ASANSOL

বর্ধমানের পুর প্রশাসক প্রণব চট্টোপাধ্যায়ের জামিন নাকচ, ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ বিচারকের

বেঙ্গল মিরর, রাজা বন্দোপাধ্যায় ও দেব ভট্টাচার্য, আসানসোল, ১৩ ডিসেম্বরঃ চারদিনের সিবিআই হেফাজতে থাকার পর বর্ধমানের পুরসভার পুর প্রশাসক প্রণব চট্টোপাধ্যায়কে সোমবার তোলা হয় আসানসোল সিজেএম অর্থাৎ অতিরিক্ত জেলা দায়রা আদালতে। এদিন সিজেএম তরুণ কুমার মন্ডলের এজলাসে প্রায় ২ ঘন্টা ধরে দুই পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে সওয়াল-জবাব হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সিজেএম তার জামিন নাকচ করে ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন। আগামী ২৭ ডিসেম্বর আবার প্রণব চট্টোপাধ্যায়কে আদালতে পেশ করার জন্য বিচারক নির্দেশ দেন।


প্রণববাবুর হয়ে এদিন আসানসোল আদালতের আইনজীবী শেখর কুন্ডু ছাড়াও বর্ধমান আদালতের একাধিক আইনজীবী এজলাসে হাজির ছিলেন। যার মধ্যে ছিলেন বর্ধমান এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও সম্পাদক। তারা বর্ধমানের পুর প্রশাসকের জামিনের জন্য জোর সওয়াল করেন। আইনজীবীরা বলেন, চার্জশিট ও এফআইআরে নাম না থাকা সত্বেও তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি দীর্ঘদিনের নির্বাচিত জন প্রতিনিধি। বর্তমানে তিনি বর্ধমানের একটা শহরের পুর প্রশাসক। তিনি বর্ধমান শহরের স্থায়ী বাসিন্দা। আইনজীবীরা বলেন, তিনি বর্ধমান সনমার্গ নামে ঐ সংস্থার শুধু মাত্র লিগ্যাল এ্যাডভাইজার ছিলেন। তিনি বর্ধমান শহরে নিজের স্ত্রীর নামে থাকা একটি বাড়ি বর্ধমান সনমার্গ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনকে ভাড়া দিয়েছিলেন।

এই মামলায় যে এফআইআর ও প্রথম চার্জশিট হয়েছে, তাতে তার নাম নেই। তারা আরো বলেন, প্রণববাবুর বয়স ৭১ বছর। তার শারীরিক সমস্যাও রয়েছে। কোভিড পরিস্থিতিতে এখন প্রয়োজন ছাড়া এই বয়সের মানুষদের জেলে না রাখা নিয়েও সুপ্রিম কোর্টের কিছু পর্যবেক্ষণ আছে। তাই তাকে যে কোন শর্তে জামিন দেওয়া হোক। এদিন এজলাসে সিবিআইয়ের আইনজীবী হিসাবে উপস্থিত থাকা এস শশাঙ্ক জামিনের বিরোধিতা করে প্রণব চট্টোপাধ্যায়ের প্রভাবশালী হওয়ার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, অভিযুক্তর মাধ্যমে ৩ কোটি ৭৬ লক্ষ টাকার লেনদেন হলেও, এই কেলেঙ্কারি প্রায় ৯০ কোটি টাকার। নামেই তিনি ঐ সংস্থার লিগ্যাল এ্যাডভাইজার ছিলেন। সবকিছুই তিনি ছিলেন। সিবিআইয়ের আইনজীবী তাকে নতুন করে হেফাজতে না চাইলেও, তার জামিনের তীব্র বিরোধিতা করেন।


প্রসঙ্গতঃ, প্রণব চট্টোপাধ্যায়কে কলকাতা থেকে চারদিন আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে জেরার জন্য ডেকে পাঠিয়ে গ্রেফতার করেছিল সিবিআই।
বর্ধমান শহরের তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা, আইনজীবী তথা বর্ধমান পুরসভার পুর প্রশাসক প্রণব চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ি ও বাণিজ্যিক ভবনে সিবিআই হানা দিয়েছিলো গত শুক্রবার।


প্রসঙ্গতঃ, এই কেলেঙ্কারিতে ভারতীয় দন্ডবিধির ৪০৬, ৪০৯, ৪১৯, ৪২০, ৪৬৮ ও ১২০/বি নম্বর ধারায় মামলা হয়েছে ( নম্বর কুলটি থানা ১৯/১৪, তারিখ ২১/১/১৪)। যদিও জানা গেছে, ধৃত প্রণব চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ভারতীয় দন্ডবিধির ৪০৯ ও ১২০/বি নং ধারায় মামলা দায়ের হয়েছে। এই মামলায় সৌমদ্বীপ ভৌমিক সহ মোট দুজন ও আরো দুটি সংস্থার নাম এফআইআরে রয়েছে। প্রায় ৪ কোটি টাকার কেলেঙ্কারি হয়েছে বলে সিবিআই প্রথমে আদালতে জানিয়েছিলো।
চলতি বছরের আগস্ট মাসেই বর্ধমান পুরসভার পুরপ্রশাসকের পদে বসেছেন প্রণব চট্টোপাধ্যায়। এই চিটফান্ড মামলায় কোটি কোটি টাকার কেলেঙ্কারিতে ২০১৮ সালে সিবিআই তদন্ত শুরু করে। অতি সম্প্রতি তারা এই মামলায় একটি চার্জশিট দেয়। সেই চার্জশিটে নাম ছিল না প্রণব বাবুর।
সিবিআইয়ের আইনজীবি ইতিমধ্যেই আদালতে বলেছেন, এই মামলায় সাপ্লিমেন্টারী বা অতিরিক্ত চার্জশিট দেওয়া হবে। তাতে প্রণব চট্টোপাধ্যায়ের নাম থাকবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *