সন্মার্গ চিটফান্ড মামলা, সিবিআইয়ের প্রভাবশালী তত্ত্বেই বিদায়ী পুর প্রশাসকের জামিন নাকচ
বেঙ্গল মিরর, দেব ভট্টাচার্য ও রাজা বন্দোপাধ্যায়, আসানসোল, ২৭ ডিসেম্বরঃ বর্ধমান সন্মার্গ চিট ফান্ড কেলেঙ্কারি মামলায় গ্রেফতার হওয়া বর্ধমান পুরসভার বিদায়ী পুর প্রশাসক তথা আইনজীবী প্রণব চট্টোপাধ্যায়ের প্রভাবশালী হওয়ার সিবিআইয়ের তত্ত্বই গুরুত্ব পেলো। সোমবার আসানসোল আদালত তাকে জামিন দিলো না। একই সঙ্গে তার ও তার স্ত্রীর প্রায় ১৪ টি ব্যাংক একাউন্ট সিবিআই যে সিল করেছে তা খারিজ করার আবেদনও সোমবার খারিজ করে দিলেন আসানসোল আদালতের সিজিএম তরুণ কুমার মন্ডল ।
প্রসঙ্গতঃ, গত ১০ ডিসেম্বর সিবিআই প্রণব চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতা করে ৪ দিনের জন্য হেফাজতে নিয়েছিল। তারপর ১৩ ডিসেম্বর তাকে আসানসোল আদালতে তুলে সিবিআই জানিয়েছিলো প্রায় ৯০ কোটি টাকার আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগ তার বিরুদ্ধে আছে । এই টাকার পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। তিনি অত্যন্ত প্রভাবশালী। তাকে গ্রেফতারের পর তার বর্ধমানের বাড়ি থেকে প্রচুর কাগজ সহ নানা তথ্যপ্রমাণও উদ্ধার করা হয়েছে বলে সিবিআই আদালতে দাবি করেছিল। আদালত সেদিন তার জামিন নাকচ করে ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছিল।
সোমবার তাকে আসানসোল আদালতে তোলার দিন ছিলো। কিন্তু শারীরিক সমস্যার কারণে এদিন তিনি অনুপস্থিত ছিলেন। এদিন প্রণব চট্টোপাধ্যায়ের হয়ে বর্ধমান বার এ্যাসোসিয়েশনের প্রায় ৩০ জন আইনজীবী আদালত চত্বরে উপস্থিত ছিলেন। তার হয়ে জামিনের আবেদন জানান বর্ধমান প্রবীণ আইনজীবী ভোলানাথ মন্ডল। তিনি বলেন যেহেতু আমার মক্কেলের বয়স ৭১ বছর ও তিনি বর্ধমানের একজন আইনজীবী। সর্বোপরি এতগুলো দিন তাকে সিবিআই রিমান্ডে নিয়ে বা জেলে থাকাকালীন অবস্থায় জেরা করে এদিন পর্যন্ত নতুন কোন তথ্য জানাতে পারে নি। ভোলানাথবাবু এদিন শুনানির সময় যে কোন শর্তে তার জামিন চান। তার হয়ে আসাবসোলের আরা এক আইনজীবী শেখর কুন্ডু বলেন, আদালতের অনুমতি ছাড়াই কি করে প্রণববাবু ও তার পরিবারের সমস্ত ব্যাংক একাউন্ট গুলি সিল করে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে তিনি ও তার পরিবার মেডিক্লেমপর টাকা জমা দিতে পারবেন না।
একইভাবে তার বিভিন্ন ব্যাংকের ইএমআই বা মাসিক কিস্তির টাকা শোধ করতে পারবেন না। শেখর কুন্ডু সিআরপিসির ১০২ নং ধারা তুলে ধরে বিচারককে বলেন কোনভাবেই সিবিআই তার একাউন্ট সিল করতে পারেনা। কাগজ বাজেয়াপ্ত করতে পারে। তিনি তিন দিন আগের সুপ্রিম কোর্টের রতনলাল বনাম কর্ণাটক সরকারের একটি মামলার রায়ের উল্লেখ করে বিচারককে বলেন, কোন ক্ষেত্রেই ব্যাংকের টাকা লেনদেন পুলিশ বা সিবিআই কেউই বন্ধ করতে পারেন না। তাই তার ব্যাংক একাউন্ট গুলি খুলে দেওয়ার জন্য তিনি দাবি জানান।
অন্যদিকে সিবিআইয়ের আইনজীবী এস শাসন বারবার বলতে থাকেন, তিনি অত্যন্ত প্রভাবশালী। তাকে গ্রেফতারের পর তাদের কাছে বেশ কিছু তথ্য এসেছে। সেখান থেকে তারা জানতে পেরেছেন কিভাবে সেইসব টাকা মিউচুয়াল ফান্ড সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে । তাকে জামিন দেওয়া হলে তিনি সাক্ষীদের প্রভাবিত করতে পারেন। এই আবেদনের দীর্ঘ শুনানি শেষ হওয়ার পর বিচারক বিকেলের পরে জামিনের আবেদন খারিজ করার রায় দেন। বিচারক আগামী ৬ জানুয়ারি তাকে আবার আদালতে পেশ করার নির্দেশ দেন।