ASANSOL

ভারত বাঁচাও, জনগণ বাঁচাও ডাক, আগামী 28 ও 29 শে মার্চ সাধারণ ধর্মঘট

বেঙ্গল মিরর, চরণ মুখার্জী, রানীগঞ্জ: ভারত বাঁচাও জনগণ বাঁচাও এই শ্লোগানকে সামনে রেখে আগামী 28 ও 29 শে মার্চ সর্বভারতীয় হরতালের ডাক দিয়েছে বাম শ্রমিক সংগঠন সিটু, এ আই কে এস, AIEWU সহ ধর্মঘট সফল করার জন্য গঠিত যুক্ত মঞ্চ স্ট্রাইক কমিটি। শুক্রবার সেই বিষয়কে সামনে রেখেই খনি শহর রানীগঞ্জে 11 দফা দাবি দাবা কে সামনে রেখে রানীগঞ্জের ডলফিন ময়দান থেকে রানীগঞ্জ বাজার পরিক্রমা করলো বাম শ্রমিক সংগঠন সিটু সহ সিপিআইএম ও বাম সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

এদিনের এই বিক্ষোভ কর্মসূচিতে বিক্ষোভকারীরা তাদের ডাকা হরতালের মূল দাবি গুলি বিক্ষোভ মিছিলে স্লোগান এর আকারে তুলে ধরেন। তাদের দাবি গুলির মধ্যে অন্যতম হলো শ্রম আইন বাতিল করা, কিষান মোর্চার 5 দফা দাবি কার্যকর করা, এম এন পি এর নামে দেশ বিক্রি বন্ধের দাবি, আইকর দেয় না এমন মানুষকে প্রতি মাসে সাড়ে সাত হাজার টাকা প্রদান, অসংগঠিত শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প চালুর দাবি, পেট্রোল-ডিজেলের কর কমিয়ে দাম কমানোর দাবি, কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা,সহ সামাজিক বিভিন্ন প্রকল্পে অর্থ বৃদ্ধি করার দাবি প্রমূখ।

শুক্রবার বিকেলে এই সকল দাবি গুলি কে জনসমক্ষে তুলে ধরে, কি কারনে হরতালের ডাক, সে বিষয়টি স্পষ্ট করে, এই বিক্ষোভ মিছিলে দাবি উপস্থাপন করে বাম সংগঠনের কর্মী সমর্থকেরা। এদিনের এই বিক্ষোভ মিছিলের নেতৃত্ব দেন রানীগঞ্জের প্রাক্তন বিধায়ক তথা সিটু নেতা রুনু দত্ত, দেবিদাস ব্যানার্জি, কৃষ্ণা দাস গুপ্ত, দিব্যেন্দু মুখার্জী, মলয় কান্তি মন্ডল, প্রমূখ।

শুক্রবার অন্যান্য সব কয়লাখনি শিল্পের সাথে সাতগ্রাম এরিয়ার কয়লাখনির সঙ্গে যুক্ত খনি সংগঠন, গুলির কয়েকটি দ্বারা গঠিত জয়েন্ট একশন কমিটির, জয়েন্ট কনভেনশন অনুষ্ঠিত হলো বোগড়ার সিপিআইএমের দলীয় কার্যালয়ে। এদিন মূলত এই সভা থেকেই ডাক উঠল সরকারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান বাঁচাও, দেশের জনগণকে বাঁচাও, দেশ বাঁচানো – র।

শুক্রবার এ বিষয়ের লক্ষ্যেই মোদি সরকারের বিরোধিতা করে, বিভিন্ন সরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠান, কয়লা খনি বিদেশি পুঁজিপতিদের হাতে তুলে দেওয়ার হচ্ছে এই দাবি করে, প্রতিবাদে সরব হয় দশটি কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন ও কর্মচারী সংগঠনের সদস্যরা। তারা এ দিন এই কর্মসূচিতে 28 ও 29 শে মার্চ দেশব্যাপী হরতাল কি কারণে সেই বিষয়গুলো উপস্থাপন করেন।

