কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশিকার ওপর সহমত পোষণ না করে দক্ষিণবঙ্গের সমস্ত ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্মিলিত বৈঠক আসানসোলে
বেঙ্গল মিরর,আসানসোল, সৌরদীপ্ত সেনগুপ্ত : কলকাতা হাইকোর্টের সিদ্ধান্তের ওপর সহমত পোষণ না করে দক্ষিণবঙ্গের সমস্ত ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের আইনজীবীদের প্রতিনিধিরা সম্মিলিত বৈঠক করলেন আসানসোল ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন হলে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, কলকাতা হাইকোর্টের জুডিশিয়াল সার্ভিসের রেজিস্ট্রার এর কাছ থেকে একটি নির্দেশিকা জারি করে রাজ্যের সমস্ত ডিস্ট্রিক্ট এবং সেশনস জজকে অবহিত করে বলা হয় বাড়ির কাছেই সুবিচার যাতে মানুষ পান এবং প্রশাসনের কাজ আরো প্রশস্ত করার লক্ষ্যে এবার থেকে সিআরপিসি ৪৩৮ নং ধারা এনডিপিএস অ্যাক্ট, পকসো অ্যাক্ট, ইলেকট্রিসিটি এ্যাক্ট, প্রিভেনশন অফ করাপশন অ্যাক্ট অনুযায়ী জামিনের আবেদন বা বেল অ্যাপ্লিকেশন যেগুলি সেশনস জজের শুনানির ক্ষমতা ছিল, এখন থেকে সেই মামলা শুনানির ক্ষমতা দেওয়া হল সাব ডিভিশনাল লেভেলের অ্যাডিশনাল ডিস্ট্রিক্ট সেশনস জজদের যারা এতদিন সিআরপিসি ৪৩৯ নং ধারার মামলাগুলির শুনানি করতেন যা তাদের বিচার করার এক্তিয়ার ছিল। এখন তাদের সেই ক্ষমতা বাড়ানো হল অর্থাৎ মহকুমা আদালতগুলোতে সাব ডিভিশনাল লেভেলের অ্যাডিশনাল ডিস্ট্রিক্ট সেশনস জজদের ক্ষমতা বাড়ানো হল।
আর এই সিদ্ধান্তের ওপর সহমত পোষণ না করে এবার আইনজীবীরা একত্রিত হয়ে মাঠে নামলেন।
এ ব্যাপারে আসানসোল ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন সেক্রেটারি আইনজীবী বাণী কুমার মন্ডল বলেন, এই ব্যাপারে বেশ কিছু আইনগত সমস্যা রয়েছে। আমরা দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলার কোর্টের বার এসোসিয়েশনের প্রতিনিধিদের সাথে আলোচনা করছি।
আসানসোল ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট আইনজীবী রাজেশ তিওয়ারি বলেন,
হাইকোর্টের নতুন নির্দেশ অনুযায়ী বেশ কিছু অ্যাক্ট এর যে সমস্ত মামলাগুলি একমাত্র ডিসট্রিক্ট কোথায় হয় এখন সেগুলি শুনছি সাব ডিভিশনাল কোর্টে চলে যাবে আর এই সিদ্ধান্তের ওপর সহমত পোষণ না করে দক্ষিণ বঙ্গের বিভিন্ন কোর্টের আইনজীবীরা বৈঠক করলেন। আলাপ আলোচনা চলতে থাকবে।
এ ব্যাপারে বর্ষীয়ান আইনজীবী শেখর কুন্ডু রাজস্থান হাইকোর্টের একটি রায়ের উদাহরণ তুলে ধরে বলেন সেখানে স্পষ্ট বলা হয়েছে সাব ডিভিশন লেভেলের অ্যাডিশনাল ডিস্ট্রিক্ট সেশনস জজ কখনই ডিস্ট্রিক্ট সেশনস জজের সমতুল্য ক্ষমতার অধিকারী নন। এছাড়া বাঁকুড়া কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে এনডিপিএস অ্যাক্ট এর একটি মামলার উদাহরণও তিনি তুলে ধরেন। সেখানে বিচারপতি হিমাংশু বসাক এবং অন্যান্য বিচারপতির বক্তব্য অনুযায়ী এনডিপিএস অ্যাক্ট এর মামলা একমাত্র ডিস্ট্রিক্ট সেশনস জজের শুনানির ক্ষমতা রয়েছে। এছাড়া তিনি একারণেই তিনি পৃথক সার্কিট বেঞ্চের দাবি জানান।
আইনজীবী অমিতাভ মুখার্জি বলেন, হাইকোর্টের রেজিস্ট্রারের এই নির্দেশিকা আইনবিরুদ্ধ। এসব করতে হলে সিআরপিসি ৯ নং ধারার আমেন্ডমেন্ট করা দরকার সবার আগে। আমেন্ডমেন্ট ছাড়া এই নোটিফিকেশন অবৈধ। এই সিদ্ধান্তের ফলে ডিস্ট্রিক্ট সেশনস জজ এর মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হবে।
আইনজীবী সুপ্রিয় হাজরা বলেন, হাইকোর্টের এই নোটিফিকেশনের বিরুদ্ধে আমরা একটা প্রতিবাদ করবার প্রস্তুতি নিচ্ছি। ভবিষ্যতে দরকার পড়লে হাইকোর্টে মামলা করা হতে পারে।
এদিন বক্তব্য রাখেন আসানসোল ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট পিপি ইনচার্জ স্বরাজ চ্যাটার্জী, মুনীর বেগ প্রমুখ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন অসিত নায়েক, স্বপন সরকার,পীযুষ কান্তি দাস ছাড়াও অন্যান্য আইনজীবীরা।
ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বাঁকুড়া ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি রূপক ভট্টাচার্য, প্রেসিডেন্ট সুরজিৎ ব্যানার্জি, রথীন কুমার দে, পুরুলিয়া ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট অরুণাভ মহাপাত্র, ভাইস প্রেসিডেন্ট কানন চক্রবর্তী, অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ভোলানাথ সরকার, বর্ধমান ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি সাধন তা, অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি পার্থ হাতি ও অজয় চ্যাটার্জী প্রমুখ।
আসানসোল ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের আইনজীবীদের পক্ষ থেকে ছিলেন প্রেসিডেন্ট রাজেশ তিওয়ারি, সেক্রেটারি বাণী কুমার মন্ডল, সুপ্রিয় হাজরা, মণিপদ্ম ব্যানার্জি, শান্তনু ব্যানার্জি, সনাতন ধারা, অনুপ মুখার্জি, অভিজিৎ রায়, প্রলয় চ্যাটার্জী ও অন্যান্য আইনজীবীরা।
জানা গিয়েছে বৃহস্পতিবার আসানসোলের এই বৈঠক হবার পর আগামী বৃহস্পতিবার বর্ধমান কোর্ট বার এসোসিয়েশনে দক্ষিণবঙ্গের সমস্ত কোর্টের বার এসোসিয়েশনের আরেকটি বৈঠক ডাকা হয়েছে।