Asansol আবার ধস, রাস্তায় ফাটল, ক্ষতিগ্রস্থ ৬০টিরও বেশী বাড়ি, আতঙ্ক, বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পালকে ঘিরে বিক্ষোভ, “গো ব্যাক ” স্লোগান শাসক দলের কর্মীদের
বেঙ্গল মিরর,রাজা বন্দোপাধ্যায় ও দেব ভট্টাচার্য, আসানসোল, ১৩ সেপ্টেম্বরঃ আবার পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোল শিল্পাঞ্চলের কোলিয়ারি এলাকায় ধস। রবিবার রাতে ধসের ঘটনাটি ঘটেছে আসানসোল পুরনিগমের ৮৭ নং ওয়ার্ডের ইসিএলের শ্রীপুর এরিয়ার কালিপাহাড়ি কোলিয়ারির ৩নং এলাকায়। এই এলাকাটি আসানসোল দক্ষিণ বিধান সভা কেন্দ্রের মধ্যে রয়েছে। ধসের কারণে এলাকায় ৬০টিরও বেশী বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যারমধ্যে ৪০টির মতো বাড়ির অবস্থা খুবই খারাপ। গোটা এলাকার রাস্তাঘাটে বড় বড় ফাটল ধরেছে। আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন গোটা এলাকার কয়েকশো মানুষ।




এই এলাকায় সাধারণ মানুষের পাশাপাশি বেশ কয়েকজন ইসিএলের কর্মী ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মী আছেন। অনেকেই ভয়ে রবিবার রাতে খাবার না খেয়ে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে নিরাপদ জায়গায় বসে রাত কাটিয়েছেন। সোমবার সকালে এলাকায় গিয়ে দেখা গেলো রাস্তায়, বাড়ির দেওয়ালে ও উঠোনে সর্বত্র ফাটল ও গর্ত। সেই ফাটল ও গর্ত এতটাই গভীর যে তা দিয়ে মাটির ভেতরের অনেকটাই দেখা যাচ্ছে। কোন বাড়ির জিনিস বাইরে পড়ে রয়েছে। কোন বাড়ির দরজায় তালা দেওয়া।
অভিযোগ, রবিবার রাত দশটা নাগাদ ধসের ঘটনা ঘটলেও, তারপর ১২ ঘন্টারও বেশি সময় পার হয়ে গেলেও, ইসিএলের কোন আধিকারিক ও কর্মীকে এলাকায় দেখা যায় নি। যা নিয়ে এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
এলাকার এক বাসিন্দা যার বাড়ি ধসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেই ইন্দ্রজিৎ বাউরি বলেন, রাত তখন দশটা হবে। সবে বাড়ির লোকেদের সঙ্গে খাবার খেতে বসেছি। আচমকাই শুনতে পাই আওয়াজ। বাড়ির বাইরে বেরিয়ে আসি। ভাবি ভূমিকম্প। পরে দেখি রাস্তায় বড় বড় ফাটল। আস্তে আস্তে আমার বাড়ি ও এলাকা অনেক বাড়িতে ফাটল ধরে। রাতে সবাই আমরা বাড়ির বাইরে ছিলাম। চোখের পাতা এক করতে পারিনি। এলাকার বাসিন্দাদের মতে, কয়লা তোলার পরে মাটির তলায় ফাঁকা অংশ বালি দিয়ে ভরাট না করাতেই এই ধস হচ্ছে।
গোটা ঘটনা গুরুত্ব সহকারে দেখছে পশ্চিম বর্ধমান জেলা প্রশাসন।

তবে সোমবার সকালে ধসের ঘটনার খবর পেয়ে এলাকায় আসানসোল দক্ষিণ বিধান সভা বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল এলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। তাকে ঘিরে বেশকিছু মানুষ বিক্ষোভ দেখান। অভিযোগ তার মধ্যে শাসক দল তৃনমুল কংগ্রেসের কর্মী ছিলেন। তাকে উদ্দেশ্য করে ” গো ব্যাক ” স্লোগানও দেওয়া হয়। বিধায়কের সঙ্গে নিরাপত্তায় কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকায় বড় কিছু ঘটেনি। গোটা ঘটনা ক্ষুব্ধ বিজেপি বিধায়ক বলেন, তৃণমূল কংগ্রেস এখন সবকিছুতেই রাজনীতি করছে। আমি রবিবার রাতেই খবর পেয়েছিলাম যে এলাকায় ধস হয়েছে। রাতেই ভেবেছিলাম আসবো। কিছু এলাকার নেতা ও কর্মীরা আমাকে মানা করে। তাই আজ সকালে এলাম। তারপর তো এই অবস্থা। তিনি বলেন, সেই বাম জমানায় কেন্দ্র সরকার ধস কবলিত এলাকার মানুষের পুনর্বাসনের জন্য টাকা দিয়েছে। কেন এতদিন কিছু করা হয়নি? রাজনীতি করবে বলে তৃনমুল কংগ্রেস এইসব মানুষদের জন্য কিছু করছে না। তারা অপেক্ষা করছে, কখন দূর্ঘটনা ঘটবে, তারপর করবো। আমি ইসিএলের আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলেছি। সবকিছু করতে বলেছি। আমাকে গো ব্যাক বলে কিছু হবেনা।

পরে এলাকায় আসেন আসানসোল পুরনিগমের পুর প্রশাসক অমরনাথ চট্টোপাধ্যায়। তিনি গোটা এলাকা ঘুরে দেখেন ও যেসব বাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, সেই বাড়ির লোকেরদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, কে কবে টাকা দিয়েছে, কেন হয়নি, ঐসব বলে এখন কোন লাভ নেই। এখন এইসব মানুষদের পাশে দাঁড়াতে হবে। ইসিএলের লোকেদের তো সবার আগে এলাকায় আসা উচিত ছিলো। তারা আসেনি। আমাদের সঙ্গে কথাও বলেনি। আসানসোল পুরনিগমের তরফে এলাকার বাসিন্দাদের জন্য কি করা যায়, তা দেখা হচ্ছে। মঙ্গলবার একটা বৈঠক করবো। পুরনিগমের লোক ও দলের লোকেদের ক্ষতিগ্রস্থ মানুষদের তালিকা তৈরী করতে বলেছি।
পশ্চিম বর্ধমান জেলায় জেলা বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের আধিকারিক ( ডিপিআরডিও) তমোজিৎ চক্রবর্তী এদিন বলেন, গোটা ঘটনার কথা জেলাশাসককে জানানো হয়েছে। কথা হয়েছে শ্রীপুর এরিয়ার এজেন্ট মুকেশ কুমার যোশীর সঙ্গেও। তাকে একটি রিপোর্ট দেওয়ার পাশাপাশি, ইসিএলের কি করনীয় তা করতে বলা হয়েছে। পুর প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। পুরনিগম এলাকার বাসিন্দাদের জন্য যতটা করার তা করবে বলে পুর প্রশাসক জানিয়েছেন। এলাকার বাসিন্দাদের অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এলাকায় সিআইএসএফ ও পুলিশ মোতায়েন করতে বলা হয়েছে।
ইসিএলের শ্রীপুর এরিয়া অফিস সূত্রে জানানো হয়েছে, এলাকায় আধিকারিকদের পাঠানো হচ্ছে। কি কারণে এই ধস তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে তারা এলাকার বাসিন্দাদের বালি ভরাট না করার দাবি উড়িয়ে দেননি।
আসানসোলের হোটেলে জুয়া আসর, পুলিশের অভিযানে আটক ১৮ জুয়াড়ি, বাজেয়াপ্ত লক্ষাধিক টাকা