোগ উঠলো মায়ের বিরুদ্ধে। সোমবার সকালের এই ঘটনার পরে হাসপাতাল চত্বরে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। দুপুর দুটোর পরে প্রায় ১০০ নার্স ঘটনার প্রতিবাদে, হামলাকারীকে গ্রেফতার ও নিরাপত্তার দাবিতে হাসপাতালের এমারজেন্সি বিভাগের বাইরে বিক্ষোভ দেখান। যদিও তারা ডিউটি বন্ধ করেননি। তবে তারা জানিয়েছেন, তাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা এইভাবেই বিক্ষোভ চালিয়ে যাবেন। এই ঘটনার পরে হামলাকারী ও রোগীর পরিবারের সদস্যরা হাসপাতাল থেকে গাঢাকা দেন। খবর পেয়ে আসানসোল দক্ষিণ থানার পুলিশ হাসপাতালে আসে। ওয়ার্ডের নার্সেরা হাসপাতাল সুপার ডাঃ নিখিল চন্দ্র দাসকে লিখিতভাবে গোটা ঘটনার কথা জানান৷ তার পরিপ্রেক্ষিতে সুপার আসানসোল দক্ষিণ থানায় ঘটনা জানিয়ে অভিযোগ করেন। তার ভিত্তিতে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। শর্মিষ্ঠা দে নামে প্রহৃত নার্স হাসপাতালের ফিমেল ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন৷ তার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল বলে জানা গেছে

pic- souradipto sengupta


প্রসঙ্গতঃ, করোনা আবহের মধ্যে আইসোলেশান ওয়ার্ডে রোগীর পরিবারের কারোর ঢোকার কথা নয়। এক্ষেত্রে ঐ রোগীর মা কি করে ওয়ার্ডে ঢুকলো, তা নিয়ে হাসপাতালের নার্স, স্বাস্থ্য কর্মী ও চিকিৎসকরা প্রশ্ন তুলেছেন। তাদের অভিযোগ, আইসোলেশান ওয়ার্ডের গেটে কোন নিরাপত্তা রক্ষী নেই। বারবার এই ব্যাপারে সুপারকে বলা হয়েছে। কিন্তু, তিনি কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। নার্সদের আরো অভিযোগ, তাদের ডিউটির ক্ষেত্রে কোন প্রোটোকল মানা হচ্ছে না। শুধুমাত্র মৌখিক নির্দেশে দুদিন আগে জেলার এক এটিএমের বাংলোর এক পরিচারিকাকে ইনঞ্জেকশান দেওয়ার জন্য নার্স পাঠানো হয়। যা তাদের ডিউটির মধ্যে পড়ে না। এমন অনেক কাজ তাদের দিয়ে করানো হচ্ছে বলে নার্সদের অভিযোগ।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, কুলটি থানার এলসি মোড়ের বাসিন্দা ২৭ বছরের সন্তোষী চৌধুরীকে রবিবার বাড়ির লোকেরা আসানসোল জেলা হাসপাতালে নিয়ে আসেন। তারা এমারজেন্সি বিভাগের চিকিৎসককে বলেন, শিশু বয়স থেকেই সন্তোষীর ” এপিলেক্সি ” ( এক ধরনের খিঁচুনি বা টান হয়। যাতে ফিট বা অচৈতন্য হয়ে যায়) রোগ আছে। শ্বাসকষ্ট থাকায় চিকিৎসক করোনা সন্দেহে আইসোলেশান ওয়ার্ডে তাকে ভর্তি করান। রাত এগারোটার রোগীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। কিন্তু অভিযোগ, সেই সময় রোগীর বাড়ির লোকেদের হাসপাতালে পাওয়া যায়নি। সোমবার সকালে রোগীর অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যায়। সকাল এগারোটার পরে তার মৃত্যু হয়। এরপর চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। সেই কথা ওয়ার্ডে সেই সময় কর্তব্যরত নার্স শর্মিষ্ঠা দে রোগীর পরিবারের সদস্যদের খুঁজে বলতে যাচ্ছিলেন। অভিযোগ সেই সময় মৃতার মা কোনভাবে ওয়ার্ডে ঢুকে পড়েন। আচমকাই তিনি পিপিই পড়া নার্সের উপরে চড়াও হয়ে তাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেন। তাকে টানাটানি করে মারধর করেন৷ নার্সের চিৎকারে অন্যরা ছুটে আসার আগেই হামলাকারী মহিলা পালিয়ে যান। প্রহৃত নার্স বলেন, বুঝতেই পারিনি। আচমকাই আমার উপরে ঐ মহিলা চড়াও হন। সহকর্মীর উপরে এই হামলার ঘটনা জানতে পেরে ক্ষুব্ধ হন। নার্সেরা চলে আসেন এমারজেন্সি বিভাগের বাইরে। সেখানে তারা ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন৷ পরে তারা সুপারের কাছে গিয়ে তাকে ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান। সুপার তাদেরকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন। এরপরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
সুপার বলেন, ঘটনার কথা লিখিত ভাবে পুলিশকে জানানো হয়েছে। নার্সদের অন্যসব অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অন্যদিকে আসানসোল দক্ষিণ থানার পুলিশ জানায়, অভিযোগ দায়ের হয়েছে। তদন্ত করা হচ্ছে। হামলাকারীর খোঁজ চলছে
হাসপাতাল সূত্রে আরো জানা গেছে, মৃত রোগী করোনা আক্রান্ত নয়। তার লালারসের পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *