বাবুল সুপ্রিয়র পদত্যাগ করার পর আসানসোলের কুমারপুরের ফ্লাইওভারের কাজ থমকে !
কাজ থমকে যাওয়ায় স্থানীয় মানুষ থেকে শাসক দলের নেতারা ক্ষোভে ফুঁসছেন
বেঙ্গল মিরর, দেব ভট্টাচার্য, আসানসোল। আসানসোলের মানুষের দীর্ঘদিনের কষ্টের বোঝা দূর করার জন্য তদানীন্তন আসানসোলের সাংসদ বাবুল সুপ্রিয় রেল এবং স্টিল অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার সঙ্গে কথা বলে জিটি রোডের রেললাইনেরউপর কুমারপুরের কাছে রেললাইনের উপর একটি ফ্লাইওভার করার কাজ শুরু করেছিলেন। স্বাধীনতার পর থেকেই বরাকর, কুলটি,নিয়ামতপুরে সাথে আসানসোলের যোগাযোগকারী এটাই একমাত্র রাস্তা জি টি রোড।
এই রেল লাইন দিয়ে সারা দিনে বেশ কয়েকবার রেলের মালগাড়ি মাল পরিবহনের জন্য চলাচল করে। এর ফলে দিন ভোর শতাধিক বাস ,মিনিবাস এবং হাজার হাজার গাড়ি ও বাইক আরোহী চরম সমস্যায় পড়েন ।কেননা যখন মালগাড়ি চলে তখন লেভেল ক্রসিং এর গেট টি জি টি রোড এর উপর বন্ধ করে দেওয়া হয়। ব্যাপক যানজট ও সেই কারণে সৃষ্টি হয়।
সাংসদ হওয়ার পর প্রথম বারই বাবুল ফ্লাইওভার তৈরির জন্য চেষ্টা করেন এবং ২০১৯ এ দ্বিতীয়বার সাংসদ হওয়ার পর তিনি রেল এবং ইস্পাত দপ্তর এর সাথে কথা বলে বাজেটের পরিমাণ বাড়িয়ে ৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই কাজের শিলান্যাস করেছিলেন ।প্রথমদিকে দ্রুতগতিতে কাজটি শুরু হয়েছিল রেল বিশাল এলাকা জুড়ে। যেখানে ফ্লাইওভার হওয়ার কথা ইতিমধ্যে সেখানে একাধিক স্তম্ভ তৈরি হয়েছে। তিনি নিজে প্রায়ই রেলের আধিকারিকদের নিয়ে কাজের অগ্রগতি খতিয়ে দেখতে আসতেন। আবার বহু জায়গায় স্তম্ভের কাজ শুরুই হয়নি। গতবছর বাবুল সুপ্রিয় বিজেপি এবং সাংসদ থেকে পদত্যাগ করেন। তার ফলে অভিযোগ তিনি সাংসদ পদ ছাড়া এবং বিজেপি দল ছাড়ার কারণে এই কাজের অগ্রগতি সম্পূর্ণ থমকে যায় বলে স্থানীয় বাসিন্দা শংকর চক্রবর্তী সহ অনেকেই অভিযোগ করেন । এমনকি কবে কাজ শেষ হবে তাও রেলের তরফ থেকেও নির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি ।
ওই এলাকায় গিয়ে দেখা গেল একজন মাটি খুঁড়ছেন, দুজন একটি লোহার বিমে তার বাঁধছেন। এর বাইরে তেমন কাউকে কোনো বড় মেশিন নিয়ে বা কোনও ভাবে কাজ করতে দেখা গেল না। স্থানীয় মানুষের দাবী দীর্ঘদিন কাজটা প্রায় বন্ধ হয়ে পড়ে আছে। আসানসোল আদালতের দুই আইনজীবী এবং কুলটির বাসিন্দা সুময় সরখেল ও সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায় ওরা দুজনেই নিয়মিত এই রাস্তার ওপর দিয়েই আদালতে যাতায়াত করেন । প্রায়ই লেভেলক্রসিং বন্ধের কারণে দীর্ঘ সময় যানজটে অপেক্ষা করেন ওরা। তারা জানান আমরা লক্ষ্য করে দেখেছি গত বেশ কয়েক মদ মাস ধরে কাজটা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। কোনও কোনও দিন দু-চারজনকে কিছু কিছু করতে দেখা যায় ।কোন দিন আবার সেটাও থাকেনা। কিন্তু প্রথম দিকে যে গতিতে কাজ চলছিল তাতে মনে হয়েছিল ২০২২ এর শেষে প্রকল্পটি শেষ হয়ে যাবে। এখন যা অবস্থা তাতে আগামী দশ পনের বছর হবে কিনা জানিনা।
তৃণমূলের জেলা সভাপতি এবং আসানসোলের মেয়র বিধান উপাধ্যায় বলেন বিজেপি মুখে বিকাশ বা উন্নয়নের কথা বলে। কিন্তু প্রতিহিংসার কারণে ওরা যে উন্নয়নকে আটকে দেয় এর আগে আমরা দেখেছি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেল মন্ত্রী থাকাকালীন তার বহু প্রকল্পের টাকা দিচ্ছে না। একইভাবে বাবুল সুপ্রিয় দলবদল করার কারণেই এই কাজটা বন্ধ করেছে। আমরা এই নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় জানতে চাইলেও নির্দিষ্টভাবে রেল মন্ত্রক জানায় না ।
অন্যদিকে বিজেপির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক এবং বিধায়ক লক্ষণ ঘড়ুই বলেন নরেন্দ্র মোদী সারাদেশের যেখানে উন্নয়ন করেন সেখানে তিনি প্রতিহিংসার কারণে এটা বন্ধ রেখেছেন আমরা বিশ্বাস করি না। বিষয়টা আমাদের কাছে কয়েকদিন আগে কেউ কেউ বলেছেন। আমরা খোঁজ নেয়া শুরু করেছি কেন বা কারা এটা বন্ধ করে রেখেছে । আমরা চেষ্টা করব যাতে দ্রুত আগের মতই কাজ শুরু হয়।
অপরদিকে প্রাক্তন সাংসদ এবং বর্তমান বিধায়ক বাবুল সুপ্রিয় বলেন তার কাছে এই নিয়ে অভিযোগ এসেছে। তিনি বিষয়টি রেলমন্ত্রী ও ইস্পাত মন্ত্রীর কাছে অবিলম্বে চিঠি লিখে কাজ শুরু করার দাবি জানাবেন এবং শীঘ্রই তিনি আসানসোলে এই কাজ পরিদর্শনে আসবেন। কেননা কেবলমাত্র দলবদল করায় এভাবে কাজ আটকে রাখা যায় না।