ASANSOL

ইসিএলের সোদপুর এরিয়া অফিসে জয়েন্ট এ্যাকশান ও খনি বাঁচাও কমিটির ধর্ণা বিক্ষোভ

খনি বন্ধ করার চক্রান্তের প্রতিবাদ, জল বার করে কোলিয়ারি চালুর দাবি

বেঙ্গল মিরর, কাজল মিত্র ও রাজা বন্দোপাধ্যায়, আসানসোল, ২০ সেপ্টেম্বরঃ ইসিএলের সোদপুর এরিয়ার নরসমুদা কোলিয়ারি সহ অন্যান্য কোলিয়ারির খনিতে জল ঢুকে যাওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে কয়লা উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে বা বন্ধ রয়েছে ৷ অভিযোগ, কয়লা উৎপাদন বা কয়লা উত্তোলন ব্যাহত হওয়ায় খনি কতৃপক্ষ ও ইসিএল এইসব খনিগুলি বন্ধ করার পরিকল্পনা করেছে ৷ এরফলে এইসব কোলিয়ারির খনি কর্মীদের কর্মচ্যুত হওয়া বা কাজ হারানোর একটা আশঙ্কা রয়েছে ৷ এরই প্রতিবাদে ও এইসব খনি থেকে জল বার করে পূর্ণমাত্রায় উৎপাদন চালু করার দাবিতে সোমবার ইসিএলের সোদপুর এরিয়া অফিসে জয়েন্ট এ্যাকশন কমিটি ও সোদপুর বাঁচাও কমিটির পক্ষ থেকে ধর্ণা বিক্ষোভ করা হয়। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত এই আন্দোলন চলে।



এদিন আন্দোলন করা কমিটির নেতৃত্ব ও খনি শ্রমিকদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, ইসিএল ও খনি কতৃপক্ষ তাদের দাবি যদি না মানে তাহলে, আগামীদিনে অনশন সহ বৃহত্তর আন্দোলন করা হবে।
প্রসঙ্গতঃ, গত তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে জল ঢুকে যাওয়ায় আসানসোলের ইসিএলের নরসুমুদা কোলিয়ারির উৎপাদন সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ঐ কোলিয়ারির ১৪০ জন কর্মীকে অন্য জায়গায় বদলির নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। আর এতেই ক্ষোভে ফুঁসছেন কোলিয়ারির কর্মীরা। তাদের আশঙ্কা, এই বদলির মধ্য দিয়েই কোলিয়ারি কর্মী শুন্য করে দিয়ে আস্তে আস্তে খনিটিকে পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হবে।

ইসিএলের সোদপুর এরিয়ার নরসুমুদা কোলিয়ারি নিয়ে ইতিমধ্যেই ডিরেক্টর জেনারেল অফ মাইন সেফটি বা ডিজিএমএস নির্দেশ জারি করে বলেছে চলতি বছরের আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত কয়লা উত্তোলন বন্ধ থাকবে। কারণ অবৈধ কয়লা খনির সঙ্গে যেভাবে ইসিএলের এই বৈধ কোলিয়ারির ভেতরে ভেতরে সংযোগ হয়েছে, তাতে চাসনালার মত বিপজ্জনক ঘটনা ঘটতে পারে যেকোনো দিন। তাই নিরাপত্তার কথা ভেবে আপাতত বন্ধ রয়েছে এই খনির উৎপাদন। এই কয়লাখনিতে দৈনিক কয়লা উত্তোলন হয় ১৫০ মেট্রিক টনের মতো। তারজন্য দৈনিক লাভ হতো ১ লক্ষ টাকা। এই কয়লা খনি থেকে এখনও কয়লা উত্তোলন করা যাবে সাড়ে ৪ মিলিয়ন টন।
একদিকে কোলিয়ারির কয়লা উত্তোলন বন্ধ, অন্যদিকে খনির কর্মীদের বদলি, এই দুইয়ের মধ্য দিয়ে শতবর্ষ প্রাচীন এই কয়লা খনিটির পুরোপুরি বন্ধের আশঙ্কা দেখছেন শ্রমিক সংগঠনগুলিও।


তারা বলেছেন, এই খনির ভেতরে দিনের পর দিন জলে ডুবে দামি মোটর ও যন্ত্রাংশ নষ্ট হচ্ছে। হাইটেনশন মোটর আনলেই খনির জমা জল বাইরে বার করে আনা সম্ভব। কিন্তু সেই উদ্যোগ নিচ্ছে না খনি কর্তৃপক্ষ বা ইসিএল। তাদের উদ্দেশ্য একটাই, এভাবে খনির উৎপাদন বন্ধ দেখিয়ে ভূগর্ভস্থ খনিটিকে বন্ধ করে দেওয়া। তাদের আরো অভিযোগ, যেভাবে কোলিয়ারি চত্বরে রমরমিয়ে বেআইনি কয়লা খাদান চলছিল সেই সময় রাজ্য পুলিশ ও খনি কর্তৃপক্ষ উপযুক্ত ব্যবস্থা নিলে এই বিপত্তি হতো না। যদিও কোলিয়ারি কতৃপক্ষের মত, কর্মীদের বসিয়ে না রেখে তাদের পাশের খনিতে অস্থায়ীভাবে বদলি করা হচ্ছে। এর মধ্যে অন্য কোনো কারণ নেই। খনি বন্ধ করার আশঙ্কা ভুল।


উল্লেখ্য, গত ১৭ জুন অবৈধ কয়লাখনি দিয়ে জল ঢুকে পড়েছিল ইসিএলের নরসুমুদা খনিতে। চাষনালা খনি দুর্ঘটনার মতো বড় দুর্ঘটনার হাত থেকে সেদিন বাঁচেন ইসিএলের নরসুমুদা কোলিয়ারির কর্মীরা। দ্রুততার সঙ্গে খনির ভেতর থেকে কর্মীদেরকে তুলে নেওয়া হয়। এরপর বন্ধ হয়ে যায় এই কোলিয়ারির কয়লা উত্তোলন। এই খনিতে জল ঢুকে পড়ায় সমস্ত মেশিন জলের নিচে চলে যায়। যা পরিস্থিতি তাতে আগামী এক বছর পর্যন্ত এই খনি আর চালু করা যাবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *