ASANSOL

কয়লা পাচার মামলা : জামিনে থাকা লালার চার সহযোগীর সিবিআই আদালতে হাজিরা

বেঙ্গল মিরর, রাজা বন্দোপাধ্যায় ও দেব ভট্টাচার্য, আসানসোল, ১৬ জানুয়ারিঃ দেশ জুড়ে শোরগোল ফেলে দেওয়া কয়লা চোরাচালান বা পাচার মামলায় মুল অভিযুক্ত অনুপ মাজি ওরফে লালার চার সহযোগী জামিনে থাকা জয়দেব মণ্ডল, নীরদবরন মণ্ডল, গুরুপদ মাজি ও নারায়ণ নন্দা শনিবার আসানসোল সিবিআই আদালতে হাজিরা দিলেন। ৫৬ দিন পরে জামিন পাওয়া এই চারজনকে জামিন দেওয়ার অন্যতম শর্ত ছিলো নির্দিষ্ট দিনে আদালতে হাজিরা দিতে হবে সশরীরে। শনিবার জয়দেবদের হয়ে আসানসোল সিবিআই আদালতে তাদের দুই আইনজীবী শেখর কুন্ডু ও সোমনাথ চট্টরাজ সওয়াল করেন।

गौ तस्करी CBI चार्जशीट

তারা বলেন, চারজনের জামিন স্থায়ীভাবে দেওয়া হোক বা বরাবরের জন্য বহাল থাকুক। সিবিআইয়ের আইনজীবী রাকেশ কুমার শেখরবাবুদের এই সওয়ালের বিরোধিতা করেন। শেষ পর্যন্ত দুই পক্ষের সওয়াল-জবাবের শেষে আসানসোল বিশেষ সিবিআই আদালতের বিচারক রাজেশ চক্রবর্তী চারজনের জামিন বহাল রাখেন। পাশাপাশি আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি এই মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন বিচারক। সেইদিন ঐ চারজনকে আদালতে হাজিরা দিতে হবে। গ্রেফতার হওয়ার ৫৬ দিন পরে জয়দেব মন্ডলরা ২০২১ সালের ২৩ নভেম্বর শর্তসাপেক্ষে জামিন পেয়েছিল। জামিন দেওয়ায় শর্ত হিসাবে সেই সময় বিচারক বলেছিলেন, চারজন বিদেশে যেতে পারবে না ও পশ্চিম বর্ধমান জেলায় প্রবেশ করতে পারবে না। পাশাপাশি তাদেরকে সিবিআইয়ের কাছে তাদের পাসপোর্ট জমা রাখতে হবে ও অফিসাররা যখন ডাকবে, তখন যেতে হবে।


উল্লেখ করা যেতে পারে, ২০২১ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর কলকাতার নিজাম প্যালেসে টানা জিজ্ঞাসাবাদের পরে সিবিআই গ্রেফতার করেছিল এই চারজনকে।
ইতিমধ্যেই সিবিআই আদালতে বিচারকের কাছে বলেছে, বেআইনী কয়লা কারবারের কিংপিং হলো অনুপ মাজি ওরফে লালা। সেই কারবার থেকে লালার ১৩৭৪ কোটি টাকার সম্পত্তি হয়েছে। তার সব কিছুর সঙ্গে এই চারজন তার সহযোগী জড়িত রয়েছে। এছাড়াও এদেরকে ডেকে বারবার জেরা করা হলেও, তারা তথ্য লুকিয়ে রাখছে। তদন্তে সহযোগিতা করছে না বলেই তাদের গ্রেফতার করা হয়েছিলো।

কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা বলেছে , এই মামলায় একটা বড় যড়যন্ত্র হয়েছে। অনেকেই এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে প্রমান ও তথ্য যোগাড় করা হচ্ছে। ঠিক সময়ে তা আদালতে জমা দেওয়া হবে। এই চারজন খুবই প্রভাবশালী। এরা জামিন পেলে সাক্ষীদের ভয় দেখাতে পারে ও তথ্য প্রমাণ নষ্ট করতে পারে। তারপরেও শর্তসাপেক্ষে আদালত তাদেরকে জামিন দেয়।
প্রসঙ্গতঃ, সিবিআই ২০২০ সালের ২৬ নভেম্বর অনুপ মাজি, ইসিএলের দুই জিএম ও ইসিএলের তিন নিরাপত্তা আধিকারিকের বিরুদ্ধে অবৈধ খনন, চুরি ও কয়লার চোরাচালানের অভিযোগে মামলা দায়ের করে।

সিবিআই পরে এই মামলায় সারাদেশে প্রায় ৩০ টি জায়গায় তল্লাশি চালায়। ইতিমধ্যেই, লালার ১৭৫.৫৬ কোটি টাকার সম্পত্তি অ্যাটাচমেন্ট করেছে সিবিআই। লালার চার সহযোগী জয়দেব মণ্ডল, নীরদবরন মণ্ডল, গুরুপদ মাজি ও নারায়ণ নন্দাকে কলকাতার নিজাম প্যালেসে সিবিআইয়ের দুর্নীতি দমন শাখার অফিসাররা বেশ কয়েক দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলো। কিন্তু সেপ্টেম্বর মাসের শেষে তাদেরকে আবার জেরার জন্য সিবিআই ডেকে পাঠায়। তখন তারা সঠিক উত্তর দেননি। বরং বিভিন্ন ধরনের তথ্য গোপন করছে, এই অভিযোগে সিবিআই তাদেরকে গ্রেফতার করা হয় ।


সিবিআইয়ের দাবি, জয়দেব সহ এই চারজন সারা দেশে অনুপ মাজি বা লালার সঙ্গী হিসাবে কাজ করতো। কয়লা কারবারের অন্যতম ষড়যন্ত্রকারী ছিলেন লালা বলে সিবিআইয়ের দাবি। যদিও সুপ্রিম কোর্ট রক্ষা কবচ দেওয়ায় সিবিআই তাকে গ্রেফতার করতে পারেনি।
অন্যদিকে, অন্যদিকে, গরু ও কয়লা পাচারের অন্য একটি মামলায় ফেরার থাকা বিনয় মিশ্রর ভাই বিকাশ মিশ্র বর্তমানে সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পরে কলকাতার এসএসকেএমে ভর্তি রয়েছে। শনিবার এই মামলাটি আসানসোলে সিবিআই আদালতে উঠে। অসুস্থতার কারণে বিকাশকে আদালতে সশরীরে হাজির না হওয়ায় মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী ২৯ জানুয়ারি হবে বিচারক রাজেশ চক্রবর্তী নির্দেশ দেন বলে, এদিন জানান আইনজীবী সোমনাথ চট্টরাজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *