ধর্ষন করে যুবতীকে খুনের অভিযোগ ঘিরে উত্তপ্ত দূর্গাপুর
থানায় বিক্ষোভ, গ্রেফতার অভিযুক্ত প্রেমিক
বেঙ্গল মিরর, রাজা বন্দোপাধ্যায়, দূর্গাপুর: পশ্চিম বর্ধমান জেলার দূর্গাপুর পুরনিগমের ২৩ নং ওয়ার্ডের নবীনপল্লী এলাকায় শুক্রবার রাতে এক যুবতীকে ধর্ষণ করে খুন করার অভিযোগ উঠলো। এই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত এলাকারই এক যুবক। তার তিন বন্ধুর বিরুদ্ধেও এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। মৃত যুবতীর নাম সন্তোষী বাউরি (১৯)। মৃতার বাড়ি নিউটাউন শিপ থানার কলাবাগান এলাকায়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে গোটা এলাকাৃয় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে।
এলাকাবাসী দোষীর গ্রেপ্তারের দাবিতে শনিবার সকাল থেকে নিউ টাউনশিপ থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখায়। বিক্ষোভে সামিল হন এলাকার বিজেপি ও সিপিএম নেতাও কর্মীরা। পুলিশ বিকালে অভিযুক্ত যুবক মৃতার প্রেমিক রাকেশ বাউরিকে গ্রেপ্তার করলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। ধৃত যুবকের বাবা এলাকার তৃনমুল কংগ্রেসের নেতা বলে পরিচিত। এদিন বিকালে যুবতীর মৃতদেহর ময়নাতদন্ত হয় আসানসোল জেলা হাসপাতালে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঐ যুবতীর সঙ্গে অভিযুক্ত যুবক রাকেশ বাউরির প্রায় ৬ বছরের প্রণয়ের সম্পর্ক ছিলো। দুমাস আগে যুবতী বিয়ে করতে রাজি না হওয়ায় সেই প্রণয়ের সম্পর্কে ইতি পড়ে স্থানীয় ক্লাবের হওয়া একটি সভায়।
মৃতার দিদি মঞ্জুরি বাউরি বলেন, ক্লাবে হওয়া সেই দিনের সভায় রাকেশ আমার বোনকে খুন করার হুমকি দিয়েছিলো । এর পর থেকে আমার বোন রাকেশের সঙ্গে কোন যোগাযোগ রাখতো না । বৃহস্পতিবার রাতে রাকেশ আমার বোনকে ফোন করে একবার তার সঙ্গে দেখা করতে অনুরোধ করেছিলো। সেই মতো শুক্রবার রাতে রাকেশ বোনকে বাড়ি থেকে ডেকে নবীনপল্লী এলাকায় ইন্দিরা আবাসনের এলাকায় নিয়ে যায়। সেখানে রাকেশ ও তার আরো তিন বন্ধু মিলে এই ঘটনা ঘটিয়েছে। আমার ছোটো ভাই ও ভাইপোকে রাকেশের বন্ধু মিঠুন বাউরি রাত ১১ টা নাগাদ ফোন করে সন্তোষীর শরীর খারাপ বলে নবীনপল্লীতে ডেকেছিলো। তার পরেই আমরা বোনের মৃত্যুর কথা জানতে পারি।
মৃতার ভাইপো দীপ বাউরি ও ভাই বিক্রম বাউরি বলেন, মিঠুন ফোন করে ডাকার পরে আমরা ঐ আবাসন এলাকায় গিয়ে দেখি সন্তোষী অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে আছে। তখন সেখানে ছিলো রাকেশ, মিঠুন, অর্জুন সহ আরো এক যুবক। তারা আমাদের বলে সন্তোষীর শরীর অসুস্থ হয়ে গেছে। তারা আমাদেরকে বাড়ি নিয়ে যেতে বলে। কোন কিছু না ভেবে তাদের কথা মতো আমরা সন্তোষীকে সাইকেলে বসিয়ে বাড়ি নিয়ে আসার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু বি-টু এলাকার বাসিন্দারা সন্দেহ করে আমাদের আটকে দেয়। তারা আমাদের বাড়িতে খবর দিতে বলে। ওরাই থানায় খবর দেয়। পরিবারের লোক ও পুলিশ আসে। পরে সন্তোষীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। সেই সুযোগে ঘটনাস্থল থেকে রাকেশ সহ বন্ধুরা পলিয়ে যায়।
এলাকার সিপিএম নেতা রাকেশ শর্মা ও বিজেপি নেতা রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ঐ অভিযুক্ত যুবক ও তার বাবা তৃণমূল কংগ্রেসের নেতাও কর্মী বলে এলাকায় পরিচিত । অভিযুক্ত যুবক রাকেশ যুবতিকে ধর্ষণ করে খুন করার মত জঘন্য কাজ করেছে। আমাদের দাবি, দোষীদের গ্রেপ্তার করে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে পুলিশে।
তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা তথা স্থানীয় কাউন্সিলার দেবব্রত সাঁই বলেন, এই ঘটনায় দোষীদের শাস্তির দাবিতে আমি এলাকার বাসিন্দাদের সকাল থেকে থানার সামনে বসেছিলাম। পুলিশকে দাবি জানিয়ে বলেছিলাম, মূল অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করতে হবে। তা হওয়ার পরেই থানা থেকে এসেছি।কোন রাজনৈতিক দল কি বলছে সেটা বড় ব্যাপার নয়। এই জঘন্য ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে সমস্তরকম আইনি পদক্ষেপ নিতে হবে।
আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসিপি (পূর্ব) অভিষেক গুপ্তা এদিন সন্ধ্যায় বলেন, মৃত যুবতীর সঙ্গে অভিযুক্ত যুবকের দীর্ঘদিনের প্রণয়ের সম্পর্ক ছিলো। ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে যুবতীর শরীরের কোথায় কোনও আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায় নি। ময়নাতদন্তে যুবতীকে খুন করা হয়েছে, এমনটাও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। অনুমান করা হচ্ছে কোনভাবে বিষক্রিয়ায় মৃত্যু হয়েছে তার। অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে ঘটনার তদন্ত শুরু করা হয়েছে।