ASANSOL

আসানসোল জেলা হাসপাতালের ক্ষুব্ধ চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মীদের কাছে দুঃখ প্রকাশ পুলিশের, ভবিষ্যতে এমন না হওয়ার আশ্বাস

পুলিশ অফিসাররা এদিন জেলা হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসক ও কর্মীদের বুঝিয়ে বলেছেন, সমস্যা মিটে গেছে : ডিসিপি

বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায় ও সৌরদীপ্ত সেনগুপ্তঃ শুধু মাত্র একটা সিসি ক্যামেরার ফুটেজের ভিত্তিতে সন্দেহের বশে এক সেনা জওয়ানকে অপহরণ করা হয়েছে, এই অভিযোগ ছিলো। আর তাতে আসানসোল জেলা হাসপাতালের সিসিইউতে কর্মরত এক হসপিটাল এ্যাসিসটেন্টকে থানায় তুলে এনে ৪ ঘন্টা ধরে হেনস্তা করার অভিযোগ উঠে আসানসোল দক্ষিণ থানার পুলিশের বিরুদ্ধে। গত শনিবার দুপুরের পরে হওয়া এই ঘটনার কথা সোমবার জানাজানি হওয়ায় জেলা হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্য কর্মীরা পুলিশের এহেন আচরণে বেজায় ক্ষুব্ধ হন। তারা এর বিহিত চেয়ে শেষ দেখারও হুমকি দেন।
শুধু মাত্র সেনাবাহিনীর চাপে একটা ফুটেজের ভিত্তিতে এমনটা যে করা উচিত একবারেই হয়নি, তারা আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের কর্তারা বুঝতে পারেন। জেলা হাসপাতাল কতৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে চলে গেলে, তাদের কাজ করা সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে বুঝতে পারেন পুলিশ কর্তারা। তারা সোমবার বিকেলের পর থেকে নানা ধরনের সাফাই দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন।

file photo of hopital staff and doctors


কিন্তু তা যে হবেনা, বুঝতে পেরে মঙ্গলবার দুপুরে আসানসোল জেলা হাসপাতালে সটান চলে আসেন আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশের এসিপি (সেন্ট্রাল) দেবরাজ দাস ও আসানসোল দক্ষিণ থানার ইন্সপেক্টর ইনচার্জ কৌশিক কুন্ডু। তারা হাসপাতাল সুপার ডাঃ নিখিল চন্দ্র দাস, ডেপুটি সুপার, সহকারী সুপার, চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্য কর্মীদের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ আলোচনা করেন। তারা বলে বোঝানোর চেষ্টা করেন, এই ঘটনায় সেনাবাহিনীর চাপ ছিল। সে কথা বলে তারা একটি চিঠি দেখান তারা। সুপার তাদের কাছে জানতে চান কি পরিস্থিতিতে কেন সুদীপ ধাড়া নামে ঐ কর্মীকে হাসপাতাল থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো? কেন পুলিশ তার কাছে যাওয়ার আগে, আইন মতো হাসপাতাল সুপারকে জানাননি? পুলিশ ‌যে এই কাজ করে একবারে ঠিক করেনি, তা সুপার সরাসরি তাদেরকে বুঝিয়ে দেন। গোটা বিষয়টি যে, একবারে বিপক্ষে চলে গেছে বুঝতে পেরে সেটা দুই পুলিশ অফিসার বলেন, তারা এই ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করছেন। এটা ভুল হয়েছিলো বলে, কার্যত তারা ক্ষমা চেয়ে নেন । ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা ঘটবে না বলে তারা আশ্বাসও দেন। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সাহায্য পুলিশ যে সবসময় চায়, তাও তারা বলেন।


যে কর্মীর সঙ্গে এই ঘটনা ঘটে তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল তার আর কোন ক্ষোভ আছে কিনা? সে বলেন , আর নেই। পুলিশ অফিসাররা এসে যেহেতু পুরো বিষয়টি ভুল হয়েছে বলেছেন তাই তার কোনো ক্ষোভ থাকল না। গোটা ঘটনাটি নিয়ে অবহিত করতে এদিন হাসপাতালের চিকিৎসক ও কর্মীদের সিএমওএইচেরকাছে যাওয়ার কথা ছিল। এই প্রসঙ্গে সুপার বলেন, সবার সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে গোটা বিষয়টি মিটে গেছে। আর আমরা সেখানে আর যাইনি। হাসপাতালেই বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়ে যাওয়ায় যে তার কাছে যে যাওয়া হয় নি, তা সিএমওএইচকে জানিয়ে দেওয়া হবে।


এদিকে, পশ্চিম বর্ধমান জেলার সিএমওএইচ তথা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ শেখ ইউনুস এই ঘটনা নিয়ে যথেষ্ট ক্ষুব্ধ। তিনি বলেন, আমার কাছে এদিন জেলা হাসপাতালের চিকিৎসক ও কর্মীদের আসার কথা ছিলো। শুনেছি দুই পুলিশ অফিসার হাসপাতালে গিয়ে কথা বলেছেন। কি কথা হয়েছে আমি জানিনা।


আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশের ডিসিপি (সেন্ট্রাল) কুলদীপ সোনেয়াল বলেন , পানাগড় সেনা ছাউনি থেকে একজনকে অপহরণ হয়েছে বলে তাদের কাছে মেসেজ এসেছিল। সেই মেসেজের ভিত্তিতে সেই সময় যে গাড়ির নম্বর বা যা কিছু পাওয়া যায় তা ধরে ধরে তদন্ত শুরু করা হয়। জেলা হাসপাতালে কর্মীর গাড়িটিকে ঐ সময় ঐ এলাকা দিয়ে যেতে দেখা গিয়েছিল। সেই কারণেই তাকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা শুরু হয়। যে মুহূর্তে জানা যায় যে, সেনা জওয়ানকে অপহরণ হয়নি। নিজেই চলে গেছে। পুলিশের নিয়ম অনুযায়ী প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছিল। পুলিশ অফিসাররা এদিন জেলা হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসক ও কর্মীদের এটা বুঝিয়ে বলেছেন। সমস্যা মিটে গেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *