ASANSOL-BURNPUR

বার্ণপুরের ঘটনায় চাঞ্চল্য, মায়ের মৃত্যুতে আত্মহত্যার চেষ্টা, মৃত দুই ভাই , হাসপাতালে ভর্তি বোন

বেঙ্গল মিরর, রাজা বন্দোপাধ্যায় ও দেব ভট্টাচার্য, আসানসোল, ১৩ জানুয়ারিঃ অসুস্থ মায়ের মৃত্যুর শোক সামলাতে না পেরে তিন ছেলে মেয়ের একসঙ্গে এ্যাসিড খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা। তারমধ্যে মৃত্যু দুই ছেলের। আসানসোল জেলা হাসপাতালে ভর্তি বোনের চিকিৎসা চলছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে এই ঘটনার কথা জানাজানি হওয়ার পরে পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোলের ইস্পাত নগরী বার্নপুরে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে।

বার্ণপুরে মৃত দুই ভাই

বার্নপুরের স্টেশন রোডে আইএসপি ইস্কো কারখানার কে টাইপ একটি আবাসনে বৃদ্ধা মায়ের সঙ্গে তিন ছেলে মেয়ে থাকতেন। এদিন দুপুরে হিরাপুর থানার পুলিশ চারজনকে অচৈতন্য অবস্থায় উদ্ধার করে। পুলিশ জানায়, মৃতদের নাম হলো মা গীতা কর (৮৩), তার দুই ছেলে জয়ন্ত কর (৫৮) ও বিপ্লব কর (৫৪)। হাসপাতালে ভর্তি বোনের নাম মায়া কর ( ৫২)। আসানসোল জেলা হাসপাতাল সূত্রে এদিন বিকেলে জানা যায়, মায়া করের শারীরিক অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক। ঐ আবাসন থেকে উদ্ধার হয়েছে একটি সুইসাইড নোট। পাওয়া গেছে একটি কার্বোলিক অ্যাসিডের বোতল। উদ্ধার হওয়া সুইসাইড নোটে লেখা হয়েছে, আমরা তিন ভাই বোন স্বেচ্ছায় মৃত্যুবরণ করছেন। মৃত্যুর কারণ হিসাবে তারা দায়ী করেছেন মায়ের মৃত্যুকে। কারণ মা ছিল তাদের অন্তপ্রাণ। তারা আর মা ছাড়া বেঁচে থাকতে চাননা। মায়ের জন্য তাই তিন ভাইবোন বিয়ে করেননি। মায়ের মৃত্যুর পর নিজেদের আর জীবন রাখতে চাননা।


জানা গেছে, গীতা করের বড় ছেলে জয়ন্ত কর বার্নপুর ইস্কো কারখানার এ্যাকাউন্টস বিভাগে কাজ করতেন। তিনি একাই ছিলেন বাড়ির রোজেগেরে। মা গীতা কর বেশ কয়েক বছর ধরে বার্ধক্য জনিত কারণে অসুস্থ ছিলেন। মায়ের সেই অসুস্থতার জন্য জয়ন্তবাবু গত সোমবার থেকে অফিসে ছুটি নিয়েছিলেন। সোমবার তিনি মায়ের চিকিৎসার জন্য ইস্কো হাসপাতালেও যান। প্রতিবেশীরা মঙ্গলবার সকালের পর থেকে ঐ আবাসন থেকে কাউকে বেরোতে দেখেননি। সবাই ভেবেছিলেন, তিন ভাই বোন মাকে নিয়ে হাসপাতালে গেছেন।

বৃহস্পতিবার আশপাশের লোকেরা সেই আবাসনের ভেতর থেকে টিভি চলার শব্দ পান। তারা দেখেন দরজা ভেতর থেকে বন্ধ রয়েছে। অনেক বেলা পর্যন্ত দরজা বন্ধ থাকায় প্রতিবেশীদের সন্দেহ হয়। তারমধ্যে একজন হিরাপুর থানার পুলিশের কাছে ফোন করে খবর দেন। সেই খবর পেয়ে দুপুর একটা নাগাদ হিরাপুর থানার ওসি পুলিশ নিয়ে এলাকায় আসেন। পরে আসেন আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশের ডিসিপি ( পশ্চিম) অভিষেক মুদি ও এসিপি( পশ্চিম) প্রতীক রায়। বিকেলে ঐ আবাসনে আসেন আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশের ডিডি বা গোয়েন্দা দপ্তরের আধিকারিকরা।


আবাসনের দরজা ভেঙে পুলিশ ভেতরে গিয়ে দেখে, ঘরের সব জিনিস ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। চারজন বেহুশ হয়ে পড়ে। মা ও মেয়ে খাটে এবং এক ছেলে খাটের পাশে মেঝেতে। অন্য ছেলে পাশের ঘরে। পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে চারজনকে উদ্ধার করে আসানসোল জেলা হাসাপাতালে পাঠায়। হাসপাতালের এমারজেন্সি বিভাগের চিকিৎসক পরীক্ষা করে মা ও তার দুই ছেলেকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। মেয়ে মায়া করকে ফিমেল মেডিকেল ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়।


খবর পেয়ে এলাকায় আসেন তৃনমুল কংগ্রেসের নেতা পূর্ণেন্দু মুখোপাধ্যায় ওরফে টিপু, উৎপল সেন সহ অনেকেই। পূর্ণেন্দুবাবুরা বলেন, আমরা এদেরকে চিনতাম। ভোটের কাজে ব্যস্ত ছিলাম। খবর পেয়ে আসি।
গীতাদেবীর ভাগ্নে অনিল ওরফে বাপি ধর বলেন, মামিমা ও মামাতো তিন ভাই ও বোন কারোর সঙ্গে মেলামেশা করতো না। আমার সঙ্গেও তেমন কোন যোগাযোগ ছিলোনা। ওরা একা একাই থাকত। মামিমা পাঁচ বছর ধরে অসুস্থ ছিলেন বলে জানি। আমার মনে হচ্ছে , মায়ের মৃত্যুর পরেই দুই ভাই ও বোন একসঙ্গে আত্মহত্যার চেষ্টা করে । কারণ ওরা সবাইকে বার বার বলত, মা বেঁচে না থাকলে আমাদেরও এই সংসারে বেঁচে থাকার কোনও যুক্তি নেই। মনে হচ্ছে, মায়ের মৃত্যুর শোক সামলাতে না পেরে মানসিক অবসাদ থেকে তারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে।


প্রাথমিক তদন্তের পরে একই অনুমান হিরাপুর থানার পুলিশেরও। যদিও তারা অন্য সব সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখতে তদন্ত শুরু করেছে। পুলিশ জানায়, পরিবারের আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। শুক্রবার সকালে মৃতদেহগুলির ময়নাতন্ত করা হবে। তারপর জানা যাবে, গীতা করের কি কারণে কবে কোন সময় মৃত্যু হয়েছে। তারপর কখন তিন ভাইবোন এ্যাসিড খেয়েছেন। কখনই বা দুই ভাইয়ের মৃত্যু হয়। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে এই সব কিছু পরিষ্কার হবে। পাশাপাশি মায়া করের শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলে তার সঙ্গেও কথা বলে বিস্তারিত ভাবে বিষয়টি জানার চেষ্টা করবেন তদন্তকারী পুলিশ অফিসাররা। তবে, মৃতদেহগুলি দেখে চিকিৎসকদের অনুমান, ২৪ ঘন্টা বা তারও কিছু সময় আগে তাদের মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে। ডিসিপি (পশ্চিম) বলেন, তদন্ত শুরু করা হয়েছে। ঐ আবাসন থেকে একটি সুইসাইড নোট পাওয়া গেছে।

পুরভোট নিয়ে একে অন্যের কোর্টে বল ঠেলল কমিশন-রাজ্য!

News Editor

Mr. Chandan | Senior News Editor Profile Mr. Chandan is a highly respected and seasoned Senior News Editor who brings over two decades (20+ years) of distinguished experience in the print media industry to the Bengal Mirror team. His extensive expertise is instrumental in upholding our commitment to quality, accuracy, and the #ThinkPositive journalistic standard.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *