BARABANI-SALANPUR-CHITTARANJANBengali News

লকডাউন নাম দিয়ে লোহার একটি অসাধারন ভাস্কর্য তৈরি করলেন পুলিশ ইন্সপেক্টর

বেঙ্গল মিরর, দেব ভট্টাচার্য,আসানসোল : করোনার সাথে লকডাউন শব্দটা অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে আছে। আর সেই লকডাউন শব্দ টাকে চিরকালীন করে রাখতে একজন পুলিশ ইন্সপেক্টর যিনি নিজে একজন শিল্পীও তার হাতের কাজ অভিনবত্ব এনে এক অনবদ্য ভাস্কর্য উপহার দিলেন। সেই ভাস্কর্যের নাম দিলেন লকডাউন।

সালানপুর থানার ইন্সপেক্টর ইনচার্জ পবিত্র গঙ্গোপাধ্যায় দীর্ঘদিন ধরেই ছবি আঁকা এবং ভাস্কর্য কাজের সাথে যুক্ত। তার একক একাধিক প্রদর্শনীয় রাজ্যে এবং দেশের অন্যত্র হয়েছে। কিন্তু পুলিশে চাকরি করতে আসার পর এসব কাজের জন্য তেমন ভাবে সময় পান না। তবে করোনার সময় মানুষের দুঃখ কষ্ট পাওয়া মানুষের সাথে কথা বলে ,তাদের অসুবিধা শুনে  ভাবনাচিন্তা শুরু করেন  এক অভিনব ভাস্কর্য গড়ার জন্য ।এবং মাত্র তেরো দিনের মধ্যে সালানপুর থানার সামনে লকডাউন নাম দিয়ে লোহার একটি অসাধারন ভাস্কর্য তৈরি করেন। এই শিল্পকর্মটি ফেলে দেওয়া লোহার টুকরো কিংবা পরিত্যক্ত লোহার অংশ কে ওয়েল্ডিং করে দু’একজন স্থানীয় মানুষের সাহায্য নিয়ে অভাবনীয় একটি দৃশ্য প্রায় রচনা করেন তিনি। লোকডাউন শিল্পে দেখা যাচ্ছে একজন মানুষ শুয়ে থাকার পর ওঠার চেষ্টা করছেন। কিন্তু তার পেটের নাভির কাছে একটা তালা আর তার উপরে লোহার শাবল,বেলচা। এসব শ্রমিক মজুরের প্রয়োজন হয় ।সেগুলোই লাগানো হয়েছে স্বাভাবিকের তুলনায় ছোট আকার করে।

 পবিত্র বাবু বলেন  করোনার সময় লকডাউনে লক্ষ্য করে দেখেছি মানুষের যে নিজস্ব  বেঁচে থাকার ভিত্তি তা অনেকটাই হারিয়ে গিয়েছিল। নড়বড়ে হয়েছিল জীবন। সেই সঙ্গে প্রায় প্রতিটি মানুষকেই অনিশ্চয়তা ঘিরে ধরেছিল। আর এটাই আমার প্রথম ভাবনা যে শ্রমিকটি শোয়া থেকে ওঠার চেষ্টা করছে। একটু খাবারের সন্ধানে বাইরে যাবার কথা হয়তো ভাবছে।কিন্তু সে যেতে পারছে না ।কেননা তার পেটে তালা পড়েছে। কেন তালা পড়ল।তার দ্বিতীয় যুক্তিটা হচ্ছে কর্মহীনতা বাড়ল লকডাউনে। আর সেই কর্মহীনতার প্রতীকী রূপ হচ্ছে যেমন লম্বা বেলচা বা শাবল যা শ্রমিকদের হাতে থাকে তা অনেকটাই ছোট হয়ে গেল। এই সঙ্গে সঙ্গে সামগ্রিকভাবেই মানুষ কাজ হারানো শুরু করলো লকডাউনে। এই কর্মহীনতায় আমার এই ভাস্কর্যের তৃতীয় বিষয়।

ফেলে দেওয়ার বিভিন্ন লোহা ইস্পাতের টুকরো দিয়ে একটি ছুটন্ত ঘোড়া তৈরি করেন

 এর আগেও পবিত্রবাবু এই থানার সামনে ফেলে দেওয়ার বিভিন্ন লোহা ইস্পাতের টুকরো দিয়ে একটি ছুটন্ত ঘোড়া তৈরি করেন এবং সেটি এখনো যারা থানার পাশ দিয়ে যাতায়াত করেন তারা দেখে প্রশংসা করেন ।এই ভাস্কর্যের নাম দিয়েছিলেন স্পিড  বা গতি।সসালানপুর থানাতে আসার পর তার মনে হয়েছিল এখানে পানীয় জলের কিছুটা সংকট আছে। সেই সংকট দূর করতে থানা সংলগ্ন এলাকায় তিনি নিজের উদ্যোগে স্থানীয় পুলিশ কর্মী এবং কয়েকজন মানুষকে নিয়ে একটা বড় পুকুর কাটেন। আর সেই পুকুরের জলে কিছু মাছের চারা ছাড়া হয়েছে। পবিত্র বাবু জানান তিনি হয়তো এখানে কিছুদিন চাকরি করার পর অন্যত্র চলে যাবেন ।কিন্তু তার শিল্পকর্ম এমনকি লকডাউনের স্মৃতি সবথেকে যাবে এখানেই।  স্থানীয় একাধিক মানুষ   তার এইসব কাজের সময়ে পাশে এসে দাঁড়ান ।কেউ কেউ যন্ত্রপাতি দিয়ে কেউ কেউ অন্য ভাবে সাহায্য করেছেন বলে তিনি উল্লেখ করেন। এইসব মানুষদের প্রতিও তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *