ASANSOLBengali NewsFEATURED

আক্রান্ত মানুষদের মনোবল বাড়াতে অভিনব কায়দা, এবার কোভিড ওয়ার্ডে পিপিই পড়ে ‘নয়া দামান’র গানে নাচ জেলা হাসপাতালের নার্সের, ভাইরাল ভিডিও

বেঙ্গল মিরর, রাজা বন্দোপাধ্যায়, আসানসোল, ৭ জুনঃ সিলেটি লোকগান ‘নয়া দামান’ এর ঝড় এবার করোনা বা কোভিড ওয়ার্ডেও। পিপিই পড়ে সেই গানের সঙ্গে এক নার্স নাচ করছেন কোভিড ওয়ার্ডে ( Dance In Covid Ward)। নাচের সেই ভিডিও ভাইরাল (Viral Video) হয়েছে ইতিমধ্যেই। খোঁজ করতে গিয়ে জানা যায়, সেটি হলো আসানসোল জেলা হাসপাতালের কোভিড ওয়ার্ড। যিনি পিপিই পড়ে নাচ করেছেন তিনি এই হাসপাতালেরই নার্স। নাম ইন্দ্রানী দত্ত। করোনা দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় বেসামাল গোটা দেশ ও বাংলা। সাধারণ মানুষেরা আতঙ্কিত। এমন একটা দমবন্ধ পরিবেশ থেকে একটু আনন্দ দিতে নাচ করেছেন তিনি। “আইলারে নয়া দামান, আসমানেও তেরা”, শিলেট লোকগীতির এই নাচ ইতিমধ্যেই নেটিজেনদের মন কেড়েছে। প্রশংসা কুড়াচ্ছেন আসানসোল জেলা হাসপাতালের নার্স ইন্দ্রানী। তার এই নাচে কোন দোষ দেখছেন না জেলা হাসপাতালের নার্সিং সুপারিন্টেন্ডেন্ট সুরভী মুখোপাধ্যায়।


প্রসঙ্গতঃ, গত বছর মুম্বাইয়ের চিকিৎসক রিচা নেগির নাচ ভাইরাল হয়েছিল। ” হাই গরমি গানে ” কোভিড ওয়ার্ডেই পিপিই পড়ে নাচ করেছিলেন তিনি। দেশজুড়ে সেই নাচের ভিডিও প্রথম ভাইরাল হয়। আসানসোলের ইন্দ্রানীর নাচও খানিকটা সেইরকম ভাবেই রেকর্ড হয়েছে। টেবিলে মোবাইল ফোন রেখে গান বাজিয়ে সেলফি মোডে নিজেই রেকর্ড করেছেন ইন্দ্রানী। সিলেটি লোকগান ‘নয়া দামানের’ ২ মিনিট ৯ সেকেন্ডের নাচ ঝড় তুলেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। সেই ভিডিও ভাইরাল হতে শুরু করেছে ইতিমধ্যেই। কোভিড ওয়ার্ডে ডিউটি করার সময়ই তিনি এই পিপিই পরে এই নাচটি করেছিলেন তিনি।


কিন্তু কেন, কিসের থেকে, কিসের জন্য এই নাচের ভাবনা ? সোমবার জেলা হাসপাতালের নার্স ইন্দ্রানী দত্ত বলেন, কোভিড বা করোনা আক্রান্ত রোগীদের আনন্দ দিতে ও এমন একটা দমবন্ধ পরিবেশ থেকে নিজেরাও একটু আনন্দ পেতে এই নাচ । এরমধ্যে আর অন্য কিছু নেই। করোনাকে হারানোর লড়াইয়ে চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থকর্মীরা সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে যুদ্ধ করছেন। অনেকেই কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন। করোনাকে হারিয়ে তারা আবার যুদ্ধে ফিরেছেন। তারমধ্যে সহকর্মীদের হারিয়েছেন অনেকে। তবু ভয় না পেয়ে আবার যুদ্ধে ফিরে এসেছেন। এভাবেই যুদ্ধ ক্ষেত্রে আনন্দ খুঁজে নিয়েছেন তারা। মনের আনন্দে ডিউটিরত ইন্দ্রানীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ এখন গোটা সোশাল মিডিয়ার দুনিয়া।


জেলা হাসপাতালের নার্সিং সুপারিন্টেন্ডেন্ট এদিন বলেন, আগে জানতে পারিনি। আজই জানতে পারলাম যে হাসপাতালের এক নার্স কোভিভ ওয়ার্ডে নেচেছেন। এর মধ্যে কোন খারাপ নেই। করোনা আক্রান্ত যারা ভর্তি রয়েছেন, তাদের কি মানসিক অবস্থা, তা তাদের সঙ্গে যারা আছেন, তারাই জানে। ঐ নার্সের এই কাজে যদি তারা মানসিক জোর পান, তা অনেক ভালো।
স্বাস্থ্যকর্মীদের মতে, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিপর্যস্ত গোটা দেশ। টিকাকরণ প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেলেও বেশ কিছু রাজ্যে বেড়েই চলেছে করোনার সংক্রমণ। মৃতের সংখ্যাটাও এবার কম নয়। সারা দেশ জুড়েই জারি হয়েছে আংশিক বা কার্যত লকডাউন এবং নাইট কার্ফু। পাশাপাশি করোনা আক্রান্তদের গৃহবন্দী থাকার কড়া নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। যারা গুরুতর অসুস্থ তাদের চিকিৎসা চলছে হাসপাতালে। এই কঠিন পরিস্থিতিতে সবচেয়ে খারাপ অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন হাসপাতালে ভর্তি আক্রান্তরা। দিনে দিনে তাদের মনে জোর কমছে। অনেকেই শরীরের সঙ্গে মানসিক ভাবেও ভেঙে পড়েছেন। এই অবস্থায় ‘করোনা যোদ্ধা’ নার্সের অভিনব উপায়কে কুর্নিশ জানিয়েছেন আসানসোলের মানুষেরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *