ASANSOL

জেলা হাসপাতালে মানবিকতার এক অন্য ছবি

সদ্যজাতর মাকে বাঁচাতে রক্ত দিলেন নার্স

বেঙ্গল মিরর, রাজা বন্দোপাধ্যায়, আসানসোল, ১২ মার্চঃ প্রায়শই শোনা যায়, সরকারি হাসপাতালের নার্সেরা ঠিক মতো কাজ করেন না। তারা রোগী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু সবাই যে তেমনটা নয়, কেউ কেউ এমন আছেন, যারা ডিউটি করার সময় শুধু রোগীদের দেখেন না। সময়ে সময়ে প্রয়োজনে রোগীর জীবন বাঁচাতে পিছপা হন।

এমনটাই শুক্রবার সকালে করে দেখালেন আসানসোল জেলা হাসপাতালের গাইনিক ওয়ার্ডের নার্স প্রীতিকণা চট্টোপাধ্যায়। প্রীতিকণাদেবী ডিউটির মধ্যেই রক্ত দিলেন গাইনিক ওয়ার্ডে ভর্তি সদ্যজাতর মা আশা সিংয়ের জন্য। সকালে আসানসোল জেলা হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কে গিয়ে নার্স রক্ত দান করেন।

ব্লাড ব্যাঙ্কে সেই সময় ছিলেন জেলা হাসপাতালের নার্সিং সুপার (এন এস) সুরভী মুখোপাধ্যায় সহ অন্যান্য নার্সেরা। পরে বিকালে সেই রক্ত রোগীকে দেওয়া হয়। দুপুরে ওয়ার্ডে গিয়ে রোগীর ব্যাপারে খোঁজ খবর নেন জেলা হাসপাতালের সুপার ডাঃ নিখিল চন্দ্র দাস। এদিন আসানসোল জেলা হাসপাতাল মানবিকতার এক অন্য ছবি দেখলো।


হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত ৮ মার্চ প্রসব যন্ত্রনা নিয়ে আসানসোল জেলা হাসপাতালে নেওয়া হন রেল শহর চিত্তরঞ্জনের এরিয়া ৬ র বাসিন্দা আশা সিং ভর্তি হয়েছিলেন। পরের দিন ৯ মার্চ তিনি একটি সন্তানের জন্ম দেন। আশাদেবীকে সেদিন এক ইউনিট রক্ত দেওয়া হয়। কিন্তু সন্তান জন্ম দেওয়ার পরে রোগীর শরীরে হেমারেজ বা রক্তক্ষরণ হয়। যা কমেনি। চিকিৎসক বৃহস্পতিবার সকালে রোগীকে পরীক্ষা করে ও তার শারীরিক অবস্থার কথা ভেবে আরো রক্ত দেওয়ার পরামর্শ দেন। সেই মতো রোগীর নামে রিকিউজেশান ব্লাড ব্যাঙ্কে যায়। কিন্তু এ পজিটিভ (+) রক্ত ব্লাড ব্যাঙ্কে না থাকায়, রোগীকে রক্ত দেওয়া যায়নি। অন্যদিকে, আশা সিংয়ের স্বামী বাইরে কাজ করেন। হাসপাতালে তার সঙ্গে রয়েছে মা। তেমন পরিচিতি না থাকায় রক্ত যোগাড় করা যায়নি।


এদিকে, শুক্রবার সকালে ডিউটি করতে এসে রোগী রক্ত পাওয়ার কথা জানতে পারেন নার্স প্রীতিকণা চট্টোপাধ্যায়। সঙ্গে সঙ্গে তিনি সিদ্ধান্ত নেন ঐ রোগীর জন্য রক্ত দান করবেন। সেই কথা হাসপাতাল কতৃপক্ষকে জানান তিনি। সঙ্গে সঙ্গে প্রীতিকণাদেবীর রক্ত নেওয়ার ব্যবস্থা করে ব্লাড ব্যাঙ্ক কতৃপক্ষ।
পরে প্রীতিকণাদেবী বলেন, আগেও রক্ত দিয়েছি। কিন্তু যখন ডিউটিতে গিয়ে জানতে পারি, কালকে চিকিৎসক লেখার পরেও রোগীকে রক্ত দেওয়া যায়নি। তখন ভাবি, আমার রক্ত তো এ পজিটিভ। আমি তো দিতেই পারি। রোগীর রক্ত দরকার। রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি গেলে, তবেই তো ডিউটির সার্থকতা। প্রীতিকণা চট্টোপাধ্যায় ২০১৯ সালের মার্চ মাসে আসানসোল জেলা হাসপাতালে চাকরি সূত্রে আসেন।
হাসপাতাল সুপার বলেন, নার্সের এই সিদ্ধান্ত খুবই মানব দরদী। আমরা সবাই চাই রোগীর সঙ্গে আমাদের সবার একটা আত্মিক সম্পর্ক তৈরী হোক। নার্সের এই কাজ অবশ্যই সবাইকেই এগিয়ে আসায় অনুপ্রেরণা দেবে।
প্রীতিকণা চট্টোপাধ্যায়ের এমন কাজে তার সহকর্মীরাও খুব খুশি।

News Editor

Mr. Chandan | Senior News Editor Profile Mr. Chandan is a highly respected and seasoned Senior News Editor who brings over two decades (20+ years) of distinguished experience in the print media industry to the Bengal Mirror team. His extensive expertise is instrumental in upholding our commitment to quality, accuracy, and the #ThinkPositive journalistic standard.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *