হাতে চাবি পেয়েও এখনো পুনর্বাসন প্রকল্পে পাওয়া নতুন ঘরে তারা যেতে পারছেন না
বেঙ্গল মিরর, দেব ভট্টাচার্য, আসানসোল । ইসিএল কর্তৃপক্ষের ইতিবাচক সদিচ্ছার অভাবে ধসে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির হাতে চাবি পেয়েও এখনো পুনর্বাসন প্রকল্পে পাওয়া নতুন ঘরে তারা যেতে পারছেন না । এই নিয়ে আসানসোল দুর্গাপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের তরফে মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক নিতীন সিংঘানিয়া ইতিমধ্যেই ই সি এলের সাথে বৈঠক করেও সেখান থেকে তেমন কোনো ইতিবাচক সাড়া পাননি বলে জানা গেছে । আসানসোল দুর্গাপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন ছাতিম ডাঙ্গায় ধসে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে যাদের চাবি দেওয়া হয়েছিল তাদের জন্য ঘর গুলো তৈরি হয়ে আছে। কিন্তু আমি শুনেছি আরো কিছু দাবি দাওয়া আছে ওই এলাকার মানুষের ।সেটা ইসিএলের সাথে কথা বলে সমস্যাটা মেটানোর চেষ্টা চলছে।
কিছুদিন আগেই ভয়ঙ্কর ধস হয়ে যাওয়া হরিশপুরের মানুষেরা অথবা প্রায় এক দশক ধরে ভয়ঙ্কর ধসের ফলে জামুড়িয়ার ছাতিম ডাঙ্গার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলি আজও রয়েছেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিভিন্ন জায়গায়। ছাতিম ডাঙ্গার ১৬০ টি পরিবার অস্থায়ী ঘরে , ভাড়া বাড়ি, ইসিএল-এর পরিতক্ত হাসপাতাল ও আবাসন বা ঝুপড়িতে আছেন। জামুরিয়া বিধানসভার অন্তর্গত ১১ নম্বর ওয়ার্ড ছাতিম ডাঙ্গার ১৬০ টি পরিবারের এমনই দুর্দশার ছবি আজও বহাল। এখনকার বাসিন্দা রঘুবীর নুনিয়া বলেন সারাদিনে আধ ঘন্টার মতো জল পাওয়া যায়। বিদ্যুৎ মাঝেমধ্যে ইসিএল দিলে দেয়় না হলে অন্ধকার থেকে যায়। আর যে পরিত্যক্ত হাসপাতলে আমরা থাকি তার ছাদ ভেঙে ভেঙে পড়ছে। যে কোনদি বড় দুর্ঘটনা ঘটবে।
ধসে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্য রঘুবীর নুনিয়া আরো জানান ২০১১ সালে মে মাসে ছাতিমডাঙ্গাতে ভয়ঙ্কর ধস হয়েছিল। এই ধসে চাপা পড়ে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছিল। ওই পাঁচ জন হল সোহানী বর্মা , মুন্নি বর্মা, উত্তম বাউরী, পূর্ণিমা বাউড়ি এবং বৃষ্টি বাউরী ।ধসের জন্য প্রায় ১৪০ টি বাড়ি সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে মাটিতে মিশে যায়। সে সময় প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদেরকে অস্থায়ীভাবে ইসিএলের পরিতক্ত আবাসন, চিকিৎসাকেন্দ্র ইত্যাদি জায়গায় রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিছু মানুষ ঝুপড়ি তৈরি করে বসবাস করতে থাকেন।
কিন্তু দীর্ঘ দশ বছর পার হয়ে গেলেও তাদের সমস্যার সমাধান হয়নি। প্রায় এক দশকের অপেক্ষার পর গত বছর ৮ ডিসেম্বর মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী রানিগঞ্জে প্রশাসনিক সভা থেকে ক্ষতিগ্রস্ত শতাধিক পরিবারের মধ্যে ৫ জনের হাতে আবাসনের চাবি তুলে দেন।ঐ পাঁচজন হলেন অজিত বাউরি, পদ্মা বাউরি, সুরেশ নুনিয়া,পাপ্পু নুনিয়া, রঘুবীর নুনিয়া।ওদের হাতে বিজয়নগর গ্রামে তৈরি হওয়া পুনর্বাসন কেন্দ্রের আবাসনের চাবি দেন। কিন্তু তিন মাস পরেও তাদের জন্য বরাদ্দকৃত ঘর না পাওয়ায় তারা হতাশা ও আতঙ্কে রয়েছেন।
এই ঘর গুলি আসানসোল দুর্গাপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ তৈরি করার কাজ চলছে। ইতিমধ্যেই জামুড়িয়ার বিজয়নগরে ,বারাবনিতে এবং অন্ডালে 1কয়েক হাজার আবাসন তৈরি হয়েছে। এ ডি ডি এর মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক নিতীন সিংঘানিয়া বলেন ২০০৯ এর। ই সি এলের মাস্টার প্লানে এই ক্ষতি গ্রস্থ মানুষদের যাদের ঘর গেছে তাদের ঘর দেয়ার কথা থাকলেও যাদের জমি গেছে বা অন্য কিছু ক্ষতি হয়েছে সেগুলোর কি হবে ।ক্ষতিগ্রস্থদের এমন আরও কিছু দাবির বিষয়ে নিয়ে আমরা তাদের সাথে সর্বশেষ দিন দশেক আগে কথা বলেছি। কিন্তু তাদের কাছ থেকে কোনো ইতিবাচক সাড়া মিলছে না। তিনি বলেন আমাদের সাত হাজার কোটি টাকা দেওয়ার কথা এই প্রকল্পের জন্য ।ই সি এল এখন পর্যন্ত ৫৮০ কোটি টাকা দিয়েছে। যার বেশি খরচ হয়ে গেছে আমাদের পুনর্বাসন প্রকল্প করতে ।আমরা একটা নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মধ্যে আছি। কিভাবে দ্রুত ওদের ঘর দেওয়া যায় তা নিয়েও চেষ্টা চলছে।
এই বিষয়ে ইসিএলের একাধিক আধিকারিক কে বারবার ফোন করা হলেও অনেকেই ফোন ধরেননি। আর বিষয়টি যার দপ্তর সেই ডিরেক্টর প্ল্যানিং জানিয়েছেন তিনি মিটিংয়ে ব্যস্ত আছেন।