ASANSOLASANSOL-BURNPURBengali NewsFEATURED

আসানসোলের বজরঙ্গি ভাইজান এর গল্প

বজরঙ্গি ভাইজান এর গল্প

বেঙ্গল মিরর, রাজা বন্দোপাধ্যায়, আসানসোল : এ যেন একেবারেই সেলুলয়েডের বজরঙ্গি ভাইজান এর গল্প । সদ্য বাবা হারানো সাত  বছরের এক শিশুকে নেপাল দূতাবাসের সাথে যোগাযোগ করে এবং আসানসোলের পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে নেপালে তার মায়ের কাছে পৌঁছে দিলেন বার্নপুরের কয়েকজন বাসিন্দা। শিশুটি কে পেয়ে  মায়ের চোখে জল। তেমনি যারা এতদিন শিশুটিকে রেখেছিল তাদের ছেড়ে যেতে হবে ভেবে শিশুটিও কেঁদে ফেলল ।সঙ্গে  নেপাল সীমান্তে পৌঁছে দেওয়া মানুষগুলো নিজেরা নিজেদের চোখের জল ধরে রাখতে পারলেন না। এমন নাটকীয় ঘটনা সূত্রপাত হয় বার্নপুরের  নিউটাউন এলাকায়  । 

নেপালের  পোখরা  এলাকার একটি গ্রামের বাসিন্দা  খেলোয়াড় সঞ্জয় ছেত্রী।  বেশ কিছুদিন আগে  নেপাল থেকে বার্নপুর আসেন কাজের সন্ধানে। এখানে তার  ভাই থাকেন রাজু ছেত্রী।  সঞ্জয় এক বেসরকারি সংস্থায়  নিরাপত্তাকর্মী রূপে  কাজ করতেন  রাজারহাট এলাকায়।  গত ফেব্রুয়ারি মাসে  নেপাল থেকে তার  সাত বছরের শিশু  সংযুক্তা কে  নিয়ে আসেন  কাকার বাড়িতে বেড়ানোর জন্য।

  কিন্তু লকডাউন শুরু হয়ে যাওয়াতে  আর ওই শিশুকে  তার নেপালে থাকা মা  কমলাদেবী কাছে ফিরে যেতে পারেননি  । সেপ্টেম্বরে প্রথম সপ্তাহে সঞ্জয় অসুস্থ হওয়ায় তাকে তার স্থানীয় এলাকার সতীর্থ  ক্লাবের তার সঙ্গীরা জেলা হাসপাতালে ভর্তি করেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বড় কোন জায়গায় নিয়ে যাওয়ার জন্য সুপারিশ করেন। সেইমতো ক্লাবের সদস্যরা তাকে বাঁকুড়া মেডিকেল কলেজে নিয়ে যাবেন বলে হাসপাতাল থেকে ক্লাবে নিয়ে আসেন এবং একটি অ্যাম্বুলেন্স ও ঠিক করেন। কিন্তু অ্যাম্বুলেন্সে ওঠার আগেই সঞ্জয় এর মৃত্যু হয়

লকডাউন চলায় তার স্ত্রী নেপাল থেকে আর এখানে আসতে পারেননি

গত  ছয়ই সেপ্টেম্বর। সতীর্থ ক্লাবের সদস্যরা এবং তার আত্মীয়-স্বজন প্রতিবেশীরা তার শেষকৃত্যের ব্যবস্থা করেন। এই খবরের পর লকডাউন চলায় তার স্ত্রী নেপাল থেকে আর এখানে আসতে পারেননি। এরপর থেকেই এই শিশুটি কখনো কাকার বাড়িতে, কখনো তার পরিবারের বন্ধুর মেয়ে পলকের সাথে সময় কাটাত। মাঝেমধ্যে কান্নাকাটি করত মায়ের কাছে ফিরে যাবে বলে। এই ক্লাবের সাথে যুক্ত স্থানীয় সমাজকর্মী মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন আমরা কয়েকজন তখন চেষ্টা করি কিভাবে শিশুটিকে নেপালে তার মায়ের কাছে পৌঁছে দেবো। কেননা সেটা অন্য দেশ ।

স্থানীয় থানার  পুলিশের সাথে আলোচনা করে আমরা নেপাল  দূতাবাস এর সাথে যোগাযোগ করি এবং ওর বাবা নেপালের বাসিন্দা হিসেবে তার যেসব তথ্য ,এখানে তার মৃতদেহ সৎকারের কাগজ ও  পুলিশের থেকেও একটি তথ্য সহ সমস্ত কিছু নিয়ে আমরা গত মঙ্গলবার সকাল শিলিগুড়ির নেপাল সীমানা কাকরভিটা তে গিয়ে পৌঁছই। সঙ্গী আমি ছাড়াও ওর কাকা রাজু ছেত্রী, নিশাত আহমেদ সহ কয়েকজন ছিলাম।

সঞ্জয়ের স্ত্রী কমলা দেবীও তিনিও ওপাশের পানিট্যাঙ্কি সীমানা এসে দাঁড়ান। সীমানাতে আমাদের পুলিশ ওদের সাথে যোগাযোগ করেন এবং কোনরকম লাইনে দাঁড় না করিয়ে  শিশুটিকে ব্যারিকেডের ওপাশে তুলে দেন মনিময়, তার কাকা রাজু সহ অন্য সঙ্গীরা ।ওর মা শিশুটিকে পেয়ে কেঁদে ফেলেন।

আর সেই সঙ্গে বার্নপুরের রাজা ব্যানার্জি নামে এক ব্যক্তির দেওয়া কুড়ি হাজার ও অন্যদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা আরও সতের হাজার টাকা সংযুক্তার মায়ের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

সঞ্জয় মৃত্যুর পর যত খরচ হয়েছিল সবটাই স্থানীয় মানুষ এবং ক্লাবের পক্ষ থেকেই ব্যয় করা হয়। মণিময় বাবু বলেন আমরা শিশুটিকে যেমন তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিতে পারলাম তেমনি এই শিশুটি বর্তমানে প্রথম শ্রেণীতে পড়ে, তার পড়াশোনার খরচ ও আমরা আমাদের ক্লাবের পক্ষ থেকেই চালাবো বলে ঠিক করেছি ।সে-কথা ওনাকে জানিয়ে এসেছি এবং উনার মায়ের ওখানকার অ্যাকাউন্ট নম্বর আমরা নিয়ে এসেছি।

যদি কেউ তাদের সহযোগিতা করতে চান তাহলে যাতে। সরাসরি সহযোগিতা করতে পারেন  সেটাও আমরা এবং আমরা দেখব। নিয়মিত তাদের খোঁজ খবর রাখবে এবং আর্থিক সহযোগিতার চেষ্টা করব। কমলাদেবী ও তাদের বলেছেন চরম দুঃখের মধ্যেও আমার একমাত্র কন্যাকে আপনাদের সহযোগিতায় এভাবে ফেরত পাওয়া এবং আর্থিক সহযোগিতার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ। দুই দেশের মধ্যে অনন্য সেতুবন্ধনের কাজ করবে ভবিষ্যতে সাত বছরের সংযুক্তা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *