পরিত্যক্ত কয়লাখনির ১০০ ফুট গভীর থেকে নিখোঁজ যুবকের পচাগলা মৃতদেহ উদ্ধার করলো ইসিএলের মাইনস্ রেসকিউ স্টেশনের দল
বেঙ্গল মিরর, দেব ভট্টাচার্য ও রাজা বন্দোপাধ্যায়, আসানসোল, ২৯ জুনঃ আসানসোল দক্ষিণ থানার কালিপাহাড়ির কাঁটাঘরের বাসিন্দা ২৩ বছরের যুবক হুসেন আনসারি গত সাত দিন ধরে নিখোঁজ ছিলো। মঙ্গলবার দুপুরে এলাকার একটি পরিত্যক্ত কয়লা খনির ১০০ ফুট গভীর থেকে সেই নিখোঁজ যুবকের দেহ উদ্ধার করলো এক বিশেষ পদ্ধতিতে ইসিএলের মাইনস রেসকিউ স্টেশনের বিশেষ উদ্ধারকারী দল। দেহ উদ্ধারের পর পরিবারের লোকেরাও হুসেন আনসারির বাড়ির লোকেরা সেই দেহ সনাক্ত করেন। পরে সেই দেহ সেখান থেকে দেহটি আসানসোল জেলা হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়। যুবকের বাড়ির লোকেরা আসানসোল দক্ষিণ থানায় তার নিখোঁজ সংক্রান্ত একটি অভিযোগ জানিয়েছিলেন এক সপ্তাহ আগে।
পুলিশ রবিবার পরিবার সূত্রে জানতে পারে ঐ এলাকার ঘুসিকের পরিত্যক্ত কয়লা খনির ভেতরে ঐ যুবক নাকি পড়ে গেছে। সেইমতো ইসিএলের আধিকারিকরা আসানসোল দক্ষিণ থানার পুলিশ, মাইন্স রেসকিউ স্টেশনের দলকে সঙ্গে নিয়ে সোমবার সেই পরিত্যক্ত খনির কাছে আসেন। এই খনিটি প্রায় ১০০ ফুট গভীর। খনিতে নামার আগে উদ্ধারকারী দলের প্রয়োজনীয় বাতি খনির ভেতরে নামানো হয়। খনির ভেতরে ৩৫ ফুট যেতে না যেতেই সেটি বারবার নিভে যায়। উদ্ধারকারী দলের সদস্যরা বুঝতে পারেন যে, খনির ভেতরে বিষাক্ত গ্যাস আছে। এইভাবে উদ্ধার কাজ করা যাবে না। তখন উদ্ধারকারী দল সোমবারের মত উদ্ধারকাজ শেষ করেন ।
ইসিএলের সীতারামপুরের মাইনস রেসকিউ স্টেশনের সুপারিনটেনডেন্ট অপূর্ব ঠাকুর নিজেই মঙ্গলবার সকাল দশটার আগেই ঐ পরিত্যক্ত খনির মুখে উদ্ধারকারীর একটি বিশেষ দল নিয়ে পৌছে যান । সেইসঙ্গে লোহার একটি খাঁচা তৈরি করে তিনি নিয়ে আসেন। সেই খাঁচা দেখতে অনেকটা একটি লোহার ওল্টানো টেবিলের মতো। সেই খাঁচার মধ্যে বিশেষ যন্ত্র লাগিয়ে ক্রেনের সাহায্যে সেটিকে নিচে নামানো হয়।
তারপরেই তারা নিশ্চিত হন খনির ভেতরে প্রচুর পরিমাণে কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস রয়েছে । এরপর একাধিকবার ঐ খাঁচাটিতে খনির ভেতরে উঠানো ও নামানো হয় । তারপর দুপুর পৌনে একটা নাগাদ খাঁচাটিতে উদ্ধারকারী দলের দুই অভিজ্ঞ কর্মী জামাল খান ও স্নেহাশীষ দত্ত পিঠে অক্সিজেন সরবরাহ করা ফিল্ম কনটেন্ট ব্রিদিং ইন্সট্রুমেন্ট নামে বিশেষ যন্ত্র নিয়ে খনির ভেতরে পৌঁছান। তারা ১০০ ফুট গভীরে নেমে দেখেন সেখানে নিখোঁজ যুবক হুসেন আনসারির নিথর দেহ পড়ে আছে। তারা খাঁচার নিচের দিকে যে লোহার প্লেট লাগানো আছে তার উপরে সেই দেহ রাখেন। তারপর ধীরে ধীরে ১৫ মিনিটের মধ্যে দুপুর একটা নাগাদ ক্রেনের সাহায্যে তারা উপরে আসেন। ক্রেনটির সঙ্গে দড়ি বেঁধে খাঁচাটিকে যেভাবে খনির নিচে নামানো হয়েছিল, আবার সেইভাবেই উপরে তোলা হয়। দেখা যায় দেহটিতে পচন ধরেছে।
পরে অপূর্ব ঠাকুর বলেন, শুধু এই রাজ্যে নয় এর আগে অসমেও আমরা এর চেয়েও বেশি গভীর খনির ভেতরে উদ্ধারকার্য চালিয়ে সেখানে আটকে থাকা মানুষদের উদ্ধার করেছি। তিনি আরো বলেন, এই খনিটি ১৯৭৩ সালে কয়লাখনি জাতীয়করণের আগে বেসরকারি মালিকানায় চলতো । পরবর্তী সময়ে এই এলাকায় ও খনির ভেতরে অবৈধভাবে কয়লার তোলা হতো। স্থানীয় বাসিন্দাদের কেউ কেউ মনে করেন, হুসেন আনসারি সহ বেশ কয়েকজন এই পরিত্যক্ত খনির ভেতরে গিয়ে হয়তো কয়লা কাটত । আবার কেউ কেউ বলেন হুসেন আনসারি ঐ খনির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় হয়তো পড়ে গিয়ে মারা গেছে। পুরো ঘটনায় পুলিশ তদন্ত করছে বলেও জানা গেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনায় একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা করা হয়েছে।