ASANSOL

আসানসোল জেলা হাসপাতালে ৭২ ঘণ্টায় করোনা ওয়ার্ডে সাতজনের মৃত্যু, নজনের বিশেষজ্ঞ কমিটি তৈরি করে দিলেন সিএমওএইচ চিকিৎসায় নজরদারিতে

দেব ভট্টাচার্য ও রাজা বন্দোপাধ্যায়, আসানসোল, ১৫ জানুয়ারিঃ আসানসোল জেলা হাসপাতালে করোনায় ৭২ ঘণ্টায় আইসোলেশান ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে শুক্রবার রাত পর্যন্ত এক মহিলা এক যুবক সহ পাঁচ জন মারা যান। গত তিন সপ্তাহে আসানসোল জেলা হাসপাতালে ১৬ জন মারা গেছেন করোনা আক্রান্ত হয়ে বলে জেলা
স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে জানা গেছে।


জেলা হাসপাতালে একসঙ্গে এত কম সময়ে মৃত্যুর খবর পাওয়ার পরে তড়িঘড়ি আসানসোল জেলা হাসপাতালে গিয়ে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তথা সিএমওএইচ ডাঃ শেখ ইউনুস হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে বৈঠক করেন। তার আগে তিনি যারা মারা গেছেন তাদের প্রত্যেকের বেড টিকিটগুলো পরীক্ষা করে দেখেন। করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসার কোনো গাফিলতি হচ্ছে কিনা, হলে কোন কোন ক্ষেত্রে কিভাবে হয়েছে তার তথ্য ধরে ধরে তিনি বৈঠকে চিকিৎসকদের সঙ্গে আলোচনাও করেন। এমন পরিস্থিতিতে কোন কোন চিকিৎসক সপ্তাহে একদিন বা দুদিনের বেশি হাসপাতালে আসছেন না, অথচ হাজিরা খাতায় সই করছেন তাদের নাম জানেন সিএমওএইচ। ঐসব চিকিৎসকদের তালিকা তৈরি করার নির্দেশ তিনি দেন সুপারকে। আবার যেভাবে করোনা রোগীদের দেখা উচিত সেইভাবে অন্য রোগীদের দেখার জন্য হাসপাতাল সুপারকে তিনি নির্দেশ দেন।


তিনি বলেন, যারা ঠিকমতো হাসপাতলে আসছেন না সেইসব চিকিৎসকদের তালিকা তৈরী করুন। আপনি তাদেরকে বলুন যদি তারা নিজেদের শুধরে নিতে পারেন। তারা তা যাি না পারেন তাহলে তাকে জানানো হোক। তিনি স্বাস্থ্য ভবনের সঙ্গে কথা বলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন।
এই বৈঠকে নিয়মিত করোনা রোগীদের দেখভালের মনিটারিং করার জন্য হাসপাতাল সুপারের নেতৃত্বে নজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের একটি এ্যাডভাইজারি কমিটি তৈরি করে দেওয়া হয়।


জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক হাসপাতালে তদন্ত ও বৈঠক করে ফিরে যাওয়ার মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নতুন করে করোনায় চারজনের মৃত্যু শুধু জেলা স্বাস্থ্য নয়, একবারে স্বাস্থ্য ভবনকেও ভাবিয়ে তুলেছে বলে জানা যাচ্ছে।
বৃহস্পতিবার থেকে শুক্রবার রাতের মধ্যে এতগুলি মৃত্যুতে রোগীদের ফুসফুসে আক্রমণের চেয়েও বেশি কিডনি আক্রান্ত হয়েছে। সেদিকে প্রথম থেকেই হয়তো নজর দেওয়া হচ্ছিলো না বলে মনে করে সিএমওএইচ হাসপাতাল সুপার সহ অন্য চিকিৎসকদের সঙ্গে আলোচনা করে আইসোলেশান ওয়ার্ডে যান। শুক্রবার ভর্তি থাকা ১৩ জন রুগীর খোঁজ নেন। তারপর মৃত্যু হওয়া ঐ চারজনের চিকিৎসা সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য খতিয়ে দেখেন।


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এদিন বলেন, দেখা যাচ্ছে এবার ফুসফুসে আক্রমণের চেয়েও বেশি কিডনি আক্রান্ত হচ্ছে। সেদিকে প্রথম থেকেই হয়তো নজর দেওয়া হচ্ছিল না। এখন থেকে আমরা ভর্তি থাকা সব রোগীর কিডনি পরীক্ষাও করব।
জেলা হাসপাতাল সুপার ডাঃ নিখিল চন্দ্র দাস বলেন, আমরা বারবার চিকিৎসকদের নিয়ে বসছি। কোথায় কি ধরনের অসুবিধা হচ্ছে তা নিয়েও চিকিৎসকদের সঙ্গে আলোচনা করছি। তবে এমন চারজন মারা গেছেন তাদের অন্যান্য শারীরিক সমস্যা বা কোমর্বিডিটি ছিল । এক্ষেত্রে অক্সিজেন বা ফুসফুসের তেমন সমস্যা হচ্ছে না। তা সত্ত্বেও কেন মারা যাচ্ছেন, এটা আমরাও বোঝার চেষ্টা করছি।


জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, নজনের বিশেষজ্ঞ কমিটি প্রত্যেকদিন করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা সমস্ত খতিয়ে দেখবে। যদি কোনো রোগী মারা যায় তাহলে কেন বা কি কি কারনে মারা যাচ্ছে তাও দেখতে বলা হয়েছে। বিশেষ করে কমবয়সী যারা মারা যাচ্ছেন তাদের কি ধরনের অসুবিধা হয়েছিল সেটা দেখতে হবে। তেমনি মৃত্যুর সংখ্যা যে করেই হোক কমানোর ব্যবস্থা করতে নির্দেশ দিয়েছি বলে তিনি জানান।

শেখ ইউনূস আরো বলেন, নতুন করে মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর আমি হাসপাতাল সুপার ও অন্য চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলছি। গত ১৫ দিনে দশ হাজার জনের বেশি জেলায় পজিটিভ রোগী পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে অনেকেরই করোনার সঙ্গে অন্য অসুস্থতাও নিয়ে জেলা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তাদের নতুন করে কিডনিতে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা কোনও কোনও চিকিৎসক আমাকে বলেছেন।

কিন্তু কমবয়সীরা কেন মারা যাচ্ছেন ও মৃত্যুর হার কি করে কমানো যায় তা নিয়ে জেলা হাসপাতালে আমি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা করেছি। যে কমিটি তৈরি করা হয়েছে সেই কমিটি কিভাবে কাজ করবে করোনা নিয়ে তাও এদিন হাসপাতাল সুপারকে ও চিকিৎসকদের জানিয়ে দিয়েছি।
প্রসঙ্গতঃ, শুক্রবার রাতেই পশ্চিম বর্ধমান জেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৭০ হাজার পার করেছে। জেলায় এখন এ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যা ৭, ০৯০। জেলায় এখনো পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৩৭৩ জনের। বলতে গেলে, জেলা এখন প্রতিদিন গড়ে হাজার জন করে করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *