ASANSOL

মামলার তদন্তভার কি সিবিআইকে দেওয়া দরকার: হাইকোর্ট

পুলিশি তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন, সিবিআইয়ের তদন্তের দাবি: কল্যাণ চক্রবর্তী

মামলায় জটিলতা সৃষ্টি করে পুলিশ ভূমি মাফিয়াদের সহযোগিতা করছে

বেঙ্গল মিরর, কলকাতা, সৌরদীপ্ত সেনগুপ্ত :
কলকাতা হাইকোর্টে দায়ের করা একটি আবেদনে অভিযোগকারীর ভাই সঞ্জয় পাটোডিয়া তদন্তে গাফিলতি ও নিজেকে হয়রানির জন্য শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের নিউ জলপাইগুড়ি থানার ও রাজ্য প্রশাসনের বিভিন্ন আধিকারিককে অভিযুক্ত করে কলকাতা হাইকোর্টে একটি আবেদনের মাধ্যমে সিবিআই তদন্তের দাবি করেছেন।
কলকাতা হাইকোর্ট উক্ত বিষয়টি অবহিত করে রাজ্য সরকারের কাছে জবাব চেয়ে বলেন কেন এই মামলাকে সিবিআই এর হাতে দেওয়া উচিত নয় তা আদালতে হাজির হয়ে দু’সপ্তাহের মধ্যে হলফনামা জমা দিতে হবে।

এ প্রসঙ্গে মনোজ পাটোডিয়া এবং কলকাতা হাইকোর্টের প্রবীণ আইনজীবী কল্যাণ কুমার চক্রবর্তী বলেন যে মনোজ পাটোডিয়া এবং তার ভাই রাজ্য সরকার ও নিউ জলপাইগুড়ি থানা এবং স্থানীয় পুলিশ কমিশনারের সামনে বেশ কয়েকটি অভিযোগ করেন।


ভূমি মাফিয়ার চাপে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি এবং ভূমি মাফিয়া জমি অবৈধভাবে দখলের জন্য ছেড়ে রাখা হয়েছিল। এর বিরুদ্ধে ৮৩০৫-২০২০-এ মনোজ পাটোডিয়ার দ্বারা মাননীয় কলকাতা হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করা হয়েছিল।
ভূমি মাফিয়ার চাপে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি এবং ভূমি মাফিয়া যাতে জমিটি অবৈধভাবে দখল করে তার জন্য ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। এর বিরুদ্ধে ৮৩০৫-২০২০-এ মনোজ পাটোডিয়ার দ্বারা মাননীয় কলকাতা হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করা হয়েছিল। এই রিট পিটিশনটি ডাব্লুপিএ ১৭৯/২০২১ করে মাননীয় হাইকোর্ট কর্তৃক সার্কিট বেঞ্চ জলপাইগুড়িতে স্থানান্তরিত করেন।


আইনজীবী কল্যাণ চক্রবর্তী বলেন যে , আবেদনকারীর পিটিশনের বিচারের সময় ২২/০২/২০২১ তারিখে কলিকাতা হাইকোর্টে জুরিসডিকশন হিয়ারিং (ভায়া ভিডিও কনফারেন্স) করেন ডব্লিউ পি এ এর সামনের বেঞ্চে ১৭৯/২০২১ ( মনোজ পাটোডিয়া বনাম পশ্চিমবঙ্গ সরকার)।


আইনজীবী কল্যাণ চক্রবর্তী


এতে প্রবীণ আইনজীবী কল্যাণ কুমার চক্রবর্তী এবং অশোক হালদার তাদের আবেদনকারীর পক্ষে হাজির হয়ে বলেন যে এটি ভারতের সংবিধানের ২২৬ অনুচ্ছেদের অধীনে একটি পিটিশন যেখানে রিট আবেদনকারী নিউ জলপাইগুড়ি পি.এস. ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৪৭/৪৬৫/৪৭৬/৪৬৮/৪২০ / ১২০ বি এর অধীনে ০৮/০৫/২০১৮ তারিখে মামলা নং ৩২৩/২০১৮ কে ভূমি মাফিয়াদের পক্ষ হিসেবে রাখার জন্য পুলিশ প্রশাসন কোনও সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। তাই আবেদনকারী হাইকোর্টকে অনুরোধ করেছেন যে ভূমি মাফিয়াদের বিরুদ্ধে পুলিশ প্রশাসন কোনও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না।


একইসঙ্গে মামলাটিকে যেকোনো উপায়ে জটিলতা বাড়িয়ে পুলিশ ভূমি মাফিয়াদের সহায়তা করছে। আদালতকে তাই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা (সিবিআই) বা অন্য কোনও স্বাধীন এজেন্সির কাছে বিষয়টি তদন্তের জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। আইনজীবী কল্যাণ চক্রবর্তী বলেছিলেন যে মামলার শুনানি চলাকালীন হাইকোর্ট রাজ্য সরকারকে আদালতে হাজির হয়ে দুই সপ্তাহের মধ্যে হলফনামা দাখিল করতে বলে।

জেনে রাখা দরকার যে ২০১৪ সাল থেকে কিছু ভূমি মাফিয়া এবং তাদের পুঁজিবাদী সহযোগী বিভিন্ন সময়ে মনোজ পাটোডিয়ার জমি দখল করার চেষ্টা করে। অভিযোগ জমির কিছু অংশ ২০১৮ সালে অবৈধভাবেও দখল করা হয়।

এর পরে ০৭/০৫/২০১৮ তে মনোজ পাটোডিয়া নিউ জলপাইগুড়ি থানায় আইপিসি ধারা ৪৪৭/৪৬৫/৪৬৮/৪২০/১২০ বি অনুযায়ী লিখিত অভিযোগ করেন (কেস নং: ৩২৩/২০১৮ তারিখ ০৮/০৫/২০১৮ )। ওই এফআইআর অনুযায়ী কয়েকজন অভিযুক্ত ব্যক্তিকেও গ্রেপ্তার করা হয়।
তবে তদন্ত চলাকালীন পুলিশ দেখে ভুল কাগজের ভিত্তিতে জোর করে জমি দখল করা হয়েছে। একই সঙ্গে ভূমি মাফিয়ারা জমি দখলের অভিপ্রায় নিয়ে অনেক দলিল প্রস্তুত করে রেখেছিল। একই সঙ্গে এফআইআর-এ নাম থাকা কয়েকজন অভিযুক্ত আগাম জামিনের আবেদন করেন যা জলপাইগুড়ি জেলা
জজ খারিজ করে দেন এবং পরে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে মাননীয় উচ্চ আদালত জামিন মঞ্জুর করেন।


অভিযোগকারী বিভিন্ন সময় অভিযুক্ত ব্যক্তি এবং তাদের অবৈধ সহযোগীদের অবৈধ কার্যক্রম সম্পর্কে এনজেপি থানা এবং অন্যান্য রাজ্যের অধীন বিভিন্ন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেন। তবে পুলিশ আর কোনও পদক্ষেপ নেয়নি। যদিও অভিযোগকারী এ বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে সহকারী পুলিশ কমিশনার সহ পুলিশ কমিশনারকেও যোগাযোগ করেন। তা সত্ত্বেও নিউ জলপাইগুড়ি থানা ভূমি মাফিয়ার বিরুদ্ধে কেউ কোন
পদক্ষেপ নেয়নি।

এদিকে ১০/০৩/২০২০-এ নিউ জলপাইগুড়ি থানায় আবেদনকারীর ভাই সঞ্জয় পাটোডিয়ার অভিযোগ অনুসারে এনজেপি পিএস কেস নং – ২৩৮/২০২০ এর অধীন ৪৬৫/৪৬৮/৪৭১/৪২০/৫০৬/৩৪ ধারা অনুযায়ী মামলা শুরু করা হয় এবং এছাড়াও ২০/০৩/২০২০-তে অভিযোগকারী সঞ্জয় পাটোডিয়া শিলিগুড়ির
পুলিশ কমিশনারের সামনে উপস্থিত হন এবং এর একটি প্রতিলিপি মুখ্যমন্ত্রী এবং অন্যান্য আধিকারিকদের হাতে দেওয়া হয়। একটি বিশেষ তদন্তকারী দল দ্বারা মামলাটি তদন্তের জন্য রাজ্য সরকারের কাছে সমস্ত নথিও জমা দেন আবেদনকারী। বিএল এবং এলআরওর, রাজগঞ্জ এর সরকারি কর্মচারীদের সহযোগিতায়
অভিযুক্ত ব্যক্তিরা কীভাবে কিছু মনগড়া ও কাল্পনিক নথির ভিত্তিতে তাদের নাম নিবন্ধন করল যা অবৈধ এবং অভিযোগকারী এতে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। এর ফলস্বরূপ রেকর্ডে আরো বেশি জমি দৃশ্যমান।

উদাহরণস্বরূপ একটি প্লটে মোট ১.৩২ একর জমির পরিমাণ রয়েছে, তবে সরকারী রেকর্ডে সেটি ১.৬৫ একর। আর এটির জন্য ১০/০৩/২০২০ তারিখে এনজেপি / পিএস কেস নং ২৩৮/২০২o মামলা দায়ের করা হয়েছে । তবে যথাযথ তদন্ত ছাড়াই আই.ও. চার্জশিট জমা দিয়েছেন। চার্জশিট নং ৪১৭ অনুযায়ী ৩০/০৪/২০২০ তারিখে আইপিসির ৩৪১/৩২৩/৫০৬/৩৪ এর অধীনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *