গরু পাচার কান্ড : আসানসোল সিবিআই আদালতে হাজিরা এনামুল হকের
১৪ দিনের জেল হাজতের নির্দেশ বিচারকের
বেঙ্গল মিরর, সৌরদীপ্ত সেনগুপ্ত ও রাজা বন্দোপাধ্যায়, আসানসোল, ১১ ডিসেম্বরঃ দেশজুড়ে শোরগোল ফেলে দেওয়া গরুর চোরাচালান ও পাচার মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত ব্যবসায়ী মহঃ এনামুল হক শুক্রবার সকালে আসানসোলের সিবিআই বিশেষ আদালতে হাজিরা দিয়ে আত্মসমর্পণ করে। তাকে নানা যুক্তি দেখিয়ে সিবিআইয়ের পক্ষ থেকে নিজেদের রিমান্ডে নেওয়ার জন্য বিচারকের কাছে আবেদন জানানো হয়েছিল। কিন্তু দিল্লি হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের একাধিক মামলার নজির টেনে এনামুলের আইনজীবীরা সিবিআইয়ের সেই আবেদনের বিরোধিতা করেন। শেষ পর্যন্ত দীর্ঘ শুনানির শেষে সিবিআইয়ের সেই আবেদন খারিজ করে দিয়ে সিবিআই বিশেষ আদালতের বিচারক জয়শ্রী বন্দ্যোপাধ্যায় এনামুলকে ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন।
এদিকে, এদিনই ১০ দিনের জেল হেফাজতের মেয়াদ শেষে আবার আসানসোলের সিবিআই আদালতে তোলা হয় এই মামলার গ্রেফতার হওয়া বিএসএফের কমান্ড্যান্ট সতীশ কুমারকেও। সতীশ কুমারের আইনজীবীরা তার বিরুদ্ধে কোনো তথ্য প্রমাণ সিবিআই এখনো পর্যন্ত পেশ করতে না পারায় তাকে জামিন দেওয়ার আবেদন বিচারকের কাছে করেন। কিন্তু সিবিআইয়ের আইনজীবী বিচারককে বলেন, তারা বেশ কিছু তথ্য সংগ্রহ করেছেন। আরো কিছু তথ্য বিএসএফের কাছ থেকে পেতে আরো ৭ দিনের মতো সময় লাগবে। সেজন্য তাকে জামিন দেওয়া হলে তিনি প্রভাবশালী হওয়ায় বিভিন্নভাবে প্রমাণ লোপাট করতে পারেন, এমন আশঙ্কা রয়েছে । এই কারণে তাকে আবার জেলে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হোক। সিবিআইয়ের সেই আবেদন মেনে সতীশ কুমারের জামিন নাকচ করে ১১ দিনের জেল হাজতের নির্দেশ দেন বিচারক।
শুক্রবার সকাল দশটার সময় এনামুল দুটি অত্যন্ত দামি গাড়িতে করে আসেন আসানসোল আদালতে। সঙ্গে তার আইনজীবীরা ছিলেন। তার মুখে মাস্ক ও একটি চাদর ঢাকা অবস্থায় ছিলো। জানা যায়, আদালত চত্বরে সে একটা চায়ের দোকানে বসে চাও খায়। তখন অবশ্য আদালতের কেউ জানতে পারেনি যে এনামুল হক সেখানেই আছে। এর কিছুক্ষণ পরে সিবিআইয়ের আইনজীবীরা আদালতে পৌঁছান। তারা একমাত্র জানতেন যে, এদিন এনামুল বিচারকের কাছে হাজিরা দিয়ে আত্মসমর্পণ করবে।
স্বাভাবিকভাবেই আদালতে ঢোকার গেটের কাছে এনামুল আসতেই তার সঙ্গে সঙ্গে পেছনে পেছনে সিবিআইয়ের আইনজীবীরা সেখানে ঢুকে পড়ে। সিবিআইয়ের আইনজীবীরা টানা প্রথম পর্যায়ে এক ঘণ্টা ও দ্বিতীয় পর্যায়ে আরো আধঘণ্টা শুনানিতে বারবার দাবি করেন এনামুলকে ১৪ দিনের জন্য তাদের রিমান্ডে দেওয়া হোক। কেননা তার বিরুদ্ধে ১২০/বি ধারায় অপরাধ ও ষড়যন্ত্রের মামলা আছে। তাকে আরো জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন আছে ।
নতুন করে তাকে আর সিবিআই রিমান্ডে চাইতে পারে না
অন্যদিকে এনামুলের আইনজীবী দেশের প্রাক্তন অতিরিক্ত সলিসিটার জেনারেল ফারুক রাজ্জাক প্রশ্ন তুলে বলেন, এনামুলকে গত ৬ নভেম্বর সিবিআই দিল্লিতে গ্রেফতার করে। সেখানে তাকে পরের দিন অর্থাৎ ৭ নভেম্বর দিল্লির সিবিআই আদালতে তোলা হয়। সেখানে তাকে ট্রানজিট রিমান্ডে জন্য একদিনের অন্তর্বর্তী জামিন দেওয়া হয় । কলকাতায় পৌঁছানোর পরে তার করোনা ধরা পড়ে । সে প্রথমে হাসপাতাল ও পরে বাড়িতে ছিল। সেই সময়ে পুরোটাই সিবিআইয়ের হেফাজতে বা তাদের নজরে ছিল। স্বাভাবিকভাবেই নতুন করে তাকে আর সিবিআই রিমান্ডে চাইতে পারে না। রিমান্ড চাইতে হলে প্রথম ১৫ দিনের মধ্যেই চাইতে হতো।
আইনজীবী শেখর কুন্ডু বলেন, ২০১৮ সালে বিএসএফের এক আধিকারিককে ৫০ লক্ষ টাকা সহ গ্রেফতার করা হয়৷ সেই সময় এনামুলকে গ্রেপ্তার করে ৬০ দিনের জন্য জেল হেফাজতে রাখা হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে কোনো নির্দিষ্ট প্রমাণ বা অভিযোগ এখনো পর্যন্ত সিবিআইয়ের কাছে নেই। তাই কোন মতেই তাকে সিবিআই রিমান্ডে নিতে পারেনা। কিন্তু সিবিআইয়ের আইনজীবী রাকেশ কুমার সহ অন্য আইনজীবীরা দাবি করেন তাকে আরো একবার রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চাই। কিন্তু আদালতের বিচারক শেষ পর্যন্ত তাকে ১৪ দিনের জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন ।
অন্যদিকে, সতীশ কুমারের আইনজীবী কুমারজ্যোতি তেওয়ারি বলেন, সতীশ কুমারকে ১৪ দিন সিবিআই রিমান্ডে নিয়ে ও পরে আরো ১০ দিন জেল হাজতে রাখা হয়েছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত কোনো প্রমাণ তার বিরুদ্ধে সিবিআই পেশ করতে পারেনি। স্বাভাবিকভাবেই তাকে জামিন দেওয়া হোক। সিবিআইয়ের পক্ষে অবশ্য আইনজীবীরা দাবি করেন, তাদের কাছে বিএসএফ ও কাস্টমসের বেশকিছু তথ্য প্রমান পত্র এসেছে । সেগুলো ছাড়াও আরো কিছু নথি আগামী ৭ দিনের মধ্যে তারা পাবেন। স্বাভাবিকভাবেই তাকে এখন যদি জামিন দেওয়া হয় তাহলে সে তার প্রভাব খাটিয়ে সেইসব প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা করবেন।
শেষ পর্যন্ত উভয়পক্ষের সওয়াল জবাব শেষে শুনানিতে বিচারক জয়শ্রী বন্দ্যোপাধ্যায় সতীশ কুমারেরও জামিন নাকচ করে ১১ দিনের জেল হাজতের নির্দেশ দেন। ১১ দিন পরে আবার সতীশ কুমার ও ১৪ দিন পরে এনামুল হককে আসানসোল সিবিআই আদালতে তোলা হবে বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে।