ASANSOL

বার্ণপুরে অস্ত্র কারখানা, ধৃত ৪ জনের ১০ দিনের পুলিশ রিমান্ড

বেঙ্গল মিরর, দেব ভট্টাচার্য, রাজা বন্দোপাধ্যায় ও সৌরদীপ্ত সেনগুপ্ত , আসানসোল, ২৬ অক্টোবরঃ নাম জাভেদ হোসেন। পেশায় অটোচালক। আসানসোল পুরনিগমের ৮৩ নং ওয়ার্ডে হিরাপুর থানার বার্ণপুরের আজাদ নগরের নয়া বস্তিতে টালির চাল দেওয়া একটি বাড়ি তৈরি করে সেখানে থাকেন। বাইরে থেকে যে কেউ দেখলে মনে করবে দারিদ্রতা জড়িয়ে আছে এই বাড়িতে। কিন্তু সেই বাড়ির ভেতরে রান্নাঘরের মধ্যে মাটির খুঁড়ে চারিদিকে ঢালাই করে একেবারে আরো একটি
বাঙ্কারের মতো চোরা কুঠুরিতে তৈরি করা হয়েছে। বাইরে থেকে দেখলে মনে হবে এটা একটা সেপটিক ট্যাংক। আর এখানেই অস্ত্র তৈরি কারখানা করেছিলো অটোচালক জাভেদ হোসেন। সোমবার দুপুরে জাভেদের বাড়িতে হানা দিয়ে হিরাপুর থানার পুলিশ কারখানার দুই কারিগর ও জাভেদের স্ত্রীকে গ্রেফতার করে। পরে রাতে ধরা হয় জাভেদকেও। চার জনকে হিরাপুর থানার পুলিশ মঙ্গলবার ১৪ দিনের পুলিশ রিমান্ড চেয়ে আসানসোল আদালতে তোলে। বিচারক তাদের জামিন নাকচ করে ১০ দিনের পুলিশ রিমান্ডের নির্দেশ দেন।

বার্ণপুরে অস্ত্র কারখানা
photo by KAJAL MITRA


প্রসঙ্গতঃ সোমবার দুপুরে গোপন সূত্রে খবর পেয়ে আচমকা হিরাপুর থানার ওসি ঐ বাড়িতে তল্লাশি চালাতে আসেন। কোন ভাবে সেই খবর পেয়ে তার আগেই সেখান থেকে জাভেদ হোসেন পালিয়ে যায় ।পুলিশ বাড়িতে ঢুকে তল্লাশি চালিয়ে প্রাথমিকভাবে তেমন কিছু খুঁজে না পেলেও হঠাৎ লক্ষ্য করে রান্নাঘরে পাশেই সেপটিক ট্যাংকের মতো একটা কিছু রয়েছে । কিন্তু ভালো করে দেখার পর বোঝা যায় রান্নাঘরের মধ্যে গ্যাস ও অন্য জিনিসপত্রের আড়ালেই রয়েছে একটা দরজা। রয়েছে একটা আড়াই বর্গফুটের সুরঙ্গ। সেখানেই ঢুকেছে বিদ্যুতের তার। এরপরেই পুলিশ তার সন্ধান পায়। পুলিশ সেখানে তল্লাশি করে। জাভেদের স্ত্রী ফারজানা খাতুন ও বিহারের মুঙ্গের থেকে পিস্তল তৈরী করতে আসা মহঃ ফিরোজ এবং মহঃ তানভীরকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায় । পুলিশ এখান থেকে তিনটে ৭.৬৫ এম এম পিস্তল এবং ছটা ম্যাগাজিন উদ্ধার করেছে। এছাড়া বেশ কিছু আনফিনিশড পিস্তল এবং ১৭ টা আনফিনিশড ম্যাগাজিন উদ্ধার করেছে বলে জানিয়েছেন আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশের ডিসিপি (পশ্চিম) অভিষেক মুদি।


এরপর সোমবার বিকেল থেকেই হিরাপুর থানার তরফে ঐ বাড়ির চারিদিকে ও গোটা এলাকায় সাদা পোশাক মোতায়েন করা হয়। যাতে জাভেদকে পেলেই ধরা যায়। রাতেই পুলিশ গোপন খবর পায়, আজাদনগরের নয়া বস্তির মাঠের কাছ থেকে জাভেদ লুকিয়ে তার বাড়ির দিকে আসছে। এই খবর পেয়ে পুলিশ তাকে বাড়ির কাছাকাছি জায়গা থেকে গ্রেপ্তার করে।
কিন্তু নিজের বাড়ির ভেতরে ঘরের নিচে মাটি কেটে একটি আন্ডারগ্রাউন্ড ঘর তৈরি করার পরিকল্পনা জাভেদের নয় বলে পুলিশ অফিসাররা মনে করছেন। এই পরিকল্পনার প্রধান যে নায়ক সে কিন্তু আসানসোল শিল্পাঞ্চলেরই বাসিন্দা বলে পুলিশ ধৃতদের জেরা করে জানতে পেরেছে। এছাড়াও এই কারখানায় আরো যারা কাজ করতো এমন দুই বিহারের বাসিন্দা সহ আরো কয়েকজনকে পুলিশ খুঁজছে।


এর আগে এই বার্নপুরে বেশ কয়েকটি ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে রাজনৈতিক দলের নেতা থেকে ব্যবসায়ী খুন হয়েছেন। একজনের বাড়ি থেকে প্রায় বছর দুয়েক আগে বেশ কিছু অস্ত্রও পাওয়া গিয়েছিল। সেইসব অস্ত্র বাইরে থেকে আনা হয়েছিল। কিন্তু এই প্রথম আজাদনগরের মতো বস্তি এলাকায় এত বড় অস্ত্র কারখানা হদিশ মিলল। মঙ্গলবার ঐ এলাকায় গিয়ে দেখা গেল এলাকায় পাকা বাড়ির সংখ্যা বেশি হলেও জাভেদের বাড়িটি একমাত্র টালির ছাদ। ঠিক যেন পুরনো দিনের একেবারে কোন অভাবী মানুষের ভাড়া বাড়ি ।


জাভেদের পাশের বাড়ির বাসিন্দা মকসুদ আলম বলেন, অনেক ছোট থেকেই আমরা তাকে চিনি। কিন্তু ঘরের ভিতরে মাটি কেটে সেখানে আবার ঘর তৈরি করে এত বড় অস্ত্র কারখানা চলছে এটা আমরা প্রতিবেশীরা কেউই জানতাম না। এতে এলাকার চরম বদনাম হচ্ছে। এরকম লোক এলাকায় না থাকাই ভালো বলে তিনি জানান।
অন্যদিকে ৮৩ নং ওয়ার্ডের ওয়ার্ড সম্পাদক তৃণমূল নেতা আমানউল্লা খান বলেন, এটা মোটেই ভালো নয় । এতে এলাকার বদনাম হচ্ছে। কিন্তু এলাকার মানুষ না জানলেও পুলিশ যেভাবে গোপনে তা জানতে পেরে এই কারখানার অস্ত্র-গুলি উদ্ধার করেছে ও চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে তাতে অবশ্যই পুলিশকে ধন্যবাদ দিতেই হবে। এই ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। আমরা সজাগ আছি। যদি এরপরে এমন কোন ঘটনার খবর আমাদের কাছে আসে আমরাই পুলিশকে জানাবো।
উল্লেখ্য, সেপ্টেম্বর মাসেই কুলটি থানার বরাকরে প্রচুর পরিমাণ অস্ত্র সহ একজনকে গ্রেফতার করার পরে ডিসেরগড়ে একটি অস্ত্র কারখানার হদিস পেয়েছিলো পুলিশ।

Asansol Illegal Arms Factory চোরা কুঠুরিতে, ধৃত দুই কারিগর, বাজেয়াপ্ত প্রচুর আগ্নেয়াস্ত্র

আসানসোলের হীরাপুর থানা এলাকায় অস্ত্র তৈরির কারখানার হদিস, চাঞ্চল্য

News Editor

Mr. Chandan | Senior News Editor Profile Mr. Chandan is a highly respected and seasoned Senior News Editor who brings over two decades (20+ years) of distinguished experience in the print media industry to the Bengal Mirror team. His extensive expertise is instrumental in upholding our commitment to quality, accuracy, and the #ThinkPositive journalistic standard.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *