করোনার সঙ্গে লড়াই করে ৪০ দিন ধরে ডাক্তার সহ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় বৃদ্ধা মাকে বাঁচিয়ে আনল ছেলে
বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, সৌরদীপ্ত সেনগুপ্ত : দিকে-দিকে যেখানে করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন মানুষ, অনেকেই হারাচ্ছেন তাদের প্রিয়জনকে। সেখানে এক বৃদ্ধা মা এর দীর্ঘদিন করোনা আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়ে ওঠার নজীর গড়ে উঠল আসানসোলে। আর সেই মাকে সুস্থ করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টার নিদর্শন দেখা গেল ছেলের। আসানসোলের ২ নম্বর মহিশীলা কলোনির সান ভিউ পার্কের বাসিন্দা প্রায় সত্তর বছর বয়স্ক শ্রীমতি নন্দা চন্দ বহুদিন থেকেই আসানসোল জেলা হাসপাতালের সাথে যুক্ত পালমোনোলজিস্ট ড: অভিরুপ বসাকের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
এব্যাপারে ডক্টর বসাকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, নন্দাদেবী বেশ কিছুদিন ধরেই তার অধীন চিকিৎসাধীন ছিলেন। এরপর হঠাৎ একদিন তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয় এবং শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে তিনি রোগীর করোনা পরীক্ষা করান। করোণা পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ আসার পরেই রোগীর পরিজনেরা বিশেষত তার পুত্র চিরঞ্জিত চন্দ আসানসোলের একটি বেসরকারি হাসপাতালে তার মাকে ভর্তি করান। ১ লা এপ্রিল ভর্তি করার পরের মুহূর্ত থেকেই রোগীর চিকিৎসা শুরু হয়।
এরইমধ্যে নন্দাদেবীর তিনবার করোনা পরীক্ষা করা হয় এবং করোনা রিপোর্ট পজিটিভ আসার পর গত ২৯ শে মে নেগেটিভ আসে। এরপর তিনি রোগীকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যদিও রোগী আগামী কয়েকদিন পর্যবেক্ষণে থাকবেন নন্দাদেবি। যখন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন তখন তার অক্সিজেন স্যাচুরেশন লেভেল অনেকটাই কম ছিল এবং দিনে ১০ থেকে ১৫ লিটার অক্সিজেন দিতে হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে তিনি সুস্থ এবং প্রায় ৯৯ শতাংশ অক্সিজেন স্যাচুরেশন লেভেল মেনটেন করছেন।
এ ব্যাপারে ছেলে চিরঞ্জিত চন্দ বলেন, দিনরাত এক করে ৪০ দিন ধরে হাসপাতালের ডাক্তারদের, নার্সদের সাথে সহযোগিতা করে কোভিড বিধি মেনে তার মাকে বাঁচানোর অভিপ্রায় নিয়ে রোজ মাকে দেখতে গিয়েছেন। এদিকে ওই বেসরকারি স্টার্লিং হাসপাতালের নার্স এবং ডাক্তাররা নন্দা দেবীর প্রতি তার ছেলের এই মাতৃ ভক্তি দেখে অভিভূত। বর্তমানে করোনা পরিস্থিতিতে সমস্ত জড়তা এবং ভয়কে দূরে সরিয়ে তার স্ত্রীও সকাল সন্ধ্যা শাশুড়ি মা কে বাঁচানোর তাগিদে হাসপাতালে ছুটে গিয়েছেন এবং তাঁর পাশে থেকেছেন। হাসপাতালের ডাক্তারবাবু ছাড়াও নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা এতটাই কাছের হয়ে গিয়েছিলেন যে তারা তাকে ” মা” বলেই ডাকতেন। করোনা কে জয় করে
আজ মা কে বাড়ি নিয়ে যেতে পারছি এটাই সবচাইতে আনন্দের বিষয়। ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিজের বাড়ির মত আন্তরিকতা এবং ছেলের মায়ের প্রতি ভালোবাসা, শ্রদ্ধা যে নন্দা দেবীর মনের জোর কে ত্বরান্বিত করে বেঁচে ফিরে আসতে সাহায্য করেছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা।
এছাড়া ছেলে চিরঞ্জিত চন্দ অসংখ্য ধন্যবাদ দেন হাসপাতালের ইনচার্জ ড: প্রসেনজিৎ গোস্বামী, ড: তাপস মুখার্জী, হাসপাতালের সমস্ত ডাক্তার , নার্সিং স্টাফ সহ সমস্ত কর্মী এবং আধিকারিকগণকে।