পোস্টম্যানের পচাগলা ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার জঙ্গল থেকে
৬ দিন ধরে নিখোঁজ ছিলেন
বেঙ্গল মিরর, রাজা বন্দোপাধ্যায়, আসানসোল, ৫ অক্টোবরঃ ৬ দিন ধরে নিখোঁজ থাকা এক পোষ্টম্যানের পচাগলা ঝুলন্ত দেহ জঙ্গলে গাছ থেকে উদ্ধার করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সোমবার সকালে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে আসানসোলের সালানপুরে। সালানপুর থানার সামডির বাসিন্দা মৃত পোষ্টম্যানের নাম বিবেকানন্দ ধীবর (৫০)। হাসিখুশি, ভদ্র, নম্র পোস্টম্যান বিবেকানন্দ ধীবরকে আর কোনদিন দেখা যাবে না চিঠিপত্রের ব্যাগ নিয়ে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিতে, তা এলাকার বাসিন্দারা বিশ্বাসই করতে পারছেন না।
পুলিশের প্রাথমিক তদন্তের পরে অনুমান, ঐ পোষ্টম্যান মানসিক অবসাদে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। তবে হিন্দুস্তান কেবলস পোস্ট অফিসে তার সহকর্মী, বাড়ির লোক ও চিঠি বিলির সূত্রে পরিচিতরা বিশ্বাস করতে পারছেন না যে বিবেকানন্দবাবু আত্মহত্যা করতে পারেন । যদিও পুলিশ জানায় ময়নাতদন্তের পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত তার মৃত্যুর সঠিক কারণ বলতে পারা যাবে না।
জানা গেছে, হিন্দুস্তান কেবলস পোস্ট অফিসের পোস্টম্যান বিবেকানন্দ ধীবর মালবহাল, কল্যাণগ্রাম, নিউ মার্কেট, দেশবন্ধু পার্ক সহ ১ নং বিট এলাকায় নিয়মিত চিঠি বিলি করতেন। মোটরবাইক নিয়ে তিনি যাতায়াত করতেন।
আদি বাড়ি সামডিতে
তার আদি বাড়ি সামডিতে হলেও তিনি আছড়া পঞ্চায়েত অফিসের বিপরীতে নতুন বাড়ি করে সপরিবারে বাস করতেন। বিবেকানন্দবাবুর স্ত্রী প্রতিমা ধীবর স্বাস্থ্য দপ্তরে এএনএম পদে কর্মরত আছেন । তাদের এক ছেলে ও এক মেয়ে আছে । ছেলেটি আছড়া যজ্ঞেশ্বর ইনস্টিটিউশনে উচ্চমাধ্যমিক ও মেয়ে আছড়া রায় বললাম গার্লস হাই স্কুলের সপ্তম শ্রেণীতে পড়ে ।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ২৮ সেপ্টেম্বর বিবেকানন্দ ধীবরের সঙ্গে পারিবারিক বিষয় নিয়ে তার স্ত্রীর সামান্য রাগারাগি হয়েছিল । এরপর ২৯ সেপ্টেম্বর তিনি বাড়ি থেকে পোস্ট অফিসে কাজে যাওয়ার নাম করে বাইক ও ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে যান। যদিও মোবাইলটি তিনি ঘরেই রেখে গিয়েছিলেন । কিন্তু কাজের সময় পেরিয়ে গেলেও বাড়ি না ফেরায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন বাড়ির লোকজনেরা । পরের দিন ৩০ সেপ্টেম্বর প্রতিমাদেবী পোস্ট অফিসে খোঁজ নিতে যান কিন্তু তিনি জানতে পারেন বিবেকানন্দ বাবু সেখানে আসেননি । এরপরই তিনি পুলিশে নিখোঁজ ডায়েরি করেন । এরপর থেকেই তারা অপেক্ষা করতে থাকেন হয়তো বিবেকানন্দবাবু ফিরে আসবেন এই ভেবে।
কিন্তু ৬ দিন পরে সোমবার সকালে মাধাইচকের কৃষ্ণসায়রের জঙ্গলের মধ্যে একটি গাছ থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় তার পচা-গলা দেহ দেখতে পাওয়া যায়। গাছের নিচে তার বাইক ও ব্যাগটি রাখা ছিল । খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে যায়। মৃতদেহ এতটাই বিকৃত হয়ে গিয়েছিল যে, কোনকিছুই বোঝা সম্ভব হচ্ছিল না। তবে বাড়ির লোক মৃতদেহটিকে সনাক্ত করেন ।
এদিকে হিন্দুস্তান কেবলস পোস্ট অফিসের পোস্টমাস্টার বিজয় ভান্ডারী বলেন, বিবেকানন্দবাবু নিষ্ঠাবান কর্মী ছিলেন। তাকে কোনদিন রাগতে দেখা যায়নি। তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগও নেই। বিবেকানন্দবাবুর পরিবার সূত্রে দাবি করা হয়েছে, তার শারীরিক কোন রোগ ছিল না ।
সালানপুর পুলিশ জানায়, দুর্গন্ধ পেয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা খবর দিলে পুলিশ এলাকায় যায়।