সিবিআইয়ের ৪৫ টিরও বেশি জায়গায় হানা
জেরার সময় আসানসোলে ইসিএলের সিকিউরিটি আধিকারিকের মৃত্যু
বেঙ্গল মিরর, আসানসোল,রাজা বন্দোপাধ্যায়, ২৮ নভেম্বরঃ আয়কর বিভাগের পরে এবার কয়লা চুরি ও বেআইনী কারবারির জট খুলতে ও তার সঙ্গে জড়িতদের ধরতে অভিযানে নামলো আরো একটি কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই। শনিবার সকাল থেকে সিবিআইয়ের ৩০০ জন অফিসারের দল বাংলা ও ঝাড়খণ্ডের পাশাপাশি ৪ রাজ্যের ৪৫টির মতো জায়গায় হানা দেয় ও তল্লাশি চালায়। যার মধ্যে রয়েছে কলকাতার সঙ্গে আসানসোলের রানিগঞ্জ, জামুড়িয়া, কাজোড়া ও দূর্গাপুর আছে বলে জানা গেছে। এছাড়াও পুরুলিয়ার নিতুরিয়ায় লালা বা অনুপ মাজি নামে এক কয়লা কারবারির বাড়ি ও অফিসে সিবিআইয়ের দল অভিযান চালায়।
সেই হানার সময় জেরায় এদিন সকালে আসানসোলে ইসিএলের এক সিকিউরিটি আধিকারিকের হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ। মৃত আধিকারিকের নাম ধনঞ্জয় রায় (৪৫)। পুলিশ ও ইসিএল সূত্রে জানা গেছে, মৃত ধনঞ্জয় রায় ইসিএলের কুনুস্তোরিয়া এরিয়া সিকিউরিটি আধিকারিক হিসাবে কর্মরত ছিলেন। ইন্সপেক্টর পদ মর্যাদার এই আধিকারিক আসানসোলের রানিগঞ্জে ইসিএলের শ্রীপুরের খনি আবাসনে থাকতেন। পরিবারে তার স্ত্রী ছাড়াও দুই মেয়ে আছেন। এদিন সকালে যখন সেই আবাসনে যায় সিবিআইয়ের দল, তখন তিনি ছিলেন না।
তিনি ছিলেন নিজের কর্মস্থল কুনুস্তোরিয়ার জিএম অফিসে ছিলেন। জানা যায়, সিবিআইয়ের দল তার আবাসনে তল্লাশি শুরু করে প্রাথমিক ভাবে। এরপর সিবিআইয়ের অফিসাররা তাকে ফোন করে আবাসনে আসতে বলে। তিনি সঙ্গে সঙ্গে নিজের মোটরবাইকে আবাসনে আসেন। তাকে যখন সিবিআইয়ের অফিসাররা জেরা করছে সেই সময় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। সঙ্গে সঙ্গে ইসিএলের গাড়িতে তাকে আসানসোলের কাল্লায় ইসিএলের সেন্ট্রাল হাসপাতালে নিয়ে আসা।
এমারজেন্সি থেকে তাকে আইসিসিইউতে ভর্তি করা হলে কিছুক্ষুন পরে তার মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে হাসপাতালে আসে আসানসোল উত্তর থানার পুলিশ। চলে আসেন পশ্চিম বর্ধমান জেলা তৃনমুল কংগ্রেসের কো-অর্ডিনেটর তথা শাসক দলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি অনুমোদিত কয়লা খাদান শ্রমিক কংগ্রেসের বা কেকেএসসির সাধারণ সম্পাদক হরেরাম সিং। স্বাভাবিক ভাবেই এই ঘটনায় ইসিএলের আধিকারিক ও কর্মীদের মধ্যে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে।
পরিবারের তরফে এই ঘটনা নিয়ে কিছু বলা হয়নি
হরেরাম সিং বলেন, মৃত আধিকারিক সংগঠনের সদস্য ছিলেন। তার মৃত্যু একটা এক্সিডেন্ট বা অস্বাভাবিক মৃত্যু। এক্ষেত্রে তার স্ত্রীকে চাকরি ও যা যা ক্ষতি পূরণ পাওয়ার কথা তা দিতে আমরা ইসিএলের কাছে দাবি করেছি। ইসিএলের তরফে তা দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, সামনে রাজ্য বিধান সভা নির্বাচন। তার আগে কেন্দ্র সরকার ও বিজেপি সিবিআইয়ের মতো কেন্দ্রীয় সংস্থাকে দিয়ে ভয় দেখাচ্ছে। আমি রাজ্যের মন্ত্রী মলয় ঘটক ও জেলা সভাপতি জিতেন্দ্র তেওয়ারিকে বলেছি। আমরা পরে বৈঠকে বসে কি করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা করবো।
তবে মৃত আধিকারিকের পরিবারের তরফে এই ঘটনা নিয়ে কিছু বলা হয়নি।
কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি
অন্যদিকে, ইসিএলের সিএমডি টু পিএ তথা টেকনিক্যাল ডিরেক্টর নীলাদ্রি রায় বলেন, আমরা এদিন সকালে ইসিএলের কিছু জায়গায় সিবিআইয়ের দল অভিযান চালায় বলে জানতে পেরেছি। আমাদেরকে কিছু জানানো হয়নি সিবিআইয়ের তরফে। সেই অভিযানে জেরা করার সময় এক সিকিউরিটি আধিকারিকের হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়। জানা গেছে, ইসিএলের আরো ৪ জন সিবিআইয়ের নজরে রয়েছে। যারমধ্যে ২ জন জিএম পর্যায়ের আধিকারিক আছেন। এছাড়াও সিআইএসএফের আধিকারিকরাও সিবিআইয়ের নজরে রয়েছে। এদের আবাসন ও কর্মস্থলে সিবিআই তল্লাশি চালাচ্ছে বলে জানা গেছে। সিবিআই সূত্রে জানা যায়, এখনো পর্যন্ত তল্লাশিতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ নথি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। তবে এখনো পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা হয় নি।