ASANSOL

ডিআরএম সুমিত সরকার এবং আসানসোল -বিশ্বনাথ মিত্র

লেখক, বিশ্বনাথ মিত্র, শিক্ষক, ইস্টার্ন রেলওয়ে হায়র সেকেন্ডারী স্কুল

সকলের প্রিয় আসানসোলের DIVISIONAL RAILWAY MANAGER সুমিত সরকার মেয়াদ উর্ত্তীণ হবার পর কলকাতায় সদর দপ্তরে বদলি হয়ে চলে যাচ্ছেন ৷ আসানসোল রেল ডিভিশনের সর্বোচ্চ কর্তার দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি মাত্র এই কয়েকবছরে তিনি আসানসোলের সাধারণ মানুষ তথা দুঃস্থ অসহায় মানুষের অতি কাছের হয়ে পড়েছিলেন ৷ ২০১৯ এর মাঝামাঝি আসানসোলে নতুন DRM হিসাবে এসেই শুরু করলেন আসানসোল, মধুপুর যশিডি থেকে অন্ডাল, সিউড়িসহ ডিভিশনের সব রেলওয়ে স্টেশনের সৌন্দর্যায়ন এবং অন্যান্য যাত্রী পরিষেবার ব্যাপক উন্নয়ণ ৷ বিশেষত আসানসোল রেলস্টেশনটি মূলত তাঁর প্রচেষ্টায় ভারতীয় রেলের মানদণ্ডে প্রথম সারিতে স্থান পেল ৷ পাশাপাশি রেলের হেরিটেজ সম্পন্ন স্থানগুলিকে তিনি নতুন করে আরও সংস্করণ করলেন ৷ রেলের পরিত্যক্ত স্ক্যাপ মেটেরিয়াল দিয়ে পরিবেশ বান্ধব একাধিক শিল্পশৈলী স্ট্যাচুসহ পার্ক নির্মাণ করলেন ৷ ট্র্যফিক কলোনির পার্ক হল অনিন্দ্যসুন্দর আমূল সংস্করণে ৷


আসানসোল স্টেশনে রেলের স্ক্র্যাপ যন্ত্রাংশ দিয়ে তৈরি সুন্দর ভাবে সাজানো একটি পার্ক, হাংগিং গার্ডেন, সেলফি পয়েন্ট, স্টেশনের বাইরে দেওয়ালে সুন্দর সুন্দর আঁকা কিছু ছবি,পুরো স্টেশনে হাই স্পীড ওয়াই ফাই এ কানেক্টেড,আর পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা আর আসানসোলের স্টেশন আঙিনায় চায় চুন কোম্পানির দ্বারা নতুন উপায়ে ভারতের প্রথম চায়ের দোকান খুলল ট্রেনের একটি আস্ত কামরা দিয়ে, সুমিতবাবুর উদ্যোগে ৷ সবকিছুর পিছনে রেল ডিভিশনের আধিকারিকসহ কর্মীদের সঙ্গে তাঁর আত্মিক সম্পর্ক কাজ করে গেছে ৷
কোভিড মোকাবিলায় তাঁর অবদান অবিস্মরণীয় ৷ তৈরী করলেন আস্ত এক কোভিড হসপিটাল ৷ দুর্গাপুর থেকে পর্যাপ্ত Oxygen container যাতে জীবন সুরক্ষা নামক গুডস ট্রেনে দিল্লির মুমুর্ষু করোনারোগীদের বেডে পৌঁছে যায়, সব ব্যবস্থা করলেন ৷ এর আগে পরিযায়ী শ্রমিকেরা যখন ক্ষুধার্ত অবস্থায় বাড়ি ফিরছিলেন ট্রেনে করে, সুমিতবাবু তাঁর অফিসারদের নিয়ে তাদের জন্য জল, খাবারের ব্যবস্থা করেন আসানসোল স্টেশনে ৷


সুমিত সরকারের DRM থাকাকালীন প্রায় অধিকাংশ সময়টি-ই অতিবাহিত হয় অতিমারী কোভিড পর্যায়ের ভিতর ৷ লকডাউনে ট্রেন চলাচল সম্পূর্ণ স্তব্ধ ৷ হকার ভবঘুরে ভিখারী ফেরিওয়ালারা গত বছরের মার্চ মাস থেকেই অসহায় হয়ে পড়েছিল ৷ পেটে ক্ষুধা নিয়ে ৷ সুমিত স্যার তাঁর অফিসারদের টিম এবং RPF কে সাথে নিয়ে মাসের পর মাস এইসব অসহায়দের জন্য প্রতিদিন দুপুরে ভরপেট খাবারের আয়োজন করে চললেন ৷ প্রশাসনিক দৃষ্টিভঙ্গী বিচারের ভালমন্দ ছাড়িয়ে মানবতার ইতিহাসকে বিবেকবোধে সম্পৃক্ত করলেন সুদর্শন অমায়িক আদ্যন্ত এই বাঙালি ৷
আসানসোলে আসার পর থেকে সুমিত সরকার বারবার ছুটে গেছেন ঢাকেশ্বরী বৃদ্ধাশ্রমে ৷ তাদের কী কী দরকার তা পূরণ করার চেষ্টা ছাড়াও রেল ডিভিশনের বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মীদের নিয়ে বয়স্ক/বয়স্কা আবাসিকদের চিকিৎসা এবং ঔষধ দেবারও ব্যবস্থা করেছেন ৷ অনাথ এবং অসহায় বালিকা ও মহিলাদের হোম স্বশক্তি হোম এর আবাসিকরা তাঁর সৌজন্যে বাইরে পিকনিক করা কাকে বলে, প্রথম জানল ৷ তাদের একাধিকবার মাটন বিরিয়ানিসহ লাঞ্চ,ডিনার আর দুর্দান্ত জলখাবার খাওয়ানো ছাড়াও পুজোয় আসানসোল ভ্রমণের ব্যবস্থা করেছেন ৷ দিয়েছেন শীতবস্ত্র ৷ করেছেন পড়ার ব্যবস্থা ৷ প্রতিনিয়ত তাদের খোঁজ নিতেন ৷ ছুটে গেছেন মানসিক ও শারীরিক প্রতিবন্ধীদের হোম আশা নিকেতন-এ ৷ রেলপার ডিপুপাড়ায় দক্ষিণা কালীবাড়ি তে তাঁর পিতামাতার স্মরণে ভক্তজনের সেবার্থে সোলার ইলেকট্রিসিটি, পিউরিফাইড ওয়াটার সিসটেম, হ্যান্ড স্যানিটাইজেশন প্রদান করেছেন ৷ বলাবাহুল্য এসবই তাঁর নিজস্ব ব্যয়ে ৷ এই বছরই ডুরাণ্ড কলোনিতে তাঁর প্রচেষ্টায় নির্মিত হয়েছে ‘যোগ এন্ড মেডিটেশন সেন্টার’ ৷

কিন্তু কাহিনি এখানেই শেষ নয় ৷ বিগত ১৬/১৭ মাসে সুমিতবাবু আমার হাতেই অন্তত লক্ষাধিক টাকার রেশন অথবা অর্থ এর সংকুলান করে দিয়েছেন আসানসোল শিল্পাঞ্চলের গরীব মানুষদের সাহাযার্থে ৷ বারংবার স্বতঃস্ফুর্ত ভাবে বলেছেন, কারোর অসুবিধা হলেই তাঁকে inform করতে যেন না ভুলি ৷
সুমিত সরকারের আরও একটি পরিচয়, তিনি একজন সাহিত্যিক ৷ আসানসোলে এই কিছুদিন থাকার ভিতরেই আমাদের সঙ্গে নিয়ে তিনি দু দুটি গ্রন্থ যুগ্মভাবে লিখে ফেললেন ৷ যা প্রকাশিত করে পূর্ব রেল ৷
সুমিত স্যার আসানসোলকে ভালবেসেছেন একজন ভূমিপুত্র রূপেই ৷ তাই দেখা যায়, বিদায় মুহূর্তে তিনি লিখলেন THE HERITAGE ODYSSEY OF ASANSOL DIVISION নামে এক অতি মূল্যবান গ্রন্থ ৷
আসানাসোল শিল্পাঞ্চলসহ ডিভিশনের যাবতীয় হেরিটেজ সম্পন্ন স্থান ওই ইতিহাসকে লিপিবদ্ধ করা আছে ৷ রেল এবং রেল বহির্ভূত পরিমণ্ডলের বাইরেও আসানসোলের প্রতি তাঁর ভালবাসা, অবদান আসানসোলবাসিরা কখনো বিস্মৃত হবেন না ৷

( এই লেখাটি লেখকের ব্য়ক্তিগত মতামত)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *