পাংচার মিস্ত্রী থেকে মাফিয়া ডন হয়ে ওঠে পারভেজ
বেঙ্গল মিরর, দেব ভট্টাচার্য ।আসানসোল। ঠিক বছর ষোলআগে ট্রাকের পাংচার সারাত পারভেজ আলম সিদ্দিকী। আর এই ষোল বছরে কয়লা এবং পরে বালির ব্যবসায় মাফিয়া ডন হয়ে উঠেছে বারাবনি থানা এলাকার বাসিন্দা ফুল হাসান সিদ্দিকীর সন্তান পর্ভেজ ।একসময় আসানসোলে একটি ইংরেজি মাধ্যম বিদ্যালয়ে সে পড়াশোনা করেছে। পর্ভেজ ২০০৫ সালে দুই নম্বর জাতীয় সড়কের এথরা মোড়ের কাছে ট্রাকের টায়ার পাংচার মেরামত করা বা টায়ারে হাওয়া দেওয়ার ব্যবসা শুরু করে । কিছুদিন পরে সেখানে টায়ার ভাড়া দেওয়া শুরু করে ট্রাকে বাসে। ২০০৮ এ এসব করতে করতেই কিছু অর্থ সংগ্রহ করে গৌরান্ডির বাজারে একটা কাপড়ের দোকান খুলে ফেলে।
আর এখান থেকেই তখন সে কয়লার কারবার শুরু করে বলে শোনা যায়। এই কয়লার কারবারে তাকে তখন অর্থ দিয়ে ব্যাপক ভাবে সাহায্য করে রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাশালী তারই এক দুর্গাপুরের আত্মীয়। বারাবনি থেকেই কয়লা নিয়ে এই ব্যবসা করতে করতে দুর্গাপুরের নবীনগরে জমি নিয়ে সে এক আলিশান বাড়ি তৈরি শুরু করে। ক্ষমতার রাজনৈতিক পরিবর্তনের সাথে সাথে বারাবনি থেকে দুর্গাপুরে চলে আসে পরভেজ এবং ওয়ারিয়ার কাছে একটি কয়লা ডিপো চালু করে। এরপর তার পরিচিত এক আত্মীয় অন্য একটি অবৈধ ব্যবসায়ে ধরা পড়লে এই কয়লার ডিপো বন্ধ করে দেয়া হয়। ধীরে ধীরে ২০১৬ থেকে কয়লার ব্যবসার পাশাপাশি সে বালির ব্যবসা শুরু করে এবং বারাবনিতে অজয় নদীর স্যান্ড ব্লক থেকে বালি তোলার কাজ শুরু করে।
এখান থেকে কোটি টাকার বালি শুধু পশ্চিম বর্ধমান নয় পার্শ্ববর্তী আরও একাধিক জেলায় সে পাঠানো আরম্ভ করে এবং ধীরে ধীরে বিহারের বালি কারবারিদের সঙ্গেও যোগাযোগ তৈরি হয়। কোটি কোটি টাকার এই ব্যবসায় সে দুর্গাপুরে দুটি বড় বাড়ি, কলকাতার বাড়ি, দামি দামি গাড়ি কিনে রীতিমতো মাফিয়া ডন হয়ে ওঠে। শোনা যায় তার এই কারবারে যত বেড়েছে ততই তিনি কলকাতায় থাকা শুরু করেন এবং সেই সময় তার এক তুতো ভাই এই ব্যবসা চালানো শুরু করে। বারাবনি ব্লকের অজয় নদীর একটি স্যান্ড ব্লক নিজের কোম্পানির নামে পাওয়ার পর নদীর বুক থেকে নিয়ম না মেনে বালু তোলার জন্য তার এগার লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয় ।আর নদীর ভেতর থেকে বালি আনার জন্য পাথর দিয়ে নদীর মধ্যে রাস্তা তৈরি করে নদীর চরিত্র বদলানো নিয়ে তার বিরুদ্ধে ন্যাশনাল গ্রীন ট্রাইব্যুনালে মামলা হয়।
স্থানীয় বি এল আর ও চলতি বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর বারাবনি থানা একটি অভিযোগ করেন এবং এই মামলায় তার নাম ছাড়াও ওই কোম্পানির আরো একজনের নাম দেয়া হয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বালি নিয়ে পুলিশ এবং প্রশাসনকে জোরদারভাবে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলার পরে পরে পশ্চিম বর্ধমান জেলায় পরপর বালি মাথিয়ারা ধরা পড়ে। সর্বশেষ এই বালি মাফিয়াকে আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশের গোয়েন্দা দপ্তরের আধিকারিকরা বিহারের মজফফরপুর থেকে গ্রেপ্তার করে এখন ১৪ দিনের জন্য তাদের হেফাজতে নিয়েছে অন্ডাল থানার একটি অভিযোগের ভিত্তিতে।
কয়লা পাচার মামলা, জামিন হলো না লালার চার সঙ্গীর, পরবর্তী শুনানি ২৩ নভেম্বর