ঝাড়খণ্ডে বাংলা সীমান্ত লাগোয়া এলাকায় বেআইনি কয়লাখনি দাপটে ধস, বসে গেলো রাস্তা, ৫০ জনের চাপা পড়ার আশঙ্কা
বিসিসিএলের চাঁচ ভিক্টোরিয়া এরিয়ার চিরকুন্ডা থানার ডুমরিজোড় এলাকায়
বেঙ্গল মিরর,দেব ভট্টাচার্য, সৌরদীপ্ত সেনগুপ্ত ও রাজা বন্দোপাধ্যায়, চিরকুন্ডা ( ঝাড়খণ্ড), ২১ এপ্রিলঃ ( Jharkhand News) বেআইনি কয়লাখনি বন্ধ যে একেবারেই করা যায়নি, তার প্রমান আবারও পাওয়া গেলো। এবার বেআইনি কয়লাখনির দাপটে আবারও ধসের ঘটনা ঘটলো। বৃহস্পতিবার সকালে সাড়ে আটটা নাগাদ এই ধসের ঘটনাটি ঘটেছে বাংলা সীমান্ত লাগোয়া ঝাড়খণ্ডের বিসিসিএলের ( ভারত কোকিং কোল লিমিটেড) ( BCCL) চাঁচ ভিক্টোরিয়া এরিয়ার ( Dhanbad) চিরকুন্ডা থানার ডুমরিজোড় এলাকায়। ঘটনাস্থলটি নিরসা বিধান সভা এলাকার মধ্যে পড়ে। ধসে গ্রামের যাতায়াতের কাঁচা রাস্তা প্রায় ১০০ ফুট বসে যায়। ৭০ থেকে ৮০ ফুট গভীর গর্তও তৈরী হয় গোটা এলাকায়। ধসে যাওয়া এলাকা থেকে টিফিন ক্যারিয়ার, বেশ কয়েকটি জোড়া চটি ও কয়লা তোলা ও বয়ে নিয়ে যাওয়ার জিনিস পাওয়া গেছে। যা দেখে এলাকার বাসিন্দারা বলেন, ধসের আগে এখানে ৪০ থেকে ৫০ জন লোক বেআইনি কয়লাখনির মধ্যে কয়লা তুলতে নেমেছিলো। তারপর রাস্তা সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় ধস নামে। তাদের দাবি, ধসের কারণে সবাই মাটির তলায় চাপা পড়ে গেছে। এলাকায় দেখা যায়, ১০ থেকে ১২ টির মতো কুয়ো রয়েছে। এই কুয়ো দিয়েই নেমে বেআইনি ভাবে প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা লোকেরা মাটির তলা থেকে কয়লা কাটে।
খবর পেয়ে এলাকায় আসেন নিরসার প্রাক্তন বিধায়ক অরুপ চট্টোপাধ্যায়। সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ ধসের এই ঘটনা ঘটলেও, চার ঘন্টা পরে বেলা বারোটার সময় এলাকায় আসে চিরকুন্ডা থানার পুলিশ। আরো পরে আসেন নিরসা পুলিশের এসডিপিও পীতম্বর সিং খারোয়াত । বিকেলে খবর পেয়ে এলাকায় আসেন চাঁচ ভিক্টোরিয়া এরিয়ার জিএম অপূর্ব দত্ত। দুজনেই ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে স্বীকার করে নেন যে, এলাকায় বেআইনি কয়লাখনি চলছিলো। সেই কারণেই এই ধসের ঘটনা ঘটেছে। বিকেল সাড়ে পাঁচটার পরে জেসিভি মেশিন অন্য সব জিনিস নিয়ে এলাকায় আসে বিসিসিএলের মাইনস্ রেসকিউয়ের উদ্ধারকারী দল।
বৃহস্পতিবার সকালের এই ঘটনায় গোটা এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। প্রচুর মানুষেরা এলাকায় এসে ভিড় জমান। রাস্তা তলিয়ে যাওয়া ঐ এলাকার সঙ্গে আশপাশের এলাকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ডুমরিজোড়ের যে রাস্তা ধসে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তার একদিকে গেছে চাঁচ ও অন্যদিকে রঘুনাথপুর।
জানা গেছে , বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ আচমকাই চাঁচ ভিক্টোরিয়া এরিয়ার ডুমরিজোড় এলাকায় ধস নামে। সেই ধসে গ্রামের যাতায়াতের কাঁচা রাস্তা ১০০ ফুট ব্যাসার্ধ জুড়ে বসে যায়। ধসের সময় ঐ রাস্তা দিয়ে কেউ যাতায়াত করছিলো না বলে জানা গেছে। তবে, তার কয়েক মিনিট আগেই সেখান দিয়ে স্কুলের পড়ুয়ারা যায়। এরপরই গোটা এলাকায় চাঞ্চল্য ও আতঙ্ক দেখা দেয়। এই রাস্তাটি মূলতঃ অনেক গ্রামকে সংযুক্ত করে এই এলাকার সঙ্গে। যে কারণে এলাকার বাসিন্দারা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। খবর পেয়ে বেলা বারোটার পরে আসেন চিরকুণ্ডা থানার ইন্সপেক্টর কাম স্টেশন ইনচার্জ জিতেন্দ্র কুমার।
এলাকায় এসে নিরসার প্রাক্তন বিধায়ক অরুপ চট্টোপাধ্যায় অভিযোগ করে বলেন, প্রতিদিন বাংলা সহ আশপাশের এলাকা থেকে ৪০ থেকে ৫০ জন এই এলাকায় বেআইনি কয়লাখনি থেকে কয়লা তুলতে আসে। এদিনও এসেছিলো বলে এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন। তারা সবাই মনে হচ্ছে, চাপা পড়ে আছে। তার আরো অভিযোগ, পুলিশের মদতে এখানে বছরের পর বছর ধরে বেআইনি কয়লাখনি চলছে। পুলিশ খবর পেয়ে লোক দেখাতে ডোজিং করে চলে যায়। তারপর আবার কুয়ো করে কয়লা চুরি শুরু হয়। বিসিসিএলের উচিত বড় মেশিন এনে গোটা এলাকা ডোজিং করা।
বিকেলে এলাকায় এসে পরিদর্শন করার পরে জিএম অপূর্ব দত্ত বলেন, ৭৫ বছরেরও পুরনো কয়লাখনি। বেআইনি কয়লাখনি এখানে রয়েছে। আমরা খবর পেলেই সিআইএসএফ পাঠাই। পুলিশ ও প্রশাসনকে বলি। এদিনের ধসের ঘটনা বেআইনি কয়লাখনির জন্যই হয়েছে। কেউ মাটির তলায় চাপা পড়ে আছে কিনা সেই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সেটা কি করে বলবো। উদ্ধারকারী দল মেশিন নিয়ে এসেছে। তারপর জানা যাবে। এই ঘটনার তদন্ত করা হচ্ছে।
নিরসা পুলিশের এসডিপিও জানান, এখানে বেআইনী কয়লাখনি চলে। আমরা খবর পেলেই আসি। ডোজিং করা হয়। এদিন সকালে এই এলাকায় আবার ধস নামে। আমরা এসেছি খবর পেয়ে। বিসিসিএলকেও বলা হয়েছিলো। তাদের আধিকারিকরাও এসেছেন।
এলাকায় যে রমরমিয়ে বেআইনি কয়লাখনির কারবার চলে তা এদিন বোঝা গেলো। কয়লাখনির দূরে দূরে বেশ কয়েকটি অস্থায়ী ঝুপড়ি করে দোকান করা হয়েছে। এদিন অবশ্য সেগুলো খোলেনি। এলাকার বাসিন্দারা বলেন, শুধু এই এলাকাই চাঁচ ভিক্টোরিয়া এরিয়ার কোলিয়ারি এলাকার অনেক জায়গায় বেআইনি কয়লাখনি চলছে। মাঝেমধ্যেই সেখানে ধসের ঘটনা ঘটে। তাতে মৃত্যুও হয়। বিসিসিএল থেকে পুলিশ কাউকে কোন কিছু জানিয়েও, কিছু হয়না।