কয়লা খনি শ্রমিক সংগঠনের নেতৃস্থানীয়দের দাবি একসময় দেশে কয়লা শিল্পকে জাতীয়করণ করার লক্ষ্যে 1971 সালে কোকিং কোল, ও 1973 সালে সমস্ত স্তরের কয়লা শিল্পকে জাতীয়করণ করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। যার মাধ্যমে দেশের চিরাচরিত শক্তিকে দেশের কাজে লাগানোর উদ্যোগ গ্রহণ করে, প্রথমত অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কয়লা কাটার যে প্রক্রিয়া তাকে বন্ধ করার উদ্যোগ গ্রহণ, দ্বিতীয়তঃ দেশের প্রয়োজনীয় কয়লা সঠিক পরিমাণে উত্তোলনের উদ্যোগ ও কয়লা শিল্পের শ্রমিকদের শোষণ এর বিষয়টি লক্ষ্য করে কিভাবে শ্রমিক শোষণ বন্ধ করা যায় সেই বিষয়গুলিকে মাথায় রেখেই কয়লা শিল্পকে জাতীয়করণ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। পূর্বে এই কয়লা শিল্পে প্রথম পর্যায়ে ভারতবর্ষজুড়ে প্রায় ছয় লক্ষ আশি হাজার খনি কর্মী যুক্ত ছিলেন প্রত্যক্ষভাবেই বর্তমানে যা দু লক্ষ বিয়াল্লিশ হাজার হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিসিএলে পূর্বে এক লক্ষ 68 হাজার কয়লা খনির শ্রমিকদের কাজে যুক্ত ছিল যা বর্তমানে 52 হাজারে এসে দাঁড়িয়েছে, যা ধীরে ধীরে কয়লা শিল্পকে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যাচ্ছে বলে দাবি করেছেন নেতৃস্থানীয়রা।

এদিন কয়লা শিল্পে মনিটাইজেশন করার প্রক্রিয়ার ফলে যে কয়লা শিল্প 5 লক্ষ 86 হাজার কোটি টাকা মূল্য রয়েছে, তাকে মাত্র আঠাশ হাজার 787 কোটি টাকার বিনিময় মনিটাইজেশন করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, বলেই জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। এমনই বেশকিছু রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা রয়েছে যাদের ধীরে ধীরে বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলেই, দাবি করে অবিলম্বে এই বেসরকারিকরণ বন্ধের দাবি জানিয়েছেন তারা। শুক্রবার এ সকল বিষয়ের সাথেই রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল নেতৃত্বকে এই বন্ধ সমর্থন করার আহ্বান জানিয়েছেন কমিটির সদস্যরা।

তাদের দাবি দ্রুত জেবিসিসিআইয়ের দ্বিতীয় চুক্তি সম্পাদন করতে হবে, এম এন পি এর অধীনে 160 টি কয়লা খনি ব্যক্তিগত হাতে হস্তান্তর এর নীতি বন্ধ করতে হবে। ভূমি অধিগ্রহণের আইন 2013 এর ভিত্তিতে কয়লা শিল্পে বাস্তুদের চাকরি, ক্ষতিপূরণ, ও পুনর্বাসন এর আইন চালু করতে হবে। কয়লা শিল্পের শ্রমিকদের সাইজ শ্রমিকদের বেতন প্রদান করার দাবি ও প্রতিরক্ষা পরিষেবা আইন বাতিলের দাবি সহ 11 দফা দাবি তুলে ধরা হয় এদিন। এদিনের এই কর্মসূচিতে বিশেষভাবে উপস্থিত থাকতে দেখা যায় সিটু পক্ষ থেকে জি.কে শ্রীবাস্তব, আই এন টি ইউ সির পক্ষ থেকে আর পি শর্মা, এ আই টি ইউ সির রমেশ সিংহ, আইএনটিইউসি থেকে চন্ডী ব্যানার্জি, সিটু সংগঠনের বিবেক চৌধুরী, সাত গ্রাম এরিয়া জ্যাক কমিটির কনভেনার দেবদাস ব্যানার্জি, প্রমূখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *