ASANSOLBengali News

সনমার্গ চিটফান্ড মামলা, বর্ধমান পুরসভার পুর প্রশাসককে গ্রেফতার করলো সিবিআই, তিনদিনের হেফাজত

বেঙ্গল মিরর, দেব ভট্টাচার্য ও রাজা বন্দোপাধ্যায়, আসানসোল, ১০ ডিসেম্বরঃ এক সময়ে বর্ধমান জেলা তথা বাংলা জুড়ে শোরগোল ফেলে দেওয়া ” বর্ধমান সনমার্গ ” চিটফান্ড মামলায় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই গ্রেফতার করলো বর্ধমান পুরসভার বোর্ড অফ এ্যাডমিনিস্ট্রেটর চেয়ারপার্সন বা পুর প্রশাসক প্রণব চট্টোপাধ্যায়কে। এই গ্রেফতারি নিয়ে জেলায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।


শুক্রবার সকালে পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোলে জেলা আদালতে সিজেএম বা মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট তরুণ কুমার মন্ডলের এজলাসে তোলা হয়।

কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার হয়ে এদিন সওয়াল করতে আসানসোলে কলকাতা থেকে এসেছিলেন আইনজীবী দীপক পড়িয়া। পুর প্রশাসকের ছিলেন আইনজীবী শেখর কুন্ডু। এছাড়াও বর্ধমান আদালত থেকে এসেছিলেন একাধিক আইনজীবীও। এদিন প্রণববাবুকে সিবিআইয়ের হেফাজতে নেওয়া নিয়েও তার আইনজীবীরা প্রশ্ন তোলেন।

প্রথমে সিবিআইের আইনজীবী তাকে তিনদিনের হেফাজত চেয়ে বিচারকের কাছে আবেদন করেছিলেন। পরে তা একদিন বাড়িয়ে চারদিন করা হয়। যদিও দুপক্ষের দীর্ঘ সওয়াল-জবাবের শেষে এদিন বিকেলে বিচারক তিনদিনের হেফাজত মঞ্জুর করেন। বিচারক নির্দেশ দিয়ে বলেন, আগামী সোমবার আবার প্রণব চট্টোপাধ্যায়কে আদালতে হাজির করাতে হবে। তবে সিবিআইয়ের তরফে আদালতে বলা হয়, এর মধ্যে কোন ওয়ার্কিং ডে নেই। জেরা করার ক্ষেত্রে সমস্যা হবে। কিন্তু সিবিআইয়ের আইনজীবীর এই যুক্তি আদালতে গ্রাহ্য হয়নি।


প্রসঙ্গতঃ, প্রণব চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ভারতীয় দন্ডবিধির ৪০৬, ৪০৯, ৪১৯, ৪২০, ৪৬৮ ও ১২০/বি নং ধারায় মামলা হয়েছে ( নং কুলটি থানা ১৯/১৪, তারিখ ২১/১/১৪)। প্রায় ৪ কোটি টাকার কেলেঙ্কারি হয়েছে বলে সিবিআই জানিয়েছে।


জানা গেছে, চলতি বছরের আগস্ট মাসেই বর্ধমান পুরসভার পুর প্রশাসকের পদে বসেছেন প্রণব চট্টোপাধ্যায়
জানা গেছে, এই চিটফান্ড মামলায় কোটি কোটি টাকার কেলেঙ্কারিতে ২০১৮ সালে সিবিআই তদন্ত শুরু করে। অতি সম্প্রতি তারা এই মামলায় একটি চার্জশিট দেয়। তাতে চন্দ্রশেখর সাভার ও সৌম্যদ্বীপ ভৌমিকের নাম ছিলো। এই মামলায় সিবিআইের তদন্তে আতস কাঁচের তলায় তৃনমুল কংগ্রেসের নেতা প্রণব চট্টোপাধ্যায়।

বৃহস্পতিবার সকালে এই মামলায় জেরার জন্য প্রণববাবুকে কলকাতায় ডেকে পাঠিয়েছিলো অন্য একটি কেন্দ্রীয় সংস্থা ইডি। সেই জেরা শেষে বিকেলে বেরিয়ে আসতেই সিবিআই তাকে জেরা শুরু করে। শেষ পর্যন্ত রাতে সিবিআই গ্রেফতার করে।
এদিন আসানসোল আদালতে বিচারকের সামনে সিবিআইয়ের আইনজীবী দীপক পড়িয়া বলেন, বর্ধমানে নিজেদের বাড়িতে এই চিটফান্ডের অফিস করতে ভাড়া দিয়েছিলেন প্রণব চট্টোপাধ্যায়। বর্ধমান আদালতের আইনজীবী প্রণব চট্টোপাধ্যায় ঐ সংস্থার লিগ্যাল এ্যাডভাইজার বা আইনী পরামর্শদাতা ছিলেন।

তার বিরুদ্ধে এই চিটফান্ড কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে থাকার একাধিক প্রমাণ রয়েছে। লক্ষ লক্ষ টাকা তার একাউন্টে গেছে ও লেনদেন হয়েছে। শুধু তাই নয়, তার স্ত্রী রেখা চট্টোপাধ্যায়ও এতে জড়িত রয়েছেন। বারবার তাকে জেরা করা হলেও, তিনি প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যাচ্ছিলেন। তাই তাকে বৃহস্পতিবার গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে আরো জেরার জন্য হেফাজতে নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। সিবিআইয়ের আইনজীবীর পাল্টা জবাব দিতে গিয়ে প্রণববাবুর আইনজীবী শেখর কুন্ডু বলেন, প্রথম চার্জশিটে আমার মক্কেলের নাম নেই। তা সত্বেও তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে যতবার জেরার জন্য ডাকা হয়েছে, তিনি গেছেন। এছাড়াও তিনি বর্ধমান পুরসভার পুর প্রশাসক পদে রয়েছেন। তার এই দায়িত্ব খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও তিনি একজন আইনজীবী। তাই তাকে জামিন দেওয়া হোক।


শেখরবাবুর জবাবে সিবিআইয়ের আইনজীবী বলেন, পরে এই মামলায় সাপ্লিমেন্টারী বা অতিরিক্ত চার্জশিট দেওয়া হবে। তাতে প্রণব চট্টোপাধ্যায়ের নাম থাকবে।
শেষ পর্যন্ত, সিবিআইয়ের আইনজীবীর আবেদনের ভিত্তিতে বিচারক প্রণব চট্টোপাধ্যায়ের জামিন নাকচ করে তিনদিনের হেফাজত মঞ্জুর করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *