ASANSOL

CBI র দাবি লালার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত, লেনদেন হয়েছে কোটি-কোটি টাকার

আসানসোল সিবিআই আদালতে ইসিএলের প্রাক্তন ও বর্তমান জিএম সহ ধৃত ৭ জনের জামিন নাকচ, পরবর্তী শুনানি ১৮ জুলাই

বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায় ও দেব ভট্টাচার্যঃ : ( Coal Smuggling Case ) বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টের রক্ষা কবচ নিয়ে থাকা অনুপ মাঝি ওরফে লালার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত রয়েছে ধৃতরা। বলতে গেলে ইসিএলের কয়লাখনি থেকে কয়লা পাচারে এদের পরোক্ষ মদত রয়েছে। এইক্ষেত্রে প্রচুর টাকার লেনদেন হয়েছে। সেই টাকা কোথায় গেছে, তা জানতে ও আর কে কে আছে, তা জানতে ধৃতদের হেফাজতে নিয়ে জেরা করা দরকার। আসানসোল বিশেষ সিবিআই আদালতে বিচারক রাজেশ চক্রবর্তীর এজলাসে বৃহস্পতিবার দুপুরে সওয়াল করতে উঠে এমনই দাবি করেন সিবিআইয়ের আইনজীবী রাকেশ কুমার। তিনি ধৃতদের ৫ দিনের রিমান্ড চান।


জবাবে ধৃতদের আইনজীবী আশীষ কুমার, আশীষ মুখোপাধ্যায়, জগদীন্দ্র গাঙ্গুলি ও অসিত নায়েকরা বলেন, মক্কেলদের যতবার নিজাম প্যালেসে ডেকে পাঠানো হয়েছে, ততবার তারা গেছেন। তদন্তে সহযোগীতা করেছেন। এছাড়াও ধৃতদের কয়েকজন চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন ও তাদের বয়স হয়েছে। আইনজীবীরা আরো বলেন, এরা সবাই আসানসোলে থাকেন। আবার ডাকলেই তারা যাবেন। সর্বোপরি একাধিকবার তাদের বাড়ি ও অফিসে হানা দিয়েও তেমন কিছু পাওয়া যায়নি। পাশাপাশি এই মামলায় যে এফআইআর হয়েছে তাতে এই সাতজনের মধ্যে ৫ জনের নাম নেই। তাই তাদের জামিন দেওয়া হোক। প্রায় দু’ঘন্টা সওয়াল-জবাব শেষে বিচারক রাজেশ চক্রবর্তী ইসিএলের বর্তমান জেনারেল ম্যানেজার এসসি মৈত্র, তিন প্রাক্তন জেনারেল ম্যানেজার সুশান্ত বন্দোপাধ্যায়, অভিজিৎ মল্লিক, এবং তন্ময় দাস, নিরাপত্তা আধিকারিক মুকেশ কুমার, রিঙ্কু বেহারা ও দেবাশীষ মুখোপাধ্যায়ের জামিন নাকচ করে ৫ দিনের সিবিআই হেফাজতের নির্দেশ দেন। এই মামলার পরবর্তী শুনানির দিন হয়েছে আগামী ১৮ জুলাই। সেদিন সাতজনকে আবার আসানসোলের সিবিআই আদালতে পেশ করার নির্দেশ দেন বিচারক।


এদিন পৌনে একটা নাগাদ বেআইনি কয়লা পাচায় মামলায় ধৃত ইসিএলের প্রাক্তন ও বর্তমান জিএম সহ ৭ আধিকারিক ও কর্মীকে কলকাতা নিজাম প্যালেস থেকে সড়কপথে চারটি গাড়িতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তায় আসাানসোলের বিশেষ সিবিআই আদালতে আনা হয়।
কয়লা পাচার মামলায় তদন্তে সিবিআই ইস্টার্ন কোল্ডফিল্ড লিমিটেড বা ইসিএলের প্রাক্তন ও বর্তমান জিএম সহ ৭ জনকে বুধবার সকালে কলকাতার নিজাম প্যালেসে ডেকে পাঠায়। নিজাম প্যালেসে সিবিআয়ের আর্থিক তছরুপ দমন শাখার অফিসে তাদের জেরা শুরু করেন এই মামলার তদন্তকারী অফিসাররা। সাত ঘন্টারও বেশি সময় ধরে ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদ করার পরে রাতে ৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
এর আগে এই মামলায় বিনয় মিশ্রর ভাই বিকাশ মিশ্র সহ চার কয়লা মাফিয়াকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। এই মামলাতেই টাকা পাচারের অভিযোগে আলাদা করে তদন্ত করছে আরেক কেন্দ্রীয় সংস্থা ইডি। ইতিমধ্যেই দুই কয়লা মাফিয়ার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। এর আগে কয়লা কারবারিরা গ্রেফতার হলেও ইসিএলের কোনও কর্তা গ্রেফতার হয়নি। ওই ৭ ইসিএল আধিকারিককে দুই তদন্তকারী সংস্থার অফিসে ও বাড়িতে তল্লাশি করলেও ও জেরা করলেও তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়নি।


ধৃতদের মধ্যে এসসি বা সুভাষ চন্দ্র মৈত্র বর্তমানে ইসিএলের সাতগ্রাম এরিয়ার জিএম বা জেনারেল ম্যানেজার। এফআইআর যখন হয়, তখন নিমচা গ্রুপের এজেন্ট ছিলেন এসসি মৈত্র। পাশাপাশি ধৃত সুশান্ত বন্দোপাধ্যায়, অভিজিৎ মল্লিক ও তন্ময় দাস সেই সময় সাতগ্রাম এরিয়ার জিএম ও ইসিএলের চীফ সিকিউরিটি অফিসার ছিলেন। এছাড়াও নিরাপত্তা আধিকারিক মুকেশ কুমার , রিঙ্কু বেহারা ও দেবাশীষ মুখোপাধ্যায় বর্তমানে যথাক্রমে ম্যানেজার সিকিউরিটি আসানসোলের কাল্লা সেন্ট্রাল হাসপাতাল, উড়িষ্যার মহানন্দা কোলিয়ারিতে ও ইসিএলের ঝাঁঝড়া কোলিয়ারিতে সিকিউরিটি ইন্সপেক্টর হিসাবে কর্মরত রয়েছেন।


ইসিএলের এই অফিসারদের বিরুদ্ধে অভিযোগ কয়লা পাচারকারীদের কাছ থেকে মোটা অর্থের বিনিময়ে তারা সুবিধা পাইয়ে দিয়েছেন। এদের প্রত্যক্ষ মদতেই আসানসোল, দুর্গাপুর, পুরুলিয়া বাঁকুড়া সহ বিভিন্ন জায়গায় খনি থেকে কয়লা তুলে পাচার করা হয়েছে।
এই কয়লা পাচার মামলায় এখনও পর্যন্ত বিকাশ মিশ্র জেলেই রয়েছ। তবে গ্রেফতার হলেও কয়লা কারবারি জয়দেব মন্ডল, গুরুপদ মাজি, নিরোদ মন্ডল, নারায়ণ নন্দারা বর্তমানে জামিনে মুক্ত রয়েছে। বেআইনি কয়লা সাম্রাজ্যের মূল কারবারি অনুপ মাঝি ওরফে লালাকে এখনো পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা যায়নি। সে উচ্চ আদালতের বিশেষ রক্ষা কবজ নিয়ে রয়েছে।


প্রসঙ্গতঃ, ২০২০ সালের ২৭ নভেম্বর সিবিআই অবৈধ কয়লা পাচার মামলায় ইসিএলের ২ জন জিএম সহ ৫ আধিকারিকের বিরুদ্ধে এফআইআর করেছিলে। তারা হলেন, ইসিএলের জিএম একে ধর, জেসি রাই, চিফ সিকিউরিটি অফিসার তন্ময় দাস, কাজোড়া এরিয়া সিকিউরিটি অফিসার দেবাশীষ মুখোপাধ্যায় ও কুনস্তোরিয়ার নিরাপত্তা আধিকারিক ধনঞ্জয় রায়। সেই বছরের ডিসেম্বর মাসে সিবিআই এই মামলায় সেই এফআইআরের ভিত্তিতে আসানসোল শিল্পাঞ্চলে অভিযান করেছিল। সেই অভিযানের সময় সিকিউরিটি আধিকারিক ধনঞ্জয় রায় মারা যান। বুধবার যে সাতজনকে গ্রেফতার করেছে, তার মধ্যে দুজনের নাম সেই এফআইআরে রয়েছে।

News Editor

Mr. Chandan | Senior News Editor Profile Mr. Chandan is a highly respected and seasoned Senior News Editor who brings over two decades (20+ years) of distinguished experience in the print media industry to the Bengal Mirror team. His extensive expertise is instrumental in upholding our commitment to quality, accuracy, and the #ThinkPositive journalistic standard.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *