Bengal Polls : ভিড় দেখে উচ্ছ্বসিত নমোর নতুন স্লোগান, বাকি চারদফার মতদান, দিদি ভাইপো টিকিট কাটান
চার দফার মতদান, টিএমসি হলো খানখান
বেঙ্গল মিরর,, রাজা বন্দোপাধ্যায় ও সৌরদীপ্ত সেনগুপ্ত, আসানসোল, ১৭ এপ্রিলঃ বাংলার নববর্ষের পরে প্রথম বঙ্গে প্রচারে এসে নতুন স্লোগান তুলে তৃণমূল কংগ্রেসের সুপ্রিম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও ভাইপোকে আক্রমণ করে আসানসোলের দলের জনসভা থেকে ভোট চাইলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। শনিবার সকালে আসানসোলের জামুড়িয়ার নিংঘার পরিত্যক্ত এরোড্রাম সংলগ্ন ময়দানের পশ্চিম বর্ধমান জেলার দলের ৯ প্রার্থীর সমর্থনে জনসভা থেকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ” চার দফার মতদান, টিএমসি হলো খানখান” । ” বাকি চার দফার মতদান, দিদি ভাইপো টিকিট কাটান”।




এদিনের সভায় প্রধানমন্ত্রীর আসার কথা ছিলো ঠিক বেলা বারোটার সময়। তার অনেক আগে থেকেই ময়দানে ভিড় জমাতে শুরু করেন জেলার নয়টি বিধান সভা এলাকা থেকে আসা বিজেপির নেতা, কর্মী ও সমর্থকেরা। সাড়ে এগারোটার নাগাদ দিল্লি থেকে বিশেষ বিমানে অন্ডাল বিমানবন্দরে নামেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে থেকে বারোটা বাজার ঠিক ৫ মিনিট আগে চপারে করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আসেন সভাস্থলের ২০০ ফুট দূরে হওয়া অস্থায়ী হেলিপ্যাডে। ১০ মিনিটের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী যখন মঞ্চে উঠেন তখন তাকে হাজার হাজার মহিলা ও পুরুষেরা মোবাইলের ফ্ল্যাশলাইট জ্বেলে ও উলু এবং শঙ্খধ্বনি দিয়ে স্বাগত জানান।
প্রধানমন্ত্রী এদিন বক্তব্য রাখার একবারে শুরু থেকে আক্রমনাত্মক মেজাজে ছিলেন। তিনি বলেন , নববর্ষের পরে এদিন প্রথম বাংলায় সভা করতে এলাম। এখানে যখন বক্তব্য রাখছি, তখন বাংলার মানুষেরা পঞ্চম দফার ভোট খুব ভালো ভাবে দিচ্ছেন। শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে। এর আগে আমি দুবার এসেছি। খারাপ মনে করবেন নাতো। আমি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য বাবুলের জন্য ভোট চাইতে এসেছিলাম। তখন এত লোক ছিলোনা। এবার তো দেখছি চারদিকে শুধু লোকই লোক। আগের কাজের থেকে এখন কাজ অনেক বেশি। নিজের ভোট নিজে দিন। অন্যকে ভোট দিতে বলুন। নিজের স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে দিদি, ও দিদি সম্বোধন করে বলেন, ২ মে হতে অর্ধেক মাস বাকি। আর অর্ধেক ভোট বাকি।
কয়লা ধুলে ময়লা যায়না
কয়লা ধুলে ময়লা যায়না। এবার আসল পরিবর্তন করে সোনার বাংলা গড়তে হবে। কাটমানি নেওয়া বন্ধ করতে হবে। তোলাবাজিকে শুন্য করতে হবে। বিজেপির সরকার বাংলার মানুষের জন্য কাজ করবে। পুলিশ পুলিশের কাজ করবে। আর বিজেপির কার্যকর্তারা আপনাদের সেবা করবে। গত ১০ বছরে দিদির সরকার উন্নয়নের নামে ধোঁকাবাজি করেছে। কেন্দ্র সরকারের আনা ৫ লক্ষ টাকার বিনামূল্যে স্বাস্থ্য প্রকল্পের সুবিধা দেশের অন্য রাজ্য পেলেও, বাংলার মানুষেরা পাননি। কারণ সেটা দিদি আটকে দিয়েছেন। শরনার্থীদের জন্য আনা আইনের বিরোধিতা দিদি করেছেন। কেন্দ্র সরকারের বলত গেলে সব প্রকল্পের বিরোধীতা দিদি করেছেন। ডাবল ইঞ্জিন সরকার হলে এইসব হবেনা। ২ মের পরে বাংলায় ডবল ইঞ্জিনের সরকার হবে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সরাসরি আক্রমণ করে নমো বলেন, দিদির নিজের অহংকার এতো বেশি হয়ে গেছে যে, তার সামনে থাকা সবাইকে ছোট মনে করেন। করোনা নিয়ে দুটো বৈঠক হলো। অন্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা যোগ দিলেও দিদি যোগ দেননি। এখানে কেন্দ্রীয় দল এলে তাদেরকে আটকানো হয়। দিদির চোখে অহংকারের পর্দা পড়ে রয়েছে। দিদির রাজনীতি এখন হিংসার রাজনীতিতে পরিনত হয়েছে। এখানে আসার আগে অত্যাচারিত হওয়া পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বললাম। গত ১০ বছরে কত মা তার ছেলেকে হারিয়েছে। কত বোন তার ভাইকে হারিয়েছে। কুচবিহারে যা হলো, তা তো সবাই জানেন। সেই ঘটনার পরে একটা অডিও টেপ বেরিয়েছে। শুনেছেন নিশ্চয়ই। ৫ জনের দুঃখজনক মৃত্যুর পরেও কেমন রাজনীতি করছে দেখুন। টিএমসির নেতাকে বলা হচ্ছে মৃতদেহ নিয়ে রেলি করার জন্য। দিদি ভোট ব্যাঙ্কের জন্য আর কতদূর যাবেন। দিদির মৃতদেহ নিয়ে রাজনীতি অনেক পুরনো অভ্যাস। গনতন্ত্রের পরোয়া দিদি করেন না।
২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচন কেউ ভুলতে পারবেন। এক তৃতীয়াংশ পঞ্চায়েতে তো প্রার্থীরা মনোনয়ন পত্র জমা দিতে পারেন নি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কথা আছে, ” চিত্ত যেথা ভয় শুন্য ” । কিন্তু দিদির এখানে ” চিত্ত যেথা ভয়ে আক্রান্ত “। এবারের নির্বাচন দিদি ছাপ্পা ভোট করতে পারছেননা। তাই তিনি রেগে যাচ্ছেন। নির্বাচন কমিশনের উপরে চাপ দেওয়া হচ্ছে। সিআরপিফকে আক্রমন করছেন। এবারে আপনার কোন পরিকল্পনা ও ষড়যন্ত্র সফল হবে না। এবার বাংলার মানুষের সবসময়ের জন্য এমন সার্টিফিকেট দিতে চলেছেন। সেটা হলো “ভূতপূর্ব মুখ্যমন্ত্রী ” র সার্টিফিকেট। সেটা নিয়ে ঘুরে বেড়াবেন। দিদির আপনার সবকিছুতে বাংলার সন্দেহ করছেন। তাই তো, ” কিছু নেই তৃণমূলে, সব ভোট পদ্মফুলে।
এদিনের সভায় জেলার ৯ প্রার্থী ছাড়াও ছিলেন আসানসোলের সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়, সাংসদ সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়া ডাঃ সুভাষ সরকার জ্যোতির্ময় মাহাতো সহ অন্যান্যরা। আসানসোলের সভা শেষ করে প্রধানমন্ত্রী একটার পরে চপারে এদিনের দ্বিতীয় সভা করতে উত্তর বঙ্গে উড়ে যান।