কালিদাস_দে আর আজ আমাদের ভিতর নেই : বিশ্বনাথ মিত্র
বেঙ্গল মিরর এর মাধ্যমে নিজের মনের কথা তুলে ধরেছেন শিক্ষক বিশ্বনাথ মিত্র




একজন বিতর্কিত, পন্ডিত, পরোপকারী, ছাত্রদরদী, আধুনিক, সামাজিক, বিদগ্ধ, অজাতশত্রু দূরদর্শী মানুষ আমার রামকৃৃষ্ণ মিশনের অন্যতম প্রিয় শিক্ষক ৷ আর আজও ৷ নামের সংগে চরিত্রের এই মিল বিরল ৷
1977 এ ক্লাস থেকে তার ছাত্র ছিলাম ৷ বিষয় ? কখনো ইতিহাস কখনো ইংরেজী কখনো বা গেমস টিচার, আবার স্কুল কর্তৃপক্ষের অনুরোধে ‘ধর্ম’ও ! এন সি সি-র গ্রেজেটেড অফিসারের পদে ছিলেন ৷ এছাড়াও সারা জীবন বিভিন্ন সরকারী এবং বেসরকারী সাম্মানিক পদ অলংকৃত করেছিলেন ৷
রোগা দো-হারা প্রচণ্ড ধূম্রপায়ী মানুষের চোখ দুটি শরৎচন্দ্রের “গিরিশ মহাপাত্র” র মত উজ্জ্বল ছিল ৷ আর তাঁর সব্যসাচী চরিত্রের মত কালিদার কৃতিত্ব সর্বময় ৷
যুবা হ’তে বয়সকালেও কৃষ্ণকায় একই চেহারায় অদম্য প্রানস্ফূর্তি….. আর দ্বিতীয়টি দেখিনি ৷
যে যা বিষয়ে #উপকার চাইতে আসতেন, পাশে দাঁড়াতেন ৷ সুপরামর্শ দিতেন ৷ এলাকায় বহু শিক্ষাবিদ থেকে রাজনীতিবিদ সকল স্তরের মানুষ ছিলেন তাঁর অনুরক্ত ৷ সর্বস্তরে তাঁর পদচালনা অবিসংবাদিত
বৈচিত্র্যময় এই মানুষটি তাঁর অমূল্য জীবনের কিছুটা সময় এই অধমের জন্য ব্যয় করেন ৷ আমার সংগে ঘনিষ্ট সম্পর্ক ৷ প্রচণ্ড আশাবাদী ছিলেন এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষী ৷ তাঁর স্বপ্ন ছিল এমন এক কলেজ, যেখানে দূরশিক্ষার মাধ্যমে পোষ্ট গ্র্যাজুয়েট পড়া হবে ৷ অবসরের আগে হতেই এর ফলে তিনি কত যে অর্থ ব্যয় করেছিলেন, অকল্পনীয় ৷ হয়ে পড়েন বিতর্কিতও ৷ তাঁর এই #একগুঁয়েমী’ কে হাসিমুখে সমর্থন করে গেছেন তাঁর সুযোগ্যা সহধর্মিনী এবং শিক্ষিত চার পুত্রকন্যা ৷ আমি দিনের পর দিন দেখেছি ন্যুনতম বিলাসিতাকে ত্যাগ করে তার পরিবার সঙ্গ দিয়ে গেছেন স্যারকে ৷
দূরশিক্ষার জন্য আসানসোলে একটির পর একটি সেন্টার খুললেও সাফল্যের মুখ দেখতে পাননি ৷ আজীবন কংগ্রেসে অনুরক্ত পরবর্তী সময়ে মমতা ব্যানার্জীর অনুরক্ত হয়ে পড়েন ৷
বৈচিত্র্যময় এই মানুষটি তাঁর অমূল্য জীবনের কিছুটা সময় এই অধমের জন্য ব্যয় করেন ৷
তিনি না থাকলে আমার আন্নামালাই বিশ্ববিদ্যালয়ে distance education -এ বি.এড পাশ করা হত না ৷
সেই সময় একটি দুর্ভাগ্যজনক অথচ ‘মজার’ (?) ঘটনা ঘটে ৷ সময় 1995 সাল ৷ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন ৷ হঠাৎ #গুজব ছাড়িয়ে পড়ে, তিনি মারা গেছেন ৷ অনেক গুণগ্রাহী, ছাত্র ফুল নিয়ে SDO হসপিটাল চলে যান ৷ মনে আছে আমি মনে মনে বলেছিলাম, আপনি মরতে পারেন না ৷ আমার আন্নামালাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির ( বি.এডের ) ফর্ম তখন স্যারের কাছে ৷ আমার আকুলতা এবং স্বার্থপরতার কাছে বিধাতা হার মানে ৷ তিনি পরদিন মিটিমিটি হাসছিলেন যখন হসপিটালে দেখা করলাম ৷ পাশে রাখা ফাইলে দেখলাম আমার দশ হাজার টাকার ভর্তির রিসিপ্ট যত্ন করে রাখা !
আমার স্বর্গীয় মা বলেছিলেন, তোর স্যারের আয়ু তো আরও বেড়ে গেল ৷ হয়েও ছিল তাই ৷ এদিকে আমি ভর্তিও হলাম ৷ আন্নামালাইয়ের দক্ষিণী খটখট ইংরেজী তিনি এবং আরও এক মিশনের শিক্ষক দীপক রায় আমার গোবরে মাথায় ঢোকাতে লাগলেন ৷ মনে আছে আদি বর্ধমান জেলায় মোট যে 15 জন পরীক্ষায় বসেন, তার ভিতর যে তিনজন উর্ত্তীণ হন, তার ভিতর আমার মত একজন ‘গবেট’ও ছিল ! তিনি ছাড়া এটি অসম্ভব ছিল
নজরুল_বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রথম এই পরম জ্ঞানী মানুষটিই প্রথম লড়াই শুরু করে,.. অনেকেই জানেন না ! অথচ এই প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাকালে তিনিই ব্রাত্য রইলেন ৷ এইসব মানুষ এম এল এ বা এম পি দূরের কথা, কখনো জেলা সভাপতি হন না ৷ কারণ তিনি যে আমাদের প্রিয় কালিদা ৷
আচ্ছা, কেউ কি বলবেন, তাঁর এই মহাপ্রয়াণের খবরটি মিথ্যা ! আবার কি স্যার মিটিমিটি হেসে আমায় বলবেন, ‘বিশ্বনাথ তুই এত স্বার্থপর যে আমি ভাল আছি কিনা গত পাঁচ বছর খবরই রাখলি না !’