বেঙ্গল মিরর , আসানসোল, সৌরদীপ্ত সেনগুপ্ত: প্রয়াত হলেন ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় । মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর । কিছুদিন আগে বাথরুমে পড়ে গিয়ে আগে মাথায় আঘাত লাগে প্রণববাবুর ।
১০ অগাস্ট তাঁকে আর্মি রিসার্চ অ্যান্ড রেফেরাল হাসপাতালে ভরতি করা হয় । তাঁর মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বেঁধে গিয়েছিল । একইসঙ্গে কোভিড আক্রান্তও ছিলেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি । মাথায় রক্তক্ষরণ নিয়ে দিল্লীর সেনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সেখানে তাঁর কোরোনা সংক্রমণের কথাও জানা যায় । সংকটজনক অবস্থায় তার মস্তিকে অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকরা । অস্ত্রোপচার সফল হয় । কিন্তু বিপদ কাটেনি । অস্ত্রোপচারের পর ভেন্টিলেশনে রাখা হয় তাঁকে
। ১১ ই অগাস্ট তাঁর শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হয় । চিকিৎসকরা জানান, প্রণব মুখোপাধ্যায়ের অবস্থা সংকটজনক । এরপর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে । নতুন করে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ শুরু হয় । নিয়মিত রক্ততরলের ওষুধ খেতেন প্রণববাবু, সেই কারণেই রক্তক্ষরণ বন্ধ হচ্ছে না বলে মত ছিল চিকিৎসকদের । একসময় চিকিৎসায় সাড়া দেওয়াও বন্ধ হয়ে যায় । আজ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন প্রণব মুখোপাধ্যায় । ২০১২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ভারতের রাষ্ট্রপতি পদে ছিলেন তিনি ।
প্রণব মুখোপাধ্যায় একজন কলেজশিক্ষক রূপে তার কর্মজীবন শুরু করেন।
পরে তিনি সাংবাদিকের কাজও করেন কিছুকাল। এই সময় তিনি “দেশের ডাক” নামে একটি পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
এছাড়াও তিনি বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের ট্রাস্টি ও পরে নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনের সভাপতিও হন।
মাননীয় প্রণব মুখোপাধ্যায় কর্মজীবনে প্রথম দিকে হাওড়া জেলার বাঁকড়ায় অবস্থিত “বাঁকড়া ইসলামিয়া হাইস্কুল”র ২ বছর শিক্ষকতা করেছেন।
রাজনৈতিক কর্মজীবন সম্পাদনা
প্রণব মুখোপাধ্যায় প্রায় পাঁচ দশক ভারতীয় সংসদের সদস্য ।
১৯৬৯ সালে তিনি প্রথম বার কংগ্রেস দলের প্রতিনিধিস্বরূপ রাজ্যসভায় নির্বাচিত হন।
এরপর ১৯৭৫, ১৯৮১, ১৯৯৩ ও ১৯৯৯ সালেও তিনি রাজ্যসভায় নির্বাচিত হয়েছিলেন।
১৯৭৩ সালে কেন্দ্রীয় শিল্পোন্নয়ন উপমন্ত্রী হিসেবে তিনি প্রথম ক্যাবিনেটে যোগদান করেন।
ক্যাবিনেটে ক্রমান্বয়ে পদোন্নতির পর ১৯৮২ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত তিনি ভারতের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৮৪ সালে ইউরোমানি পত্রিকার একটি সমীক্ষায় তাকে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ পাঁচ অর্থমন্ত্রীর মধ্যে অন্যতমের শিরোপা দেওয়া হয়।
তার মন্ত্রীত্বকালের একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা ছিল ভারতের আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডারের ঋণের শেষ কিস্তির ১.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থ না তোলা।
তার এই মন্ত্রীত্বকালে ড. মনমোহন সিংহ ছিলেন ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংকের গভর্নর।
ইন্দিরা হত্যার অব্যবহিত পরে একটি দলীয় গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব্ব্বের শিকার হন প্রণব মুখোপাধ্যায়। এই সময় রাজীব গান্ধী তাকে নিজের ক্যাবিনেটে স্থান দেননি।
কিছুকালের জন্য তাকে কংগ্রেস থেকে বহিষ্কারও করা হয়েছিল।
এই সময় তিনি রাষ্ট্রীয় সমাজবাদী কংগ্রেস নামে নিজস্ব একটি দলও গঠন করেছিলেন।
তবে ১৯৮৯ সালে রাজীব গান্ধীর সঙ্গে মিটমাট করে নেওয়ার পর এই দল নিয়ে তিনি আবার কংগ্রেসে যোগ দেন।
পরবর্তীকালে পি. ভি. নরসিমা রাও তাকে পরিকল্পনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান নিযুক্ত করলে তার রাজনৈতিক কর্মজীবনের পুনরুজ্জীবন ঘটে।
রাওয়ের মন্ত্রিসভায় পরে তিনি ক্যাবিনেট মন্ত্রীরূপেও যোগ দিয়েছিলেন। ১৯৯৫-৯৬ সালে তিনি রাওয়ের মন্ত্রিসভায় বিদেশমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৭ সালে তিনি শ্রেষ্ঠ সাংসদ পুরস্কারে ভূষিত হন।
প্রণব মুখোপাধ্যায় জাতীয় কংগ্রেসের পশ্চিমবঙ্গ শাখারও সভাপতি।
২০০৪ সালে, কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সংযুক্ত প্রগতিশীল জোট কেন্দ্রে সরকার গঠন করে।
দ্বিতীয় নিবেদন। ২০০৯ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী ছিলেন ।
২০০৪ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুরে সাংসদ ছিলেন । ২০১৯ সালে ভারতরত্ন পান প্রণব মুখোপাধ্যায় ।