ASANSOL

ব্ল্যাক ফাঙ্গাস আতঙ্ক, ওড়িশা ও ঝাড়খণ্ড লাগোয়া জেলাকে সতর্ক থাকার পরামর্শ কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের, মানুষের কপালে চিন্তার ভাঁজ

বেঙ্গল মিরর, সৌরদীপ্ত সেনগুপ্ত : করোনা পরিস্থিতিতে দেশের মানুষ ইতিমধ্যেই নাজেহাল। এরপর নতুন করে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের আতঙ্ক দেশের কয়েকটি রাজ্যে বেড়ে চলার সঙ্গে সঙ্গে চিন্তার ভাঁজ পশ্চিমবঙ্গ সহ সারা দেশের মানুষের কপালে ৷
ওড়িশায় ব্ল্যাক ফাংগাস মহামারীর আকার নিয়েছে। মানুষের আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। রাজ্যে স্ট্রং লক ডাউন ও মেডিকেল সিস্টেমকে যুদ্ধ কালীন তৎপরতায় প্রস্তুত করার নির্দেশ কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের।

এই সংক্রমণকে ইতিমধ্যেই ‘মহামারী’ বলে ঘোষণা করেছে রাজস্থান এবং তেলঙ্গানা সরকার। মহারাষ্ট্রেও ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণে ইতিমধ্যেই ৯০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে দেড় হাজার। বৃহস্পতিবার কেন্দ্রের তরফে স্পষ্ট করে জানানো হয়, ব্ল্যাক ফাঙ্গাসও এখন মহামারীর কারণ হয়ে উঠেছে ৷ রাজ্যগুলিকে বিজ্ঞপ্তি জারি করে জন সাধারণকে সচেতন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ওড়িশা ও ঝাড়খণ্ড লাগোয়া এই রাজ্যের ৫ জেলাকে সতর্ক থাকতে পরামর্শ কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের। প্রয়োজনে ব্ল্যাক ফাংগাস সংক্রমণ প্রতিরোধে আন্ত রাজ্য সীমান্ত সিল করার সিদ্ধান্তে সিল মোহর দিল কেন্দ্রীয় সরকার।

পশ্চিমবঙ্গেও আতঙ্ক বাড়িয়ে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস বা মিউকোরোমাইকোসিসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে ৷ রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর এখনও পর্যন্ত এ রাজ্যে ৫ জনের শরীরে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে ৷

রাজ্যের আক্রান্তদের নিয়ে
গতকালই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন । মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এর ওষুধ দেওয়ার কথা কেন্দ্রের। কিন্তু কেন্দ্র কোনও স্পষ্ট দিশা দিচ্ছে না।

পরিস্থিতির দিকে নজর রেখে দ্রুত ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সংক্রান্ত একটি সরকারি নির্দেশিকা বা গাইডলাইন তৈরির প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে রাজ্য। বাংলায় ৫ জন রোগীর শরীরে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণের খবর জানার পরেই বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকরা।

অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হচ্ছেন যারা :

AIIMS এর বক্তব্য অনুযায়ী, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস রোগী, বেশি মাত্রায় স্টেরয়েড নেন যারা, তাদের ক্ষেত্রে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি ৷ ক্যানসার বা অন্য কোনও জটিল রোগের চিকিৎসা যাদের অনেকদিন ধরে চলছে, তাদেরও এই ছত্রাক রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ৷ পাশাপাশি গুরুতর ভাবে কোভিডে আক্রান্ত, ভেন্টিলেটরে অক্সিজেন সাপোর্টে রয়েছেন, এমন রোগীরাও ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হতে পারেন ৷ নাক দিয়ে অস্বাভাবিক কালো রস বেরনো বা রক্ত বেরনো এই রোগের একটা লক্ষণ ৷ পাশাপাশি মুখে অসাড় ভাব, মুখ খুলতে বা চিবোতে খুব অসুবিধা হচ্ছে, নাক বন্ধ, মাথা ও চোখে প্রচণ্ড যন্ত্রণা, লাল চোখ ৷ ইত্যাদি সবই ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের লক্ষণ ৷

এদিকে কেন্দ্রের পক্ষ থেকে রাজ্যগুলিকে জানিয়ে দেওয়া হয় ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সংক্রান্ত সব খবর জানাতে এবং এরই সঙ্গে আক্রান্তদের তালিকা তৈরি করে রিপোর্ট জমা দিতে ৷

কীভাবে সনাক্ত করা যাবে কালো ছত্রাক?
১. অস্বাভাবিকভাবে কালো স্রাব নিঃসরণ হবে। নাক থেকে রক্ত বার হবে।
২. নিঃশ্বাস নিতে সমস্যা, মাথাব্যাথা,চোখ ব্যাথা, চোখের চারপাশে ফোলাভাব, একটি জিনিসকে দুটি করে দেখার সমস্যা, চোখের লালচে ভাব, দেখতে সমস্যা হওয়া, চোখ বন্ধ করতে ও খুলতে সমস্যা হওয়া।
৩. মুখের অসাড়তা।
৪. কোনও কিছু চিবানো বা মুখ খোলার সময় সমস্যা হওয়া।
৫. নিজেকেই প্রথমে পরীক্ষা করে দেখতে হবে মুখ বা চোখ ফোলা রয়েছে কিনা। চোখ নাক আর মুখের চার ধারে কালো দাগ আছে কিনা। মুখে স্পর্শ করেই ব্যাথা করছে কিনা।
৬. দাঁত আলগা হয়ে যেতে পারে। মাড়ি, নাক ও মুখের ভিতরে কোনও অংশ ফুলে রয়েছে কিনা। টনসিলের দিকেই নজর দেওয়া জরুরি।

ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের লক্ষণ সনাক্ত করতে পারলে কি করতে হবে?

AIIMS এর চিকিৎসকরা জানিয়েছেন এই জাতীয় সমস্যা দেখা দিলেই তাৎক্ষণিক চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। মূলত ইএনটির পরামর্শ নেওয়ার দিকেই জোর দিয়েছেন তাঁরা।
২. নিয়মিত চিকিৎসা ও ফলোআপ করেত হবে। ডায়াবেটিস রোগীদের নিয়মিত রক্তে পরীক্ষা করতে হবে। পর্যবেক্ষণের রাখতে হবে রক্তে শর্করার পরিমাণ।
৩. নিয়মিত ওষুধ খেতে হবে।
৪. চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া স্টেরয়েড বা অ্যান্টিবায়োটিক না খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *