চিত্তরঞ্জনে করোনা সংক্রমণ লাগামছাড়া
বেঙ্গল মিরর, দেব ভট্টাচার্য, আসানসোল । চিত্তরঞ্জন রেল শহরে করোনা সংক্রমণ এবার আরো লাগামছাড়া। বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এই শহরে আক্রান্তের সংখ্যা ৯০৪ জন। কেবলমাত্র ২৪ ঘণ্টাতেই আক্রান্তের সংখ্যা নতুন রেকর্ড করলো ১২৭ জন। হাসপাতালে সব মিলিয়ে ভর্তির সংখ্যাও প্রায় একশ। ২৪ ঘন্টায় চিত্তরঞ্জন হাসপাতালে তিনজন করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছে। গত কয়েকদিনে এই শহরে দশজনের বেশি মারা গেলেন ।
রেল কর্তৃপক্ষ দ্রুত বৈদ্যুতিক চুল্লি কাজ শেষ করার উদ্যোগ নিয়েছে। অত্যন্ত উদ্বেগজনক এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য চিত্তরঞ্জন রেল প্রশাসন নানা প্রকার ব্যবস্থা নিচ্ছেন। ইতিমধ্যেই রেল প্রশাসন নির্দেশ জারি করে জানিয়ে দিয়েছে বাইরে থেকে চিত্তরঞ্জনে ঢুকতে হলে অতি অবশ্যই কে জি হাসপাতাল থেকে করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট নিতে হবে। সে তিনি রেলকর্মীই হোন বা আধিকারিক হোন এবং তিনি যদি ব্যক্তিগত ছুটি নিয়ে বা অফিসের কাজে বাইরে যান তবুও শহরে ফিরলে তাকে করোনা নেগেটিভ না হওয়া পর্যন্ত কাজে যোগদান করতে দেওয়া হবে না।
অন্যদিকে রূপনারায়ণপুরেও দুই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। তারমধ্যে ৭০ বছরের এক ব্যক্তি রূপনারায়ণপুর আমডাঙার বাসিন্দা। ভোটের দিন ২৬ এপ্রিল তিনি করোনা পজিটিভ হয়েছিলেন। সনকা কোভিড হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়েছে। চিত্তরঞ্জনের প্রাপ্তন রেলকর্মীর পুত্র উত্তরপ্রদেশে এক বড় বেসরকারি সংস্থায় কাজ করতেন । তিনিও মাত্র তিন দিনে করোনার জ্বরেই মারা যান। সেই খবরও রুপনারায়নপুরে তার বাড়িতে বৃহস্পতিবার এসে পৌঁছয় গোটা পরিবার ভেঙ্গে পড়েছেন। সালানপুরের বিডিও অফিসের প্রধান ইঞ্জিনিয়ার দুই ডোজ টিকা নেওয়ার পরেও করোনা পজিটিভ হলেন বলে জানা গেছে।
চিত্তরঞ্জনের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার তথা মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক পঙ্কজ কুমার বলেন আমরা এই শহরে প্রত্যেকদিন মানুষকে সচেতন করতে মাইকে করে প্রচার করছি। তাছাড়া আমাদের অফিসগুলোতে যত কম সংখ্যক কর্মী নিয়ে কাজ করা যায় তাও শুরু করা হয়েছে। আমাদের কর্মী এবং আধিকারিকদের বলা হয়েছে তারা ব্যক্তিগত ছুটি নিয়ে বা অফিসের কাজে যদি কেউ বাইরে যান শহরে ফিরলে তাদের করোনা নেগেটিভ না হওয়া পর্যন্ত কাজে যোগদান করতে দেয়া হবে না। এনিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে।
চিত্তরঞ্জন শহরে প্রবেশের জন্য তিন নম্বর গেটে যাতায়াতকারীদের অটোমেটিক টেম্পারেচার মাপার জন্য যন্ত্র বসানো হয়েছে। ফলে থার্মাল স্ক্যানিং এর দরকার নেই। কিন্তু শহরে বাস এবং মিনিবাসে করে যে যাত্রীরা আসছেন তাদের অবশ্য তাপমাত্রা ঐ যন্ত্রে পরীক্ষা করা যাচ্ছে না। এছাড়াও আমরা বারবার চিত্তরঞ্জন বাসীর কাছে আবেদন করছি আপনারা সব সময় মাস্ক পরুন এবং দূরত্ব বজায় রাখুন। সরকার করোনার জন্য যেসব নিয়মকানুন চালু করেছে তা অবশ্যই মেনে চলুন আপনার এবং সকলের স্বার্থে। আমাদের রেল হাসপাতালের ৯০ শয্যার কোভিড রোগীর জন্য ব্যবস্থাও করা আছে এবং আক্রান্ত মানুষদের ওষুধ দেয়া হচ্ছে।
যদিও চিত্তরঞ্জন রেলওয়ে মেন্স কংগ্রেস ইউনিয়নের নেতা এবং আই এন টি ইউ সির সাধারণ সম্পাদক ইন্দ্রজিৎ সিংহ বলেন আমরা ইতিমধ্যেই এই কারখানার চিফ পার্সোনাল অফিসার এবং চিফ ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার কে দুটি চিঠি দিয়েছি ।আমরা বলেছি বর্তমানে এখানকার কারখানায় দুটি শিফট চালু আছে। অবিলম্বে তৃতীয়। শিফট চালু করুন যাতে কাজের জায়গায় লোক কম থাকে। অফিসে অবশ্য ইতিমধ্যেই রেল কর্তৃপক্ষ সেটা শুরু করেছেন। কম লোক দিয়ে কাজের ব্যবস্থা করেছেন। এছাড়া আমরা দাবি করছি যেখানে রোগীরা কোভিডের ওষুধ নিচ্ছেন সেই লাইনে দাড়িয়ে সাধারন রোগীরাও থাকছেন । সেজন্য কোভিড রোগীদের জন্য আলাদা কাউন্টার করা হোক এবং আলাদা সময় দেয়া হোক। তাহলে এই রোগ ছড়ানো একটু কমবে।
অন্যদিকে এখানকার সিটু ইউনিয়নের রেলকর্মী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রাজিব গুপ্ত এখন নিজেই করোনা পজিটিভ। তিনি বলেন আমরা দাবি করছি যাতে করোনার যে ফিভার ক্লিনিক সেটা আলাদা জায়গায় করা হোক এবং ওষুধগুলো সেখানেই রোগীদের হাতে দেয়া হোক। তাহলে সাধারন রোগীদের সাথে তাদের সম্পর্ক থাকবে না ।আরেকটি বিষয় আমরা বলেছি ঝাড়খন্ড থেকে। যে কর্মীরা চিত্তরঞ্জন এ কাজ করতে আসেন ওখানে লকডাউন থাকায় তাদের সমস্যা হচ্ছে। সেটাও যাতে ওখানকার সরকারের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া যায় তা দেখতে হবে। এই দুই নেতাই বলেন চিত্তরঞ্জন সংরক্ষিত শহর হওয়া সত্ত্বেও এই রোগ প্রতিদিন ভয়ংকরভাবে ছড়াচ্ছে । কর্তৃপক্ষ কিছু কিছু ব্যবস্থা নিয়েছেন। কিন্তু সাধারণ মানুষকেও সচেতন হতে হবে।