Bengal Mirror

Think Positive

Bengal Mirror
ASANSOL

আসানসোলে শিঁকে ছিঁড়বে কি ঘাসফুলের,নাকি শেষ হাসি আবার পদ্ম ফুলের, অপেক্ষায় রাজনৈতিক মহল

বেঙ্গল মিরর, রাজা বন্দোপাধ্যায়, আসানসোল, ১৫ এপ্রিলঃ তৃণমূল কংগ্রেসের বাংলায় জন্ম হওয়ার পর থেকে এখনো পর্যন্ত আসানসোলের সাতটি লোকসভা নির্বাচনেই পরাজিত হয়েছে। এমনকি ২০১১ সালে বাংলায় শাসনে বসার পরেও এই আসানসোলে লোকসভা নির্বাচনে ঘাস ফুল ফোটেনি। এবার সেই পরাজয়ের গ্লানি মুক্ত করতে পারবে কি?


এবারের আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন ঘোষণার হওয়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই রীতিমতো চমক দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চারবারের সাংসদ ও দু’বারের অটল বিহারি বাজপেয়ী জামানার মন্ত্রী বর্ষীয়ান বলিউড অভিনেতা শত্রুঘন সিনহাকে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেন। এরপর ধাপে ধাপে আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী হিসেবে সিপিএম পার্থ মুখোপাধ্যায়, বিজেপি আসানসোল দক্ষিণের বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল ও কংগ্রেস প্রসেনজিৎ পুইতুন্ডির নাম ঘোষণা করে।


১৯৯৮ কংগ্রেস ছেড়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূল কংগ্রেস এই বাংলায় রাজ্যে রাজনৈতিক দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০১১ সাল থেকে ২০২১ সাল, ১০ বছরে তৃতীয়বারের জন্য তৃণমূল কংগ্রেস রাজ্যে ক্রমেই শক্তি বাড়িয়ে ক্ষমতায় এসেছে। কিন্তু আসানসোল লোকসভা আসনটি জয় করার স্বপ্ন তাদের অধরাই থেকেই গেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই জেলা ও শিল্পাঞ্চলের সবচেয়ে বিশ্বস্ত সঙ্গী তথা রাজ্যের মন্ত্রী মলয় ঘটক ১৯৯৮ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত পরপর পাঁচবার লোকসভা আসনে দলের প্রার্থী হয়েছেন। কিন্তু পাঁচবারই পরাজিত হয়েছেন সিপিএম প্রার্থী বংশ গোপাল চৌধুরী ও বিকাশ চৌধুরীর কাছে।

২০১৪ ও ২০১৯ সালে পরপর দুবার তৃণমূল কংগ্রেস পরীক্ষামূলকভাবে বাইরে থেকে দুজনকে প্রার্থী করে আসানসোলে নিয়ে এলেও তারাও হেরে যান। ২০১৪ সালে সর্বভারতীয় শ্রমিক নেত্রী দোলা সেন ও ২০১৯ সালে অভিনেত্রী সাংসদ মুনমুন সেনকে প্রার্থী করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । এই দুজনই বিজেপির বাবুল সুপ্রিয়র কাছে পরাজিত হয়। সেই বাবুল সুপ্রিয় বিজেপি ছেড়ে এবার কলকাতার বালিগঞ্জ বিধানসভা উপনির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েছেন ।


তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর ১৯৯৮ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রে সাধারণ নির্বাচন ও উপনির্বাচন মিলিয়ে ৭ বার ভোট হয়েছে। প্রত্যেকবারই তৃণমূল দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে। এরমধ্যে তৃণমূল আমলে দুবার বিজেপি জিতেছে। বাম প্রার্থীরা তৃতীয় স্থানে ছিলো।
উল্লেখ করা যেতে পারে যে ১৯৫৭ সালের লোকসভা নির্বাচন থেকে শুরু করে পরপর দুবার অতুল্য ঘোষ আসানসোল থেকে কংগ্রেস টিকিটে জিতেছিলেন। এছাড়া আনন্দ গোপাল মুখোপাধ্যায়ও কংগ্রেস প্রাথী হয়ে দুবার জেতেন। বাকি ১১ বার বামপন্থীরা এই আসন থেকে জিতেছিলেন।


তৃণমূল কংগ্রেসে এবার এই আসানসোল জিততে মরিয়া হয়ে শত্রুঘন সিনহার মত ব্যক্তিত্বকে প্রার্থী করেছে প্রধানত দুটো কারণে। প্রথমতঃ এই শিল্পাঞ্চলে প্রায় ৪৫ শতাংশের মতো হিন্দিভাষী ভোটার আছে । এছাড়া শত্রুঘন সিনহা সর্বভারতীয় অভিনেতা হিসেবে যথেষ্ট জনপ্রিয়। গৌতম ঘোষের মত চলচ্চিত্র পরিচালকের অন্তর্জলী যাত্রার মত বাংলা সিনেমাতে তিনি অভিনয় করেছেন। রাজনৈতিক নেতা হিসেবে ইতিপূর্বে তিনি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং চারবারের সংসদ। স্বাভাবিকভাবেই হিন্দিভাষী ভোটারদের ভোট একদিকে তার কাছে যেমন আসবে তেমনি সংস্কৃতি জগতের ব্যক্তিত্ব থেকে শুরু করে রাজনৈতিক সচেতন মানুষেরাও তাকে ভোট দেবেন বলে মনে করা হচ্ছে।


সর্বোপরি সদ্য শেষ হওয়া আসানসোল পুরনিগম নির্বাচনে ১০৬ টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৯১টিতে তৃণমূলের জয় হয়েছে। তার আগে ২০২১ সালের বিধান সভা নির্বাচনে সাতটি কেন্দ্রের মধ্যে পাঁচটিতে তৃনমুল কংগ্রেস জিতেছে। তবে, শাসক দলের প্রার্থীর সঙ্গে বাকি তিনদলের প্রার্থীর সবচেয়ে বড় তফাৎ হলো আসানসোলের সঙ্গে নাড়ির টানের। ভোটের প্রচারে শত্রুঘ্ন সিনহাকে বারে বারে ” বহিরাগত ” কথা শুনতে হয়েছে বিরোধীদের কাছে। তা কাটাতে প্রার্থী সহ শাসক দলের নেতাদেরকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেও টানতে হয়েছে আসানসোলের উপনির্বাচনে।
এখন দেখার আসানসোলের ভোটাররা ১২ এপ্রিল কি করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *