৫ দিনের মধ্যে ওটিপি না আসা সত্বেও রেলকর্মীর ব্যাংক একাউন্ট থেকে ৯ লক্ষ ২০ হাজার টাকা উধাও, তদন্তে সাইবার ক্রাইম থানা
বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, সৌরদীপ্ত সেনগুপ্ত : আবার শিল্পাঞ্চলে সাইবারক্রাইম হানা। এবার এক রেলকর্মীর স্যালারি ব্যাংক একাউন্ট থেকে কোনো ওটিপি বা ফোন না আসা সত্বেও মাত্র ৫ দিনের মধ্যে ৯ লক্ষ ২০ হাজার টাকা এই রাজ্য এবং ভীন রাজ্যের বিভিন্ন একাউন্টে ট্রান্সফার হয়ে যাওয়ার অভিযোগ করলেন আসানসোলের রেলকর্মী দীপায়ন সরকার।
রেলের আসানসোল ডিভিশনের কর্মী দীপায়ন সরকার আসানসোল কর্পোরেশনের ৪৮ নং ওয়ার্ডের শরৎ পল্লীর বাসিন্দা। তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট রয়েছে আসানসোলের গড়াই রোড সংলগ্ন পিএনবি (পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংক) ব্রাঞ্চে।
দীপায়নবাবু বলেন বেশ কয়েক বছর ধরেই তার এই একাউন্টে মাসিক স্যালারী নিয়মিত ঢুকতো। এরই মধ্যে ইউনাইটেড ব্যাংক পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংকের সাথে মিশে যায় কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের জেরে। সব ঠিকই ছিল কিন্তু তার মোবাইলে লেনদেনের নোটিফিকেশন আসছিল না। তিনি এটিকে যান্ত্রিক হিসেবে ছিলেন এবং ভেবেছিলেন সেটি ঠিক হয়ে যাবে সয়ংক্রিয় উপায়ে। যাই হোক গত ১৪ ই এপ্রিল তার মাসিক স্যালারী একাউন্টে ক্রেডিট হবার পর হঠাৎ তার মোবাইলে নোটিফিকেশন আসে কিন্তু তিনি লক্ষ্য করেন
একাউন্টে প্রায় সাড়ে ৫৮ হাজার টাকা পড়ে আছে।
হতচকিত হয়ে পড়েন তিনি কারণ তার হিসেব অনুযায়ী তার ওই একাউন্টে প্রায় ৯ লক্ষ টাকার বেশি টাকা থাকার কথা। সঙ্গে সঙ্গে তিনি ব্যাংকের সাথে যোগাযোগ করেন। কিন্তু ব্যাংক থেকে বলা হয় তিনি ওটিপি সাহায্যে ইন্টারনেট ব্যাংকিং এর মাধ্যমে বিভিন্ন জায়গায় টাকা পাঠিয়েছেন। কিন্তু এই উত্তরে সন্তুষ্ট হননি তিনি।
যোগাযোগ করেন আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের সাইবার ক্রাইম থানায়। গত ১৬ ই এপ্রিল তিনি অভিযোগ জানান সাইবার সেলে ( ফ্রড রিপোর্ট নং : ২২৫/২১)।
সাইবারক্রাইম থানা তদন্তের আশ্বাস দেন এবং তদন্ত প্রক্রিয়া চলতে থাকে।
এরই মধ্যে তিনি ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে ব্যাংকের ওই শাখার কর্তৃপক্ষ তাকে ব্যাংক স্টেটমেন্ট প্রিন্ট আউট দেন। ওই একাউন্টের স্টেটমেন্ট প্রিন্ট আউট খুঁটিয়ে দেখার পর তিনি লক্ষ করেন গত ১২ ই মার্চ থেকে ১৭ ই মার্চ ২০২১ এর মধ্যে ৫ দিনে বেশ কয়েকটি একাউন্টে বহুবার ১০ হাজার টাকা অথবা কোন বার তার থেকে বেশি রাশির টাকা ট্রান্সফার করা হয়েছে আসানসোল ছাড়াও ভীন জেলায় , এমনকি ভীণ রাজ্য।
মানসিকভাবে বিধ্বস্ত দীপায়নবাবু এবার ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার কে উদ্দেশ্য করে তার অভিযোগ জানান ওই অভিযোগপত্রের মাধ্যমে তিনি লেখেন তিনি কোনো ওটিপি বা ফোন কল পাননি কোনো নম্বর থেকে এবং কাউকে তিনি ওটিপি জানাননি। তিনি ইন্টারনেট ব্যাংকিং ২০০৯ সালে শেষবারের মত লগইন করেছিলেন। ফলে ইন্টারনেট ট্রানজেকশনের দিকটি তিনি সরাসরি অস্বীকার করে প্রত্যাখ্যান করেন। ওই চিঠিতে তিনি ব্যাংকের ত্রুটি বলে ব্যাংক কর্তপক্ষকে দায়ী করেন। যদিও তার কথা অনুযায়ী ব্যাংক কতৃপক্ষ এটি মানতে চাননি।
এই টালবাহানার মাঝেই তিনি ব্যাংকের টোল ফ্রি নম্বরে যোগাযোগ করলেও সদুত্তর ও সহযোগিতা পাননি। শেষমেষ গত ১ লা জুন আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশের সাইবার ক্রাইম থানা আইপিসি ৪১৯/৪২০ এবং ১২০ বি ধারায় মামলা রুজু করে (এফআইআর নম্বর : ১২/২১)। এদিকে মানসিকভাবে বিধ্বস্ত দীপায়ন বাবু জানান বহু কষ্টার্জিত ওই টাকা তার সম্বল ছিল। সেখানে কোন ওটিপি ছাড়া ও লেনদেনের নোটিফিকেশন ছাড়াই এইভাবে ৫ দিনে ৯ লক্ষের ওপর টাকা গায়েব হয়ে যাওয়া অবিশ্বাস্য ব্যাপার যা তিনি কোনোমতেই মেনে নিতে পারছেন না।
স্বাভাবিকভাবেই এই সাইবার ক্রাইমের জাল কত দূর বিস্তৃত সেটি দেখার বিষয়। এরই সঙ্গে মানুষের ব্যাংকে নিশ্চিন্তে টাকা রাখার ভরসা কি প্রশ্নচিহ্নের মুখে পড়ছে? এই কেসের ক্ষেত্রে দ্রুত সাইবার অপরাধীদের ধরার ক্ষেত্রে পুলিশের সাইবার ক্রাইম দপ্তরের তদন্তের দিকে সংবাদ মাধ্যমের নজর থাকবে যাতে দীপায়নবাবুর মত বহু মানুষ যারা প্রতারিত হচ্ছেন তারা সুবিচার পান এবং বরাবরের মতই পুলিশের ওপর আস্থা রাখতে পারেন। এরই সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ব্যাংক কতৃপক্ষের তাদের গ্রাহকের প্রতি সহযোগিতা বিষয়টি যা অতি গুরুত্বপূর্ণ ফলে সেদিকেও নজর থাকবে ওয়াকিবহাল মহলের।