ASANSOLBengali News

গরু পাচারের মামলা : জামিন আটকাতে এনামূল সহ সাতজনের নামে সিবিআইয়ের চার্জশিট পেশ

বেঙ্গল মিরর, রাজা বন্দোপাধ্যায় ও সৌরদীপ্ত সেনগুপ্ত ,
আসানসোল, ৮ ফেব্রুয়ারিঃ
আসানসোলের বিশেষ সিবিআই আদালতে গরু পাচারের মামলায় সোমবার এনামুল হকের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করলো সিবিআই। গরু পাচারের মামলায় ধৃত এনামুল হক সহ ৭ জনের নামে চার্জশিট এদিন বিচারক জয়শ্রী বন্দোপাধ্যায়ের কাছে পেশ করা হয়েছে বলে সিবিআই সূত্রে খবর।

এদিন সিবিআইয়ের পেশ করা চার্জশিট বিচারক জয়শ্রী বন্দ্যোপাধ্যায় গ্রহণ করেন। চার্জশিট পর্যবেক্ষণ করে পরবর্তী শুনানির দিন বিচারক ঠিক করবেন বলে আদালত সূত্রে খবর। প্রসঙ্গতঃ, এই মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত ধৃত এনামুল হক আপাততঃ আসানসোলের বিশেষ সংশোধনাগারে রয়েছে। তাকে আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি আদালতে তোলা হবে। এই মামলার অন্য এক অভিযুক্ত বিএসএফের কম্যান্ড্যান্ট সতীশ কুমার আপাততঃ জামিনে বাইরে আছেন ।

गौ तस्करी CBI चार्जशीट


জানা গেছে এনামূল হক, সতীশ কুমার, গুলাম মুস্তাফা ও আনারুল শেখ সহ আরও তিনজনের নাম রয়েছে সিবিআইয়ের চার্জশিটে। সেই তিনজন হলেন এনামুল হকের স্ত্রী ও সতীশ কুমারের স্ত্রী ও শ্বশুর। এদিন সিবিআই আইনজীবি বিচারকের কাছে আবেদন করে বলেন, চার্জশিটে যাদের নাম রয়েছে যেন তাদের আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।


উল্লেখ্য গত ২০২০ সালের ১১ ডিসেম্বর আসানসোল বিশেষ সিবিআই আদালতে আত্মসমর্পন করেছিল এনামুল হক। তারপর থেকে সে জেল হেপাজতেই রয়েছে। সেইদিন থেকে ধরলে সোমবার পর্যন্ত ৬০ দিন হয়ে গেছে জেলের থাকার মেয়াদ এনামলের। ৬০ দিনের মধ্যে চার্জশিট জমা দেওয়া না হলে আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি এনামুলের জামিন পাওয়া একবারে নিশ্চিত ছিল। সেই জামিন আটকাতেই ঠিক ৬০ দিনের মাথায় আদালতে সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট পেশ করলো সিবিআই।

জানা গেছে মামলাটিকে আর শক্তিশালী করতে আরও বেশ কিছু ধারা যোগ করা হয়েছে। তার মধ্যে আছে ভারতীয় দন্ডবিধির ১২০/ বি, ৪২০, ৭, ১১, ১২, ১৩/২ ও ১৩/১/বি।


সোমবার আসানসোল বিশেষ সিবিআই আদালতে মামলার তদন্তকারী অফিসার সহ ৪ সদস্যের দল আসেন। তারা বিচারকের কাছে চার্জশিট পেশ করেন। গত ৩ ফেব্রুয়ারি এনামলকে আদালতে তোলা হয়েছিল। সেদিন ছিলো তার জেল হেপাজতে থাকার ৫৫ দিন। সেদিন শুনানির শেষে আরো ৭ দিনের জেলা হেপাজতের নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারক।


এনামুল হকের আইনজীবী শেখর কুন্ডু তার জামিনের হয়ে বিগত দিনগুলোতে জোর সওয়াল করেছেন। তার দাবি ছিলো, আমার মক্কেল সবমিলিয়ে ৮৪ দিন সিবিআইয়ের কন্ট্রাক্টে রয়েছে। যারমধ্যে ৫৫ দিন জেলে রয়েছে। তাকে জেরা করে তার বিরুদ্ধে প্রমাণ দেওয়ার মতো কোন তথ্য এখনো সিবিআই আদালতে পেশ করতে পারেনি।

এই মামলায় ২ জনকে ধরা হয়েছে। আরো ২ জনের নামে ওয়ারেন্ট জারি হয়েছে। সেই দুজনের নামে অন্য মামলাও রয়েছে। তারা কোথাও কেউ জানেনা। সিবিআই এখনো পর্যন্ত এমন কোন কিছু যোগাড় করতে পারেনি, যা প্রমান হয় যে, এনামুল গরু পাচারের সঙ্গে জড়িত রয়েছে। তিনি এজলাসে আরো সওয়াল করে বলেন যে, এখানে কোন গরু পাচার বা স্মাগলিং হয়নি। যে গরু পাচারের কথা বলা হচ্ছে, তার কোন ভিত্তি নেই। গরু নিলাম করা হয়েছে। সেইসব গরু তো চাঁদ আসেনি। রাস্তা দিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। সেইসব গরু উত্তর প্রদেশ, মধ্য প্রদেশ, বিহার ও ঝাড়খন্ড থেকে এসেছে। সেইসব জায়গায় কাউকে এই মামলায় ধরা হয়নি। আমার মনে হচ্ছে, ঐসব রাজ্য অন্য একটা দলের সরকার আছে বলে, সেখানে কিছু করা হচ্ছে না।

এই পশ্চিমবঙ্গে অন্য একটা রাজনৈতিক দলের সরকার রয়েছে, তাই এই মামলায় এতো তৎপরতা। এমনটা বলা যায় না যে, সিবিআইয়ের উপরে চাপ থাকেনা। শেখরবাবু আবেদন করে বলেছিলেন, তার মক্কেল তদন্তে সব রকম সহযোগিতা করছে ও আগামী দিনেও করবে। তাই তাকে যেকোন শর্তে জামিন দেওয়া হোক। কিন্তু, সোমবার সিবিআইয়ের চার্জশিট পেশ করার পরে শেখরবাবু কিছু বলেননি।


পাশাপাশি এনামুল হকের জামিনের বিরোধিতায় প্রথম থেকেই সিবিআইয়ের আইনজীবী কালিচরন মিশ্র ও রাকেশ সিং বিচারকের কাছে জোর সওয়াল করে আসছেন। তাদের বক্তব্য, এনামুল হককে জামিন দেওয়া হলে, এই মামলার অনেক ক্ষতি হবে। সে যথেষ্টই প্রভাবশালী। সে জামিন পেয়ে বাইরে গেলে সাক্ষীদের প্রভাবিত করব প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা করবে।


এর আগে পর পর দুদিন শুনানির পরে বিচারকের নির্দেশ শেষে যখন এনামুল হককে আদালত থেকে জেলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিলো, তখন পুলিশের ভ্যানে বসে, সে সাংবাদিকদের বলেছিলো , আমি নির্দোষ। আমাকে লাইভ করতে দেওয়া হোক। আধ ঘন্টায় সব বলে দেবো। আমার কাছে সব তথ্য আছে।
প্রসঙ্গতঃ, ২০২০ সালের ১১ ডিসেম্বর এনামূল হক আসানসোলের সিবিআই আদালতে হাজির হয়ে আত্মসমর্পণ করেছিলো। সেদিন সিবিআইয়ের আইনজীবী তাকে রিমান্ডে নেওয়ার জন্য বিচারকের কাছে সওয়াল করেছিলেন। কিন্তু বিচারক সেই আবেদন খারিজ ও জামিন নাকচ করে তাকে ১৪ দিনের জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন ।

এরপর জেল হেফাজতে থাকা এনামূলকে নিজেদের হেফাজতে চেয়ে সিবিআই কলকাতা হাইকোর্টে একটি আবেদন দায়ের করেছিলো। সিবিআইয়ের সেই আবেদনের ভিত্তিতে হাইকোর্টের বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ মামলার রায়ে সিবিআইকে ১৯ ডিসেম্বর থেকে ৫ দিনের রিমান্ডের নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন।


তবে এদিনের চার্জশিট পেশ করার পরে একটা জিনিস পরিষ্কার যে, গরু পাচারের মামলায় সিবিআই এনামুল হককে জেলে রাখতে বদ্ধপরিকর। সে যাতে কোনভাবেই জামিন না পায় তারজন্য কোমর বেঁধে নেমেছে সিবিআই ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *