ASANSOLBengali News

হাওয়ালার মাধ্যমে বিদেশে টাকা গেছে বিচারকের কাছে জানালো সিবিআইয়ের আইনজীবী

জামিন নাকচ,
এবার ১৪ দিনের জন্য জেল হাজতে গরু পাচার মামলায় ধৃত এনামুল হক

বেঙ্গল মিরর, রাজা বন্দোপাধ্যায় ও সৌরদীপ্ত সেনগুপ্ত, আসানসোল, ৬ জানুয়ারিঃ দু’পক্ষের দীর্ঘ সওয়াল-জবাবের পরে এবারেও জামিন পাওয়া হলো না গরু পাচার মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত ধৃত এনামুল হকের। বুধবার সকালে এনামুলকে আসানসোল জেল বা বিশেষ সংশোধনাগার থেকে পুলিশের কড়া পাহারায় আসানসোলে বিশেষ সিবিআই আদালতে আনা হয়। সিবিআইয়ের বিচারক জয়শ্রী বন্দোপাধ্যায়ের এজলাসে সকাল থেকে এনামুল হকের আইনজীবীরা তার জামিনের হয়ে জোর সওয়াল করেন।

enamul haque
enamul haque

তারা বলেন, এতদিন জেলে রেখে ও রিমান্ডে নিয়ে জেরা করে তাদের মক্কেলের কাছ থেকে এমন কিছু সিবিআই পায়নি। যার থেকে প্রমান হয় যে, এনামুল জড়িত রয়েছে। সিবিআই এখনো পর্যন্ত আদালতে এনামুল জড়িত থাকার কোন প্রমাণও জমা দিতে পারেনি। আইনজীবীরা বিভিন্ন মামলার কথা বিচারকের কাছে বলেন। তারা আবেদন করে বলেন, তাদের মক্কেল তদন্তে সব রকম সহযোগিতা করছে ও আগামী দিনেও করবে। তাই তাকে যেকোন শর্তে জামিন দেওয়া হোক।

তারা আরো বলেন, এই মামলায় তাদের মক্কেলের বিরুদ্ধে এমন সব ধারায় মামলা করা হয়েছে, সেগুলো সরকারি কর্মীদের ক্ষেত্রে দেওয়া হয়। তার মক্কেল তো সরকারি কর্মী নয়, এছাড়াও, সিবিআইয়ের অফিসাররা জেরার সময় তার মুখ দিয়ে কিছু লোকের নাম বলানোর জন্য চাপ দিচ্ছেন বা চেষ্টা করছেন। একইভাবে তাদেরকে মক্কেলকে নিয়ে এক শ্রেণির মিডিয়া ট্রায়াল করার চেষ্টা করছে। এমন কিছু বলা বা লেখা হচ্ছে, তাতে এইসব কিছু মামলায় প্রভাব ফেলতে পারে।


অন্যদিকে, তার বিরোধিতায় সিবিআইয়ের আইনজীবী পাল্টা সওয়াল করে বিচারককে বলেন, আমাদের মনে হচ্ছে এনামুলের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাওয়ালার মাধ্যমে বিদেশে পাচার করা হয়েছে। এখনই জামিন দেওয়া হলে, এই মামলার অনেক ক্ষতি হবে। সে যথেষ্টই প্রভাবশালী। সে জামিন পেয়ে বাইরে গেলে সাক্ষীদের প্রভাবিত করবে। প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা করবে। এদিন সওয়ালের সময় সিবিআইয়ের আইনজীবী বিচারকের কাছে একটি ফাইল জমা দেন।

ডায়েরিতে একাধিক প্রভাবশালীত্ব ব্যক্তিদের নাম আছে

বলা হয়, এই ফাইলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ নথি আছে । আগের দিন বিচারককে সিবিআইয়ের আইনজীবী তল্লাশির সময় এনামুল হকের বাড়ি ফিরে পাওয়া একটি ডায়েরি দিয়েছিলেন। সেই ডায়েরিতে একাধিক প্রভাবশালীত্ব ব্যক্তিদের নাম আছে বলে সিবিআই দাবি করেছিলো। যাদেরকে এনামুল তার এই বেআইনি কাজের জন্য মোটা অঙ্কের টাকা দিতো। কোটি কোটি টাকা দেওয়ার কথা বলা আছে এই ডায়েরিতে। সিবিআইয়ের আইনজীবীর দেওয়া ফাইলে কি আছে তা অবশ্য জানা যায় নি। সিবিআইয়ের আইনজীবী বিচারকের কাছে সওয়াল করে বলেন, তার জামিন নাকচ করে জেলে পাঠানো হোক।

পরের শুনানি ২১ জানুয়ারি


শেষ পর্যন্ত দীর্ঘ সওয়াল-জবাবের শেষে বিকাল চারটের পরে বিচারক এনামুল হকের জামিন নাকচ করে ১৪ দিনের জেল হাজতের নির্দেশ দেন। বিচারক বলেছেন, আগামী ২১ জানুয়ারি এনামুল হককে আবার এজলাসে আনতে হবে।
প্রসঙ্গতঃ, গত ২৪ ডিসেম্বর ৫ দিনের সিবিআই রিমান্ড শেষে আসানসোলের সিবিআই আদালতে এনামুলকে তোলা হয়েছিলো। সেদিন আদাালতে ঢোকার মুখে মেজাজ হারিয়ে উত্তেজিত হয়ে এনামূল হক সিবিআই অফিসারদের হুমকি দিয়েছিলো।


তবে সেদিন এনামূলকে সিবিআই আদালতে তোলা হলেও শুনানি হয়নি। আসানসোল আদালতের এক আইনজীবীর মৃত্যুর কারণে শুনানি স্থগিত হয়ে যায়। পরে ৩০ ডিসেম্বর আবার এই মামলার শুনানি হয়েছিলো। সেদিনও সিবিআই আদালতের বিচারক জয়শ্রী বন্দ্যোপাধ্যায় তার জামিন নাকচ করে তাকে জেল হাজতের নির্দেশ দিয়েছিলেন।


এদিন এনামুল হকের জামিনের জন্য সওয়াল করেন দুই আইনজীবী ফারুক রাজ্জাক ও শেখর কুন্ডু। অন্যদিকে সিবিআইয়ের আইনজীবী হিসাবে ছিলেন রাকেশ সিং।
প্রসঙ্গতঃ, গত ১১ ডিসেম্বর এনামূল হক আসানসোলের সিবিআই আদালতে হাজির হয়ে আত্মসমর্পণ করেছিলো। সেদিন সিবিআইয়ের আইনজীবী তাকে রিমান্ডে নেওয়ার জন্য বিচারকের কাছে সওয়াল করেছিলেন। কিন্তু বিচারক সেই আবেদন খারিজ ও জামিন নাকচ করে তাকে ১৪ দিনের জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন ।

এরপর জেল হেফাজতে থাকা এনামূলকে নিজেদের হেফাজতে চেয়ে সিবিআই কলকাতা হাইকোর্টে একটি আবেদন দায়ের করেছিলো। সিবিআইয়ের সেই আবেদনের ভিত্তিতে হাইকোর্টের বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ মামলার রায়ে সিবিআইকে ১৯ ডিসেম্বর থেকে ৫ দিনের রিমান্ডের নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
এখন দেখার পরবর্তীর দিন সিবিআই এনামুল হকের বিরুদ্ধে আর কি কি জমা দেয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *