ASANSOLBengali News

দুয়ারে অক্সিজেন, পিছিয়ে পড়া গ্রামে চিকিৎসার ব্যবস্থা করছেন ফুডম্যান চন্দ্রশেখর কুন্ডু

বেঙ্গল মিরর, রাজা বন্দোপাধ্যায়, আসানসোল, ৬ মেঃ আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া এলাকা হলো আসানসোলের পলাশডিহা ও সরাকডিহি। এইসব এলাকার বাসিন্দা বেশীরভাগ মানুষই হলেন পেশায় দিন মজুর। করোনা আবহে সেইসব মানুষেরা এখন বলতে গেলে কাজ হারা। এইসব এলাকায় কোন মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের একমাত্র সম্বল বলতে, তা হলো সরকারি হাসপাতাল। বর্তমান পরিস্থিতিতে এখন সেইসব সরকারি হাসপাতালে রোগী উপচে পড়ছে । এইসব মানুষদের বেশির ভাগের কাছে নেই স্মার্টফোন। অসুস্থ মানুষকে নিয়ে যাওয়ার জন্য যে অ্যাম্বুলেন্স ডাকবে, তার ক্ষমতাও নেই। তাই বেশিরভাগ রোগীকে ঘরেই রাখতে হচ্ছে। এইসব এলাকার মানুষদের জন্য ” দুয়ারে অক্সিজেন সহ চিকিৎসা ” নিয়ে এসেছেন ” ফুডম্যান” বলে পরিচিত চন্দ্রশেখর কুণ্ডু।

বাংলায় অন্য এক খাদ্য আন্দোলনের অন্যতম মুখ হলেন এই চন্দ্রশেখর বাবু। এর আগে দুঃস্থদের জন্য তিনি প্রতিদিন খাবারের জন্য খাদ্য বা ফুড ব্যাঙ্ক তৈরি করেছেন। গত লকডাউনে গরীব ছেলেমেয়েদের জন্য ব্যবস্থা করেছেন পড়াশুনার । আমফানের সময় দিনের পর দিন তিনি রিলিফ নিয়ে পড়েছিলেন সুন্দরবনের মতো জায়গায় । এবার তিনি ও তার বন্ধুরা আসানসোলের প্রান্তিক এলাকায় নিয়ে এলেন দুয়ারে অক্সিজেন । মেডিক্যাল টিম ও অক্সিজেনের ব্যবস্থা করে বাড়িকেই কার্যত আইসোলোশন সেন্টারের চেহারা দিয়েছেন তারা।


পলাশডিহা ও সরাকডিহা গ্রামে চন্দ্রশেখরবাবু ব্যবস্থা করছেন আপাতকালীন চিকিৎসার। দুটি করে গ্রামকে একসঙ্গে করে বিনামূল্যে একটি করে অক্সিজেন সিলিন্ডারের ব্যবস্থা করেছেন তারা। প্রতিটি পরিবারে করোনা মেডিক্যাল কিট পৌঁছেও দেওয়া হয়েছে তাদের তরফে। অক্সিজেন সিলিন্ডার কীভাবে চালাতে হবে তারও হাতে কলমে ট্রেনিং দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয় গ্রামে। ইসিএলের মেডিক্যাল টিমের সাহায্য নিয়ে গ্রামে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়।


কিন্তু কিভাবে শুরু হল এই অক্সিজেন দেওয়ার কাজ ? ফুডম্যান চন্দ্রশেখর কুণ্ডু বলেন, দিল্লির মতো জায়গায় অক্সিজেনের অভাবের কথা শুনে পশ্চিম বর্ধমান জেলায় অক্সিজেন প্ল্যান্ট ও সাপ্লায়ারদের খোঁজে নেমে পড়ি। পানাগড়, ওয়ারিয়া ও রানিগঞ্জে অক্সিজেন প্ল্যান্টের খোঁজ পাওয়া যায়। তারপরেই ফেসবুকে আমার মোবাইল নম্বর পোষ্ট করি। চেষ্টা শুরু হয় অক্সিজেন যেখানে পাওয়া যায় তাদের সঙ্গে যোগাযোগের। এরপর প্রতিদিন ছয়শোরও বেশি ফোন কল আসতে থাকে। রোগীদের প্রেসক্রিপশন দেখে ও কথা বলে উপযুক্ত লোককেই সাপ্লায়ারের ফোন নম্বার দেওয়া শুরু হয়। ইসিএলের সালানপুর এরিয়া মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ শম্পা চট্টোপাধ্যায় বলেন, এখন জ্বর হলে আমরা ধরেই নিচ্ছি করোনা। তারজন্য নির্দিষ্ট ওষুধ রয়েছে। সেই ওষুধের কিট তৈরি করে আমরা বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিয়েছি। পাশাপাশি অক্সিজেন সিলিন্ডার জোগাড় করেছেন চন্দ্রশেখর বাবু। আমরা সেই সিলিন্ডার কিভাবে চালাতে হবে তা হাতেকলমে শিখিয়ে রাখছি। যেন আপাতকালীন অবস্থায় মূর্মূর্ষ রোগীকে বাঁচানো যায়। রোগীর খবর পাওয়ার পরে চন্দ্রশেখর কুণ্ডু, তার সংস্থা ফিড ও আমরা ততক্ষণে গ্রামে পৌঁছে যাবো। তারপর শুরু করে দেবো প্রয়োজনীয় চিকিৎসা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *