নিজের অপহরণের গল্প ফেঁদেও শেষ রক্ষা হলোনা, ঝাড়খণ্ডের মামার বাড়ি থেকে উদ্ধার চিত্তরঞ্জনের যুবক
নেওয়া হলো গোপন জবানবন্দি, বাবার কাছে ফিরিয়ে দিতে পুলিশকে নির্দেশ
বেঙ্গল মিরর, রাজা বন্দোপাধ্যায়, আসানসোল, ১৪ জানুয়ারিঃ প্রায় ভোর রাত নাগাদ ঝাড়খণ্ডের নিরসা থানার একটি গ্রামে অভিযান চালিয়ে আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের চিত্তরঞ্জন থানার পুলিশ উদ্ধার করে নিয়ে এলো নিখোঁজ হয়ে যাওয়া এক যুবককে।
আর নিখোঁজ হওয়ার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই অন্য রাজ্য থেকে ঐ যুবককে উদ্ধার হওয়ার মধ্য দিয়ে ফাঁস হয়ে গেল যুবকের নিজেকে অপহরণের করার গল্প ।
১৪ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার ভোর পাঁচটা নাগাদ চিত্তরঞ্জন থানায় নিয়ে আসা হয় মুকেশ চক্রবর্তী নামের ঐ যুবককে। পরে সকালে তাকে আসানসোল আদালতে তোলা হলে, বিচারক ঐ যুবককে বাবার কাছে ফিরি দেওয়ার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেন। পাশাপাশি ঘটনার ব্যাপারে পুলিশের তরফে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে গোপন জবানবন্দি দেয় ঐ যুবক।
জানা গেছে, চিত্তরঞ্জন শহরের ৪০ নং স্ট্রিটের ৫ ডি রেল আবাসনের বাসিন্দা মুকেশ চক্রবর্তী (২৬) বুধবার সকাল দশটা নাগাদ কাজে যাচ্ছি বলে নিজের মোটরবাইক নিয়ে বাড়ি থেকে বেরোয়। ঘন্টা দুয়েক পরেই তার বাড়ি ফিরে আসার কথা ছিলো। কিন্তু বিকেল পর্যন্ত মুকেশ বাড়ি না ফেরায় বাড়ির লোক তার মোবাইলে ফোন করেন। সেই সময় তার ফোন বন্ধ পায় বাড়ির লোকেরা।
কিন্তু সন্ধে সাড়ে সাতটা নাগাদ মুকেশ নিজেই তার বাবা রেল কর্মী সন্তোষ চক্রবর্তী ও অন্যদের ফোন করে জানায় আসানসোল যাওয়ার পথে বাইপাস থেকে একটি কালো গাড়িতে করে কয়েকজন এসে তাকে অপহরণ করেছে। তাকে মারধর করে, খেতে না দিয়ে ধানবাদে কোন একটি বাড়িতে আটকে রাখা হয়েছে। অপহরণকারীরা তার কাছ থেকে ১০ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ চেয়েছে বলেও সে জানায়।
মারকুড়া গ্রাম থেকে মুকেশকে উদ্ধার করে চিত্তরঞ্জন থানার পুলিশ
এইসব শুনে মুকেশের বাড়ির লোকেরা স্বাভাবিক ভাবেই দুশ্চিন্তায় পড়েন৷ বুধবার রাতেই তারা গোটা ঘটনার কথা জানিয়ে চিত্তরঞ্জন থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন। এরপরই পুলিশ যুবকের খোঁজ পেতে মোবাইল টাওয়ারের লোকেশান জানার চেষ্টা করে। তা দিয়েই রাত দুটো নাগাদ ঝাড়খণ্ডের নিরসা থানার মারকুড়া গ্রাম থেকে মুকেশকে উদ্ধার করে চিত্তরঞ্জন থানার পুলিশ ।
জানা গেছে, এই গ্রামে মুকেশের বাবা সন্তোষ চক্রবর্তীর মামার বাড়ি। মামা অশোক বন্দোপাধ্যায়ের বাড়ি থেকেই তাকে উদ্ধার করা হয়। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে মত্ত অবস্থায় একটি ঘরে মুকেশ ঘুমিয়েছিলো। পুলিশ নিশ্চিত হয় যে, যার বাড়ি থেকে
তাকে উদ্ধার করা হয়েছে, সেই অশোক বন্দোপাধ্যায় অপহরণের গল্প ফাঁদার বিষয়ে কিছুই জানতেন না। রেলকর্মী বাবার কাছ থেকে টাকা আদায়ের ফন্দি করেই মুকেশ নিজেকে অপহরণের গল্প সাজিয়েছিল বলে মনে করছে পুলিশ। মুকেশের বাইকটিও ঐ বাড়িতে রাখা আছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
মুকেশের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, সে ফোন করে অপহৃত হয়েছে বলে নিজেই জানালেও বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রকম কথা বলছিল। কখনো জানায় সে কুলটিতে আছে। কখনো বলে তাকে আসানসোলে রাখা হয়েছে আবার কখনো সে বলে ধানবাদে ও দিল্লিতে আছে। এইসব কথা বলায় প্রথম থেকেই বিষয়টি নিয়ে পুলিশের সন্দেহ দানা বেঁধেছিল।
১০ লক্ষ টাকা মুক্তিপন নেওয়ার গল্প সে কেন ফাঁদলো তা নিয়ে এখনো কিছুটা ধোঁয়াশা
পরিবার সূত্রে পুলিশ আরো জানতে পেরেছে, মুকেশ আগে বন্ধন ব্যাংকে কাজ করলেও কোন কারণে সেই কাজ তার চলে যায়। এরপর সে বাজাজ ফিনান্স কোম্পানিতে কাজ করার কথা বাড়ির লোকেদের বলছিলো। কিন্তু, পরে তারা জানতে পারেন যে, মুকেশ ঐ সংস্থার কর্মীই নয়। তবে সে নিজেকে অপহরণের কথা বলে, ১০ লক্ষ টাকা মুক্তিপন নেওয়ার গল্প সে কেন ফাঁদলো তা নিয়ে এখনো কিছুটা ধোঁয়াশা রয়েছে।
মুকেশের বাবা রেলকর্মী সন্তোষ চক্রবর্তী বলেন, কিছুই বুঝতে পারছি না। ছেলে কেন এমন করলো?
আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশের ডিসিপি (পশ্চিম) বিশ্বজিৎ মাহাতো এদিন বলেন, চিত্তরঞ্জনের ঐ যুবক নিজেই নিজেকে অপহরণ করা হয়েছে বলে বাড়িতে ফোন করে বলেছিলো। পুলিশ তাকে মামার কাছে থেকে উদ্ধার করে। আদালতের বিচারক নির্দেশ মতো তাকে বাবার কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে, তার গোপন জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে।