উত্তরাখন্ডে দূর্ঘটনায় মৃত ৫ জনের দেহের ময়নাতদন্ত হলো, দলে থাকা সবারই প্রশ্ন কখন বাড়ি ফিরব
বেঙ্গল মিরর, দেব ভট্টাচার্য ও রাজা বন্দোপাধ্যায়, আসানসোল, ২৮ অক্টোবরঃ লক্ষী পুজোর পরের দিন উত্তরাখণ্ডে বেড়াতে যান পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোল ও দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে ৩০ জনের একটি দল। বুধবার দুপুরে কৌশানিতে যাওয়ার পথে গাড়ি খাদে পড়ে যাওয়ায় মৃত্যু হয় ৫ জনের। মৃত তিন মহিলা সহ পাঁচজনের মৃতদেহের ময়নাতদন্ত বৃহস্পতিবার সকালে উত্তরাখন্ডের বাঘেশ্বর জেলা হাসপাতালে হয়েছে বলে সেখানকার পুলিশ জানায়।
তবে এই ৫ জনের দেহ কিভাবে আসানসোলে ফিরিয়ে আনা হবে তা নিয়ে দিনভর ঐ পর্যটক দলের সঙ্গে থাকা আসানসোল জেলা হাসপাতালের সহকারি সুপার কঙ্কন রায় একদিকে যেমন সেখানকার প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলছেন। অন্যদিকে আসানসোল দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদ বা আড্ডার চেয়ারম্যান রানিগঞ্জের বিধায়ক তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়, পশ্চিম বর্ধমানের জেলাশাসক থেকে রেসিডেন্ট কমিশনারের সঙ্গেও কথা হয়েছে।
ঐ দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত সাতজনের মধ্যে দুজন জগবন্ধু কাঞ্জিলাল ও তার স্ত্রী মধুছন্দা কাঞ্জিলালকে বৃহস্পতিবার সকালে বিশেষ এয়ার এ্যাম্বুলেন্সে নার্সিং কর্মী বাঘেশ্বর হাসপাতাল থেকে সেখানকারই একটি বড় হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আনা হয়েছে বলে এদিন জেলাশাসক বিনীত কুমার জানান।
এদিন ফোনে কঙ্কন রায় বলেন, বাঘেশ্বর জেলা হাসপাতালে যে ৭ জন ভর্তি ছিলেন তাদের মধ্যে দুজনকে অন্য বড় হাসপাতালে আরও ভালো চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আসানসোলের মহিশিলা কলোনির বাসিন্দা মৃত শ্রাবণী চক্রবর্তীর স্বামী যদুনাথ চক্রবর্তীকে তার ছেলে ও মেয়ে দিল্লি থেকে বাঘেশ্বর হাসপাতালে এদিন সকালেই দেখতে আসেন। পরে তাকে সেখান থেক তারা এখান থেকে নিয়ে চলে যান।
একইভাবে রানিগঞ্জের মৃত চন্দনা খাঁয়ের স্বামী টিপু খাঁ হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। এদিন তাকেও তার মেয়ে ও জামাই এসে এদিন নিয়ে চলে যান। এছাড়া চিন্ময় বন্দোপাধ্যায় ও দীপান্বিতা ঘটককেও হাসপাতাল থেকে এদিনই ছেড়ে দেওয়া কথা বলে জানা গেছে । কঙ্কন রায় আরো বলেন, জেলাশাসক বিনীত কুমার বিশেষ করে মহকুমাশাসক পরিতোষ ভার্মা আমাদের খুবই সহযোগিতা করছেন। আমরা বাগেশ্বর থেকে ২৪ কিলোমিটার দূরে একটা জায়গায় হোটেলে আছি। যে হোটেলটির ব্যবস্থা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুর্ঘটনার পর বুধবার সন্ধ্যায় করে দেওয়া হয়েছিল। কাপকোট থেকে লালকুয়া পর্যন্ত প্রায় ১৯৭ কিলোমিটার রাস্তা যাওয়ার জন্য মহকুমাশাসককে অনুরোধ করেছি আমাদেরকে গাড়ির ব্যবস্থা করে দিতে। ভাড়া আমরাই দেব বলেছি। লালকুয়া থেকেই আমাদের পরশু দিন অর্থাৎ আগামী শনিবার আসানসোল ফিরে যাওয়ার ট্রেন আছে। তারজন্য আমরা সেখানে যেতে হবে । ইতিমধ্যেই যে গাড়িটি আমাদের গাড়িকে পেছন থেকে ধাক্কা মেরে খাদে পড়ে যায় সেই গাড়ির চালক মনোজ সিংয়ের বিরুদ্ধে আমাদের পক্ষ থেকে কাপকোট থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন ট্যুর অপারেটর। ঠিক মতো গাড়ি না চালানোর দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগে লেখা হয়েছে। চালক বর্তমানে বাঘেশ্বর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে।
বুধবারের ঐ ঘটনার পরে দলে থাকা শিশু ও মহিলারা সবচেয়ে বেশি আতঙ্কে আছেন। সবারই প্রশ্ন কখন বাড়ি ফিরব। আর যারা যাদের পরিবার হারিয়েছেন তারা তো ভাবতেই পারছেন না। যদুনাথবাবু যখন তার মেয়ে ও জামাইকে নিয়ে যখন হোটেলে তাদের লাগেজ নিতে আসেন তখন কান্নায় ভেঙে পড়েন।
এদিন মৃতদেহগুলো বাগেশ্বর হাসপাতাল থেকে হলদুআনি পর্যন্ত সরকারি অ্যাম্বুলেন্সে করে পৌঁছে দেওয়ার অনুরোধ মহকুমাশাসক কাছে রেখেছিলেন কঙ্কন রায়। তিনি তা মেনে নিয়ে মৃতদেহগুলো নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন। সেখান থেকে দিল্লির দূরত্ব প্রায় আড়াইশো কিলোমিটার। তারপর যদি দেখা যায় দিল্লি থেকে রেসিডেন্ট কমিশনার সহযোগিতা করছেন, তাহলে দিল্লি থেকে কলকাতায় আনা সম্ভব হবে। এই ব্যবস্থা হলে ভালো হবে। তা না হলে ব্যক্তিগত উদ্যোগেই দেহগুলো এখান থেকে আসানসোল শিল্পাঞ্চলে নিয়ে যাওয়ার ভাবনা চিন্তা রয়েছে।
বাঘেশ্বর জেলার প্রাক্তন জেলা পরিষদের সভাধিপতি হারিস এটানি বলেন, গত সাত দিনের মধ্যে এই এলাকায় দুর্ঘটনায় দশ জন বাঙালি অভিযাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। গত ২০ আগস্ট সুন্দরডেঙ্গার কাছে পাঁচ জন বাঙালি অভিযাত্রী মারা গেছিলেন। তিনি আরো বলেন, কাপকোট থানার শ্যামা গ্রামের কাছে ছোট সেত ঘোরার জন্য ক্রস ব্যারিয়ার নেই। নেই কোন স্পিড ব্রেকারও। যারা রাস্তা তৈরি করেন তাদের মাথায় রাখা উচিত। দুর্ঘটনা এড়াতে এটা খুব জরুরী।
উত্তরাখন্ডে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়লো গাড়ি, আসানসোলের পর্যটকদের দল, ৫ জনের মৃত্যু