রানিগঞ্জে ব্যবসায়ীর বাড়িতে ডাকাতির পরিকল্পনা “রেকি ” করে , নিশ্চিত পুলিশ, জামিন নাকচ ধৃতদের
ধৃতদের ১৪ দিনের পুলিশ হেফাজত, বাকিদের খোঁজে তল্লাশি
বেঙ্গল মিরর, রাজা বন্দোপাধ্যায়/ চরণ মুখার্জী আসানসোল, ২১ ফেব্রুয়ারিঃ ( Asansol Raniganj News Today )আসানসোলের রানিগঞ্জ থানার রামবাগান এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী সুন্দর ভালোটিয়ার বাড়িতে ডাকাতির চেষ্টার ঘটনাকে কেন্দ্র করে তুলকালাম কান্ড ঘটেছিলো রবিবার রাতে। সেই ঘটনায় পুলিশ ব্যবসায়ীর বাড়ি থেকে তিনজন ডাকাতকে ধরে ফেলে। ধৃতরা হলো উত্তর ২৪ পরগণার নোয়াপাড়া থানার ইছাপুরের অরবিন্দ পল্লীর তপন ওরফে চন্দন কুমার সাহানি, দিল্লির মুকুন্দপুর থানার মুকুন্দপুর শিবমন্দির রোডের মনোজ কুমার ও দিল্লির নানগলি থানার নানগলি কালি মন্দির এলাকার আকাশ কুমার ঝাঁ। পুলিশ তপনের থেকে একটা দেশী বন্দুক, ৫ রাউন্ড ৮ এমএম কার্তুজ ও ড্রাইভিং লাইসেন্স, মনোজের থেকে একটি দেশী বন্দুক, ৬ রাউন্ড ৮ এমএম কার্তুজ ও দুটি মোবাইল ফোন এবং আকাশের থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, ৯ এমএম ৮ রাউন্ড কার্তুজ সহ একটি ম্যাগাজিন, একটি আধার কার্ড, একটি মোবাইল ফোন ও ড্রাইভিং লাইসেন্স। ধৃতদের মধ্যে আকাশ কুমার ঝাঁ আহত হওয়ায়, তাকে সোমবার আসানসোল জেলা আদালতে সিজেএমের এজলাসে তোলা যায়নি। বাকি দুজনকে ১৪ দিনের রিমান্ড চেয়ে পুলিশ আবেদন করে। সেই আবেদনের ভিত্তিতে বিচারক তাদের জামিন নাকচ করে ১৪ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন।




এই ডাকাতির ঘটনায় ভালোটিয়া পরিবার ও রানিগঞ্জ থানার তরফে দুটি আলাদা অভিযোগের ভিত্তিতে এফআইআর করা হয়েছে।
প্রসঙ্গতঃ, রবিবার রাত আটটার পরে রামবাগান এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী সুন্দর ভালোটিয়ার বাড়িতে সাত জনের একটি দল সশস্ত্র ডাকাত ঢুকে পড়ে। ডাকাতরা কলিং বেল টিপলে দারোয়ান দরজা খোলে। এক ডাকাত সঙ্গে সঙ্গে তার মাথায় বন্দুক তাক করে। সেই সুযোগ সবাই ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ে। এরপর ডাকাতরা বন্দুক হাতে নিয়ে গোটা বাড়ির মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। চারজন ডাকাত বাড়ির মহিলাদের একটা ঘরে এনে মোবাইল ফোন নিয়ে নেয়। তার আগে ডাকাতরা বাড়ির কাজের লোকেদেরও মারধর করে। ডাকাতরা জানতে চায়, টাকা, গয়না সহ অন্যান্য জিনিস কোথায় আছে। এরমধ্যে এক মহিলা বাড়ির ছাদে গিয়ে ডাকাতির এই ঘটনা এক প্রতিবেশীকে ফোন করে জানায়৷ সেই প্রতিবেশি পুলিশকে খবর দিলে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ ওই এলাকা ঘিরে নেয়। পুলিশ দেখে গুলি চালাতে চালাতে ডাকাতরা বেরিয়ে পালাতে থাকে।

সেই গুলির আঘাতে স্থানীয় বাসিন্দা বিকাশ চৌধুরী আহত হন। গুলি লাগে রানিগঞ্জ থানার দেবদাস সুপকার নামে এক সাব ইন্সপেক্টরের। তাদের স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। খবর পেয়ে চলে আসেন আসানসোল দূর্গাপুরের পুলিশ কমিশনার এন সুধীর কুমার নীলকান্তমের নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ বাহিনী। তিনজনকে পুলিশ ধরতে সক্ষম হয়। বাকিরা পালিয়ে গা ঢাকা দেয় ঘটনার পরেই রানিগঞ্জ শহর সহ শিল্পাঞ্চল জুড়ে নাকা চেকিং শুরু হয় পুলিশের পক্ষ থেকে। রানিগঞ্জ থেকে বাইরে বেরোনোর সব রাস্তা সিল করে তল্লাশি শুরু করা হয়। যদিও বাকি ডাকাতদের পুলিশ আর খোঁজ পায়নি। ব্যবসায়ীর এক আত্মীয় রাম ভালোটিয়া বলেন, রাত আটটার পরে ডাকাতরা ঢুকে পড়ে। তার মধ্যে চারজন মহিলারদের কাছে গিয়ে মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে। তারমধ্যে এক জন মহিলা সরে গিয়ে এক প্রতিবেশীকে ফোন করেন। তারপর পুলিশ চলে আসে।
পুলিশের অনুমান, এই ডাকাতির পেছনে বড় কোন মাথা আছে। সেই মাথা ভিন্ন ভিন্ন রাজ্যের ডাকাতদের একজোট করে এই পরিকল্পনা করে। যেভাবে রাত আটটা নাগাদ কলিং বেল বাজিয়ে ব্যবসায়ীর বাড়ির দরজা খোলায়, তাতে পুলিশ নিশ্চিত ” রেকি ” বা আগাম সবকিছু খতিয়ে দেখে ডাকাতির ছক কষা হয়েছে। তবে, বাড়ির মধ্যে এতগুলো ঘর ও সদস্যরা বিশেষ করে মহিলারা বেশি আছে বা থাকতে পারে, সেটা ডাকাতরা আন্দাজ করতে পারেনি। যে কারণে, এক মহিলা চোখের আড়াল হয়ে গিয়ে ফোন করে দেওয়ায় ডাকাত দলের পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। ধরা পড়ে যায় তিন ডাকাত। পুলিশ বাড়ি থেকে একটি মোটরসাইকেল পেয়েছে। সম্ভবতঃ, সেটি ডাকাত দলের। রাতের অন্ধকারে বাকি ডাকাতদের পালিয়ে যাওয়া পুলিশকে চিন্তায় ফেলেছে।
আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশের এসিপি (সেন্ট্রাল) তথাগত পান্ডে এদিন বলেন, দুজনকে ১৪ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
সোমবার সকালে সুন্দর ভালটিয়ার বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করে কথা বলেন রানিগঞ্জের বিধায়ক তথা আসানসোল দূর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদ বা আড্ডার চেয়ারম্যান তাপস বন্দোপাধ্যায়। তিনি আশ্বাস দিয়ে বলেন, ভয় পাওয়ার কিছু নেই। পুলিশ প্রশাসন ও স্থানীয় প্রশাসন আপনাদের পাশে ছিলো, আছে ও আগামী দিনও থাকবে। পরে তাপসবাবু বলেন, খুব উদ্বেগজনক ঘটনা। তবে, স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশের তৎপরতায় তিনজন ধরা পড়েছে।
read also : রানীগঞ্জে ব্যবসায়ীর বাড়িতে ডাকাতির চেষ্টা, পুলিশ চলে আসায় হামলা, দুপক্ষের গুলি লড়াই, গ্রেফতার ২, জখম তিন