আসানসোল লোকসভা : তৃণমূল কি পরাজয়ের গ্লানি মুক্ত করতে পারবে ?
তৃণমূল কংগ্রেস জন্ম নেয়ার পর আসানসোলে সাতটি লোকসভা নির্বাচনেই পরাজিত হয়েছে
বেঙ্গল মিরর, দেব ভট্টাচার্য, আসানসোল। তৃণমূল কংগ্রেস পশ্চিমবঙ্গের জন্ম নেয়ার পর আসানসোলে সাতটি লোকসভা নির্বাচনেই তৃণমূল পরাজিত হয়েছে । এবার সেই পরাজয়ের গ্লানি মুক্ত করতে ভোট ঘোষণার সাথে -সাথে সারা দেশের জনপ্রিয় হেভিওয়েট শত্রুঘন সিনহা কে তৃণমূল প্রার্থী ঘোষণা করেছে। তেমনি একইসঙ্গে মন্ত্রী মেয়র থেকে শুরু করে সাধারণ কর্মীরা কর্মী বৈঠক শুরু করে দলীয় প্রচারে নেমে গিয়েছেন ।




হলি বা দোলের আগেই দেওয়ালে দেওয়ালে নানান রং দিয়ে তৃণমূলের নেতা এবং কর্মীরা দলীয় প্রতীক আঁকছেন । দেওয়ালে দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে ভোট দেওয়ার আবেদন জানানো শুরু করে দিয়েছেন। অন্যদিকে ভোট ঘোষণার তিন দিন পরেও এখনো পর্যন্ত ভারতীয় জনতা পার্টি, কংগ্রেস কেউই তাদের প্রার্থী ঘোষণা করতে পারেন নি ।এমনকি সেই অর্থে বিরোধীদের প্রার্থীর নাম ছাড়া যে দেওয়াল লিখন সেটুকুও তারা শুরু করেননি। দেওয়ালে রাজনৈতিক রঙ দিয়ে হোলি খেলা শুরু হয়নি ওদের। অর্থাৎ প্রাথমিক পর্যায়ে তৃণমূল বিরোধীদের থেকে এবার অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে জয়ের দিকে বলে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের ধারণা।
১ লা জানুয়ারি ১৯৯৮ কংগ্রেস থেকে আলাদা হয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূল কংগ্রেস এ রাজ্যে প্রথম রাজনৈতিক দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।২০১১ থেকে ২০২১ তৃতীয়বার তৃণমূল রাজ্যে সরকারের ক্রমশ শক্তি বাড়িয়ে ক্ষমতায় এসেছে। কিন্তু আসানসোল লোকসভা সংসদীয় আসনটি জয় করার স্বপ্ন তাদের থেকেই গিয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর শিল্পাঞ্চলে সবচেয়ে বিশ্বস্ত সঙ্গী এবং দলের নেতা মলয় ঘটক ১৯৯৮ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত পাঁচবার লোকসভা আসনে দলের প্রার্থী হয়েছেন এবং পাঁচবারই পরাজিত হয়েছেন সিপিএম প্রার্থী বংশ গোপাল চৌধুরী এবং বিকাশ চৌধুরীর কাছে।
২০১৪ এবং ২০১৯ এই দুবার তৃণমূল পরীক্ষামূলকভাবে বহিরাগত দুজনকে প্রার্থী করে আসানসোলে নিয়ে এলেও তারাও হেরে যান। ২০১৪ তে সর্বভারতীয় শ্রমিক নেত্রী দোলা সেন এবং ২০১৯ এ অভিনেত্রী মুনমুন সেনকে প্রার্থী করেছিলতৃণমূল। এই দুইজনি বাবুল সুপ্রিয়র কাছে পরাজিত হয় ।সেই বাবুল সুপ্রিয় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হওয়ার পর ভারতীয় জনতা পার্টি ছেড়ে এবার তৃণমূলের বালিগঞ্জ বিধানসভা আসনে তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন ।
তৃণমূল জন্মের পরে ১৯৯৮ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রে সাধারণ নির্বাচন এবং উপনির্বাচন মিলিয়ে ৭ বার ভোট হয়েছে। প্রত্যেকবারই তৃণমূল দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে। এরমধ্যে তৃণমূল আমলে পাঁচবার বামপন্থী প্রার্থীরা জিতলেও দুবার বিজেপি জিতেছে এবং সেক্ষেত্রে বামপন্থীরা তৃতীয় স্থানে পৌঁছেছে ।তবে এটা উল্লেখ করা যেতে পারে যে ১৯৫৭ লোকসভা থেকে শুরু করে পরপর দুবার অতুল্য ঘোষ আসানসোল থেকে কংগ্রেস টিকিটে জিতেছিলেন ।এছাড়া আনন্দ গোপাল মুখোপাধ্যায়ও কংগ্রেস প্রাথী হয়ে দুবার জেতেন। বাকি ১১ বার বামপন্থীরা এই আসন থেকে জিতে ছিলেন।
তৃণমূল তাদের জন্মের পর এবার এই আসন জিততে মরিয়া হয়ে শত্রুঘন সিনহার মত ব্যক্তিত্বকে প্রার্থী করেছে প্রধানত দুটো কারণে। প্রথমত এই শিল্পাঞ্চলে প্রায় অর্ধেক হিন্দিভাষী ভোটার আছে ।এছাড়া শত্রুঘন সিনহা সর্বভারতীয় অভিনেতা হিসেবে যথেষ্ট জনপ্রিয়। গৌতম ঘোষের মত চলচ্চিত্র পরিচালকের অন্তর্জলী যাত্রার মত বাংলা সিনেমাতে তিনি অভিনয় করেছেন। রাজনৈতিক নেতা হিসেবে ইতিপূর্বে তিনি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং দুবারের সংসদ। স্বাভাবিকভাবেই হিন্দিভাষী ভোটারদের ভোট একদিকে তার কাছে যেমন আসবে তেমনি সংস্কৃতি জগতের ব্যক্তিত্ব থেকে শুরু করে রাজনৈতিক সচেতন মানুষেরাও তাকে ভোট দেবেন বলে মনে করা হচ্ছে।
সর্বোপরি সদ্য শেষ হওয়া আসানসোল পুরসভার ১০৬ টি আসনের মধ্যে ৯১টি আসনে তৃণমূলের জয় লোকসভা ভোটে তাদের কর্মী সমর্থকদের যথেষ্ট উৎসাহ উদ্দিপনা যোগাতে সাহায্য করবে। আর সেই জন্যেই ব্লকে ব্লকে কর্মী বৈঠক শুরু হয়ে গেছে। সেখানেই প্রধান বিরোধী দল বিজেপি কাকে প্রার্থী করবে তাই নিয়ে নিজেদের মধ্যে এখনো প্রবল অন্ত দ্বন্দ্ব চলছে। একই অবস্থা বাম এবং কংগ্রেসের।