ASANSOL

আসানসোল জেলা হাসপাতালে শিশু মৃত্যুতে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ, বিক্ষোভের তান্ডব, চারটে পর্যন্ত বন্ধ এমারজেন্সি

৫ দিনের মধ্যে তৃতীয় ঘটনা, তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের

বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায় ও সৌরদীপ্ত সেনগুপ্তঃ ( Asansol Live News Today ) ২ বছরের এক শিশু মৃত্যুকে কেন্দ্র করে রবিবার দুপুরে রণক্ষেত্র চেহারা নিলো আসানসোল জেলা হাসপাতাল চত্বর। চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তুলে মৃত শিশুর পরিবারের সদস্যরা জেলা হাসপাতালের এমারজেন্সি বিভাগে বিক্ষোভের নামে তান্ডব চালায়। বেলা বারোটার পর থেকে দুপুর তিনটে পর্যন্ত দফায় দফায় এমারজেন্সি বিভাগে ভাঙচুর চালায় মৃতের পরিবারের সদস্যরা বলে অভিযোগ। বিভাগে চিকিৎসকের সামনের কাঁচের গার্ড ভাঙ্গা হয়। টেবিল চেয়ারের পাশাপাশি এমারজেন্সি বিভাগের জরুরি ওষুধ ও টিকিট এবং খাতা মাটিতে ফেলে দেওয়া হয়। ঘটনার জেরে বেলা বারোটার পর থেকে এমারজেন্সি বিভাগ বন্ধ হয়ে যায়। বিকেল সাড়ে তিনটে পর্যন্ত এমারজেন্সি বিভাগে কোন রোগী দেখা সম্ভব হয়নি। বিকেলে চারটের পরে এমারজেন্সি বিভাগের পরিবর্তে পাশে অর্থোপেডিক বিভাগ থেকে রোগী ভর্তি শুরু করা হয়। এই সময়ের মধ্যে আসা অন্য রোগীরা চরম সমস্যায় পড়েন। ভয়ে বেশ কয়েকজন রোগীকে নিয়ে পরিবারের সদস্যরা চলেও যান।


এদিকে ঘটনার খবর পেয়ে এডিসিপি(এসবি) এবং এসিপি সেন্ট্রাল, আসানসোল দক্ষিণ থানার ইন্সপেক্টর ইনচার্জ কৌশিক কুন্ডু বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে হাসপাতালে আসেন। নামানো হয় কমব্যাট ফোর্স ও রেফ। আসেন আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশের দুই এসিপি সহ অন্য অফিসাররাও। মৃত শিশু বাবা মহঃ ইমরাজের লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তার ভিত্তিতে পুলিশ তদন্ত করা হবে বলে আশ্বাস দিলে বিকেল চারটের পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। হাসপাতাল ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আসানসোল দক্ষিণ থানার বুধার চমনতলার বাসিন্দা মৃত শিশুর নাম মহঃ সাদ্দাম।
একদিকে যখন বকরিদ বা ইদুজ্জোহা উপলক্ষে খুশিতে মেতে উঠেছে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষেরা, ঠিক তখন মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে।


জানা গেছে, এদিন সকালে দু বছরের মহঃ সাদ্দামের জ্বর হওয়ায় পরিবারের সদস্যরা তাকে আসানসোল জেলা হাসপাতালে ইমারজেন্সি বিভাগে নিয়ে আসেন। সেই সময় এমারজেন্সি বিভাগের চিকিৎসক ডাঃ অনিন্দ্য রায় শিশুটিকে পরীক্ষা করে একটি ঔষধ লিখে বাড়ি পাঠিয়ে দেন। পরিবারের সদস্যরা ঔষধের দোকান থেকে সেই ঔষধ কিনে বাড়িতে তা খাওয়ানোর পর শিশুটি অচৈতন্য হয়ে পড়ে। বেলা বারোটা নাগাদ আবার শিশুটিকে আসানসোল জেলা হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় । তখন আবার চিকিৎসক পরীক্ষা করার পর শিশুটিকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এর পরেই মৃত শিশুর পরিবারের সদস্যরা মারমুখী হয়ে উঠেন। হাসপাতালে বিক্ষোভ দেখানোর নামে তারা এমারজেন্সি বিভাগে ভাঙচুর চালায় বলে অভিযোগ। লন্ডভন্ড করে দেওয়া এমারজেন্সি বিভাগ। বলতে গেলে, মৃত শিশুর পরিবারের সদস্যদের দখলে চলে যায় এমারজেন্সি বিভাগ।


খবর পেয়ে আসেন ডেপুটি সুপার কঙ্কন রায় ও সহকারী সুপার ভাস্কর হাজরা। পরে আসেন ভারপ্রাপ্ত সুপার ডাঃ শঙ্করী মাজি। আসেন বুধা এলাকার কাউন্সিলর তথা আসানসোল পুরনিগমের মেয়র পারিষদ গুরুদাস ওরফে রকেট চট্টোপাধ্যায় ও ডেপুটি মেয়র ওয়াসিমুল হক।
মৃত শিশুর জ্যাঠা মহঃ ফিরোজ ও আত্মীয়া রাবিয়া খাতুন সহ পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করে বলেন, ঐ চিকিৎসক শিশুকে দেখে ওয়ার্ডে ভর্তি কেন করলেন না? তাহলে মৃত্যু হতো না। চিকিৎসায় গাফিলতির কারনেই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। তারা দাবি করেন, ঐ চিকিৎসককে আসতে হবে। ঘন্টা তিনেক ধরে পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে ডেপুটি মেয়র ও মেয়র পারিষদ তাদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। শেষ পর্যন্ত দীর্ঘ আলোচনা করার পরে পরিবারের সদস্যরা বিকেল সাড়ে তিনটের পরে মৃতদেহর ময়নাতদন্তের জন্য রাজি হয়।


যার বিরুদ্ধে অভিযোগ সেই চিকিৎসক ডাঃ অনিন্দ্য রায় বলেন, শিশুটির বাড়ির লোকেরা বলেন তার একদিনের জ্বর। তাই তাকে পরীক্ষা করে প্যারাসিটামল সিরাপ লিখে খাওয়ানোর সুপারিশ করে বাড়ি নিয়ে যেতে বলি। তার কিছুক্ষুন পরে আবার শিশুটিকে এমারজেন্সি বিভাগে আনা হয় অচৈতন্য অবস্থায়। পরীক্ষা করে তখন দেখি শিশুটি বেঁচে নেই। মনে হয়না চিকিৎসায় কোন গাফিলতি হয়েছে। স্বাস্থ্য দপ্তর তদন্ত করে দেখুক।
জেলা হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপার বলেন, এমারজেন্সি বিভাগের চিকিৎসকের লেখা ওষুধ খাওয়ানোর পরে ঐ শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে পরিবারের সদস্যরা লিখিত অভিযোগ করেছেন। এমারজেন্সি বিভাগে ভাঙচুর করা হয়েছে। গোটা ঘটনার তদন্তে একটি তিন সদস্যর কমিটি করেছেন সিএমওএইচ।


পশ্চিম বর্ধমান জেলার মূখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বা সিএমওএইচ মহঃ ইউনুস খান জানিয়েছেন, এক শিশু মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। শিশুর পরিবারের সদস্যরা চিকিৎসার গাফিলতির অভিযোগ এনেছেন। কিছু সময়ের জন্য এমারজেন্সি বিভাগে চিকিৎসা পরিষেবা বিঘ্নিত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, গোটা ঘটনার তদন্তে জেলার ডিএমওসিএইচ ডাঃ স্বপন দাসের নেতৃত্বে তিন জনের একটি কমিটি করা হয়েছে। বাকি দুই সদস্য হলেন, জেলার এসিএমওএইচ ডাঃ বিশ্বজিৎ জানা ও জেলা হাসপাতালের শিশু চিকিৎসক ডাঃ অমিয় ঘটক। এই কমিটি তিনদিনের মধ্যে তদন্ত করে আমার কাছে রিপোর্ট দেবে।
অন্যদিকে, পুলিশ জানায়, শিশু মৃত্যুর ঘটনায় একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা করা হয়েছে। মৃতদেহর ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। পরিবারের সদস্যদের অভিযোগের ভিত্তিতে স্বাস্থ্য দপ্তর তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *