আসানসোল পুরনিগমের প্রশাসক হিসাবে দায়িত্ব নিলেন অমরনাথ চট্টোপাধ্যায়, উন্নয়ন নিয়ে দিলেন ইঙ্গিতপূর্ণ বার্তা
বেঙ্গল মিরর, রাজা বন্দোপাধ্যায় ও সৌরদীপ্ত সেনগুপ্তআসানসোল, ১১ জানুয়ারিঃ তিন মাসের মধ্যে নতুন পুর প্রশাসক হলো আসানসোল পুরনিগমে। এবার পুরনিগমের বোর্ড অফ এ্যাডমিনিস্ট্রেটারের চেয়ারম্যান বা পুর প্রশাসক হিসাবে দায়িত্ব নিলেন অমরনাথ চট্টোপাধ্যায়। তিনি বিদায়ী পুর বোর্ডের পুর চেয়ারম্যান ছিলেন। এছাড়াও ২০২০ সালের ১৫ অক্টোবর প্রাক্তন মেয়র জিতেন্দ্র তেওয়ারির নেতৃত্ব তৈরী হওয়া পুর প্রশাসক বোর্ডের অন্যতম সদস্য ছিলেন অমরনাথ চট্টোপাধ্যায়।
গত ১৬ ডিসেম্বর নাটকীয়ভাবে পুর প্রশাসকের পদ থেকে ইস্তফা দেন জিতেন্দ্র তেওয়ারি। তারপর সেই পদে কে বসবেন তা নিয়ে, জল্পনা শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত গত শনিবার রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তর অমরনাথ চট্টোপাধ্যায়কে পুর প্রশাসক হিসাবে দায়িত্ব দেয়। সেই দায়িত্ব নিয়েই আসানসোল পুরনিগম এলাকার সামগ্রিক উন্নয়ন নিয়ে ইঙ্গিত পূর্ণ বার্তা দেন নতুন পুর প্রশাসক। যে বার্তা অবশ্যই ছিলো প্রাক্তন পুর প্রশাসক জিতেন্দ্র তেওয়ারি ও আসানসোলের বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় প্রতি মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় উদ্দেশ্যে।
সোমবার সকাল এগারোটা নাগাদ অমরনাথ চট্টোপাধ্যায়ের দায়িত্ব নেওয়া উপলক্ষে তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে আসানসোল সিটি বাসস্ট্যান্ডের সামনে থেকে একটি মিছিল করা হয়। সেই মিছিলের পুরভাগে ছিলেন অমরনাথ চট্টোপাধ্যায় সহ পুর প্রশাসক বোর্ডের অন্যান্য সদস্য, একাধিক প্রাক্তন কাউন্সিলর ও নেতারা। সেই মিছিল পুরনিগমে এসে শেষ হলে, ফুল, মালা ও পটকা ফাটিয়ে পুর প্রশাসককে স্বাগত জানানো হয়।
আনুষ্ঠানিক ভাবে পুর প্রশাসক হিসাবে দায়িত্ব নেওয়ার পরে দুপুরেই নিজের চেম্বারে একটি জরুরী বৈঠক করেন তিনি। সেই
বৈঠকে অন্যান্যদের মধ্যে ছিলেন পুর প্রশাসক বোর্ডের সদস্য অভিজিৎ ঘটক, পূর্ণ শশী রায়, দিব্যেন্দু ভগৎ, তবস্সুম আরা, শ্যাম সোরেন, মির হাসিম, পুর কমিশনার নীতিন সিঙ্গানিয়া, চীফ ইঞ্জিনীয়ার সুকোমল মন্ডল সহ অন্যান্য আধিকারিকরা।
১৬ জানুয়ারি পুরনিগমের পক্ষ থেকে একটি সমন্বয় বৈঠক
সেই বৈঠকের পুর প্রশাসক বলেন, এদিন নতুন দায়িত্ব নেওয়ার পরে প্রাথমিক কিছু আলোচনা করে বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগামী ১৯ জানুয়ারি পুর প্রশাসক বোর্ডের প্রথম বৈঠক হবে। সেখানে আসানসোল পুরনিগম এলাকার সামগ্রিক উন্নয়ন কিভাবে করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা করা হবে। এছাড়াও আগামী ১৬ জানুয়ারি পুরনিগমের পক্ষ থেকে একটি সমন্বয় বৈঠক করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যারা আসানসোল পুরনিগম এলাকার উন্নয়নের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত তাদেরকে ডাকা হবে। বৈঠকে থাকার জন্য রাজ্যের শ্রম ও আইন মন্ত্রী মলয় ঘটক, পশ্চিম বর্ধমান জেলার জেলাশাসক পূর্ণেন্দু কুমার মাজি, আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশ কমিশনার সুকেশ জৈন, আসানসোল দূর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদ বা আড্ডার চেয়ারম্যান তাপস বন্দোপাধ্যায়কে আমন্ত্রণ জানানো হবে।
সেই বৈঠকে আলোচনা করে সবার মত নিয়ে আসানসোলের উন্নয়নের একটা খসড়া তৈরী করা হবে। সামনেই বিধান সভা নির্বাচন। তাই জরুরী ভিত্তিতে যেসব কাজ এখনো হয়নি বা আটকে আছে, সেগুলো দ্রুত শেষ করতে বলা হয়েছে। কোন টাকার প্রয়োজন হলে, তা মন্ত্রী মলয় ঘটকের মাধ্যমে রাজ্য সরকারকে বলা হবে। মুলতঃ, শহর পরিষ্কার রাখতে বেআইনি হোডিং, পার্কিং ও দখলদার তোলা হবে।
সাংসদ স্মার্ট সিটি নিয়ে যে ২০০০ কোটি টাকা দেওয়ার কথা বলেছেন তা ঠিক নয়
জিতেন্দ্র তেওয়ারি সম্পর্কে তিনি বলেন, যতদুর শুনেছি তিনি এখনো তৃণমূল কংগ্রেসে থেকে রাজনীতি করবেন। তাই যদি হয়, তাহলে অবশ্যই আমি প্রয়োজন হলে, আসানসোলের উন্নয়নে তার সাহায্য নেবো। অন্যদিকে, আসানসোলের সাংসদ বাবুল সুপ্রিয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তিনি আসানসোলের জন্য টাকা দেওয়ার কথা বলছেন। আমার এখনো জানা নেই, তিনি কত টাকা দিয়েছেন। খোঁজ নিয়ে দেখবো।
তবে তাকে বলবো, তিনি তার সংসদীয় এলাকায় কেন্দ্রীয় সংস্থার যেসব এলাকা আছে, সেখানের উন্নয়নের দিকটা দেখুন। তবে সাংসদ স্মার্ট সিটি নিয়ে যে ২০০০ কোটি টাকা দেওয়ার কথা বলেছেন তা ঠিক নয়। এইখাতে মাত্র ১০০ কোটি টাকা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। যারমধ্যে অর্ধেকটা রাজ্যের। আগামী ২৩ জানুয়ারি নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর ১২৫ তম জন্ম বার্ষিকী। পুর প্রশাসক বলেন, আসানসোল পুরনিগমের তরফে নেতাজির একটি মূর্তি বসানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